এক ধরনের গ্রন্থি থাইরয়েড। এটি আমাদের শারীরিক বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে।হরমোনজনিত সমস্যার কারণে এটি অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পড়ে। থাইরয়েড যদি নিয়ন্ত্রিত না থাকে তাহলে শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ে।
থাইরয়েডকে দুভাবে দেখা যায়। একটি হাইপোথাইরয়েডিজম, যা থাইরয়েড হরমোন কমে যাওয়ার কারণে হয়। অন্যটি হাইপারথাইরয়েডিজম। এটির কারণে থাইরয়েড হরমোন অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে যায়। এ কারণে ওজনও কমে যায়। এছাড়া হরমোনের সমস্যা হলে শরীর অবসাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। বিভিন্ন অংশ ফুলে যায়, শরীরের জয়েন্ট বা মাংসপেশিতে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হয়। এমনকি ধীরে ধীরে তা ক্যানসারের দিকেও ধাবিত হতে পারে। তাই থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখা জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে শারীরিক ব্যায়াম সর্বাধিক সাহায্য করে। এজন্য যেসব ব্যায়াম করা প্রয়োজন:
সবচেয়ে সহজ ব্যায়াম হচ্ছে হাঁটাহাঁটি। থাইরয়েড হরমোন অতিরিক্ত বেড়ে গেলে হাঁটার মাধ্যমে তা বার্ন করা বা কমিয়ে ফেলা সম্ভব
থাইরয়েড হরমোন নিয়ন্ত্রণে পানিতে ব্যায়াম করা উপকারী। হাঁটু বা গোড়ালিতে ব্যথা অনুভূত হলে কিংবা পা ফুলে গেলে সাঁতার কাটুন। পানির অন্যান্য ব্যায়ামও করতে পারেন। তাহলে এ সমস্যা মিটে যাবে
যোগব্যায়াম বা ইয়োগা মাংসপেশির শক্তি বাড়াতে সহায়তা করে, শ্বাসক্রিয়ার উন্নতি সাধন করে। থাইরয়েডের সমস্যা কমাতে যোগব্যায়ামের গুরুত্ব অপরিসীম
মেডিটেশন থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাই মেডিটেশনের ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।
ব্যায়াম করে যেসব সুফল পাওয়া যাবে:
মানসিক প্রশান্তি: সপ্তাহে দুই ঘণ্টা করে ব্যায়াম করে শারীরিক ও মানসিকভাবে উৎফুল্ল থাকা সম্ভব
স মনোদৈহিক উন্নতি: নিয়মিত ব্যায়াম করলে হাইপোথাইরয়েডিজম-জনিত কোনো উদ্বেগ-বিষন্নতা থাকলে তা কমিয়ে আনে, দেহকে সুস্থ রাখে
ওজন হ্রাসে সহায়তা: ব্যায়াম মানবদেহের বিপাকক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করে। অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করে। মাংসপেশিকে শক্তিশালী করে
কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি: অবসাদ ও আলস্য ভাব দূর করে প্রাণবন্ত করে।
ব্যায়ামের পাশাপাশি ভিটামিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। অন্যথায় শরীর দুর্বল হয়ে পড়বে।
থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য কয়েকটি খাবার খাওয়া জরুরি। যেসব খাবার খাওয়া উচিত:
ভিটামিন ‘এ’: থাইরয়েডের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়ার সবচেয়ে ভালো উপায় হলো ভিটামিন ‘এ’-সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া। এজন্য প্রচুর পরিমাণে গাজর খেতে হবে। হলুদ ও গাঢ় সবুজ শাকসবজি রাখতে হবে খাবারের তালিকায়। ডিম খেতে হবে
দই: দইয়ে থাকা ভিটামিন ‘ডি’ থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণের জন্য ভালো খাবার। ভিটামিন ‘ডি’র অভাবে হাসডিমোটোস রোগ হয়, যা হাইপোথাইরয়েডিজমের একটি বড় কারণ
স আয়োডিনযুক্ত খাবার: থাইরয়েড গ্রন্থিকে সক্রিয় রাখতে আয়োডিনযুক্ত খাবার খেতে হবে। সেক্ষেত্রে পালংশাক, কচুশাক, মাশরুম, সামুদ্রিক মাছ, রসুন প্রভৃতি খেতে হবে
জিংক ও কপারযুক্ত খাবার: গরুর মাংস, ডার্ক চকোলেট, গলদা চিংড়ি, বাদাম, সূর্যমুখীর বীজ প্রভৃতি খেতে হবে
ভিটামিন ‘সি’: পেয়ারা, পেঁপে, মরিচ, লেবু, স্ট্রবেরি, ফুলকপি প্রভৃতি ভিটামিন ‘সি’যুক্ত খাবার থাইরয়েডের সমস্যা দূরীকরণে সহায়ক
নারকেল তেল: এতে যে ফ্যাটি এসিড আছে তা থাইরয়েড নিয়ন্ত্রণে রাখে। এছাড়া বিপাকেও সাহায্য করে। এটা শরীরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে, যা হাইপোথাইরয়েডিজমের রোগীদের জন্য উপকারী
লাল চালের ভাত: থাইরয়েড রোগীদের জন্য লাল চালের ভাত খুবই উপকারী। এ ধরনের ভাতে কার্বোহাইড্রেট থাকে, যা স্বাস্থ্যের যত্নে ভীষণ জরুরি।
কামরুন নাহার ঊষা