শেয়ার বিজ ডেস্ক: থাইল্যান্ড সেপ্টেম্বরে ১০ বছর মেয়াদি দক্ষ কর্মী ও বিনিয়োগ ভিসা চালু করবে। আগামী পাঁচ বছরে জাপান ও অন্য উন্নত অর্থনীতির দেশ থেকে ১০ লাখ কর্মী নেয়ার চেষ্টার অংশ হিসেবে এ ভিসা কর্মসূচি চালু করতে চায় দেশটি। খবর: নিক্কেই এশিয়া।
দীর্ঘমেয়াদি ভিসা প্রণয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ খাত, যেমন অটোমোবাইল, ইলেকট্রনিকস ও বায়োটেকনোলজি খাতগুলোকে আরও আকর্ষণীয় ও প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক করতে চায় থাইল্যান্ড।
বিনিয়োগ বোর্ডের (বিওআই) ডেপুটি সেক্রেটারি জেনারেল নারিত থার্ডস্টিরাসুকদি নিক্কেই এশিয়ার সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, দীর্ঘমেয়াদি আবাসিক ভিসার লক্ষ্য থাইল্যান্ডে ‘বিদেশি সম্ভাবনাময় ও দক্ষ মানবসম্পদ’-এর সঠিক প্রয়োগ, যার আবেদন শুরু হবে ১ সেপ্টেম্বর থেকে।
থাইল্যান্ড শিল্প ও প্রযুক্তিগত ক্যাটেগরিতে (ইলেকট্রিক ভেহিকেল, ইলেকট্রনিকস, ওষুধ ও প্রতিরক্ষা) ১০ বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন বিদেশি কর্মী খুঁজছে, যারা কোনো প্রতিষ্ঠানের বা গবেষণা প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী।
বিদেশি প্রতিষ্ঠান কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মী, যারা দূরে থেকে (রিমোটলি) কাজ করতে আগ্রহী তারাও এ প্রোগ্রামে আবেদন করতে পারবেন এবং থাইল্যান্ডে স্থানান্তর করতে পারবেন। যেসব ব্যক্তির আর্থিক সম্পদ ১০ লাখ ডলারের বেশি এবং পশ্চাশোর্ধ্ব অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তি, যাদের পেনশনের মতো স্থিতিশীল আয় রয়েছে, তারাও আবেদন করতে পারবেন।
সব সফল আবেদনকারীকে ডিজিটাল ওয়ার্ক পারমিট দেয়া হবে। থাই সরকার ব্যক্তিগত আয়কর কমাবে, যা কখনও কখনও ১৭ থেকে ৩৫ শতাংশ হতে পারে। একজন বিদেশি কর্মীর বিপরীতে কোনো দেশীয় প্রতিষ্ঠান চার থাই নাগরিককে নিয়োগ দিলে সেই প্রতিষ্ঠানের কিছু নিয়ম শিথিল করা হবে, যাতে অভ্যন্তরীণ কর্মশক্তি সুরক্ষিত থাকে। তাছাড়া ক্ষুদ্র ও মাঝারি আকার প্রতিষ্ঠানসহ স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠানও বিশেষ সুবিধা পাবে।
নতুন এই ভিসা কর্মসূচি থাইল্যান্ডের তৃতীয় ভিসা কর্মসূচি, যার আওতায় দক্ষ পেশাজীবী ও বিনিয়োগকারীদের আকৃষ্ট করা হচ্ছে। বিদ্যমান দুই স্কিমের একটি ওয়ার্ক পারমিটের আওতায় ৬০ বছরের বেশি সময় ধরে জাপান, চীন, দক্ষিণ কোরিয়া ও অন্য দেশ থেকে ৫০ হাজার নির্বাহী ও পেশাজীবী নিয়েছে থাইল্যান্ড।
আর স্মার্ট ভিসা প্রোগ্রামের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপ থেকে এক হাজার ২০০ কর্মীকে নিয়োগ দিয়েছে থাইল্যান্ড। এই কর্মীদের বেশিরভাগ প্রযুক্তি দক্ষতাসম্পন্ন উদ্যোক্তা। এ ভিসা প্রোগ্রামের মেয়াদ সর্বোচ্চ চার বছর। এটি চালু করা হয় ২০১৮ সালে।
নারিত বলেন, আমরা দীর্ঘমেয়াদি ভিসা কর্মসূচির আওতায় জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের কর্মী পাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী। তবে এ কর্মসূচির অর্থনৈতিক প্রভাব নিয়ে বিশদ পূর্বাভাস দেননি তিনি। ভিসাধারীদের একেকজনের জন্য ১০ লাখ বাথ (থাই মুদ্রা) খরচ হতে পারে এবং এজন্য বিনিয়োগ বোর্ড প্রায় এক ট্রিলিয়ন বাথ (দুই হাজার ৬৭০ কোটি ডলার) বিনিয়োগ করবে।
থাই কর্তৃপক্ষ জানায়, তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে এ অঞ্চলে নতুন শিল্পপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও সরবরাহ শৃঙ্খলে আধিপত্য ধরে রাখতে দীর্ঘমেয়াদি ভিসা কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছে। কভিড-১৯ মহামারিতে ক্ষতিগ্রস্ত পর্যটনশিল্প পুনরুদ্ধার করাও এর অন্যতম লক্ষ্য। তাছাড়া কভিডে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের অর্থনীতি। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য শুধু পর্যটন খাতের ওপর নির্ভরশীলতা থেকেও বেরিয়ে আসা এ কর্মসূচির অন্যতম লক্ষ্য।
এদিকে জাপানও বিদেশি দক্ষ কর্মীর ভিসা কোটা পুনর্গঠন করার বিষয়টি বিবেচনা করছে। বিশেষ করে রেস্টুরেন্ট ও হোটেলে রেডিমেড খাবার উৎপাদন বাড়ানোর জন্য তারা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাই এ ভিসা কর্মসূচির আওতায় বিদেশি দক্ষ কর্মীর সংখ্যা ৩৪ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৮৭ হাজার ২০০ করবে জাপান।