সাইমউল্লাহ সবুজ: রপ্তানিমুখী ব্যাগ তৈরির কারখানা বন্ধ করে ওই কারখানায় এখন ভাড়ায় অন্য কোম্পানির জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ। ব্যবসায় ভালো করতে না পারায় দীর্ঘদিন ধরে লোকসান গুনছে কোম্পানিটি। তবে পুঁজিবাজারে হু হু করে বাড়ছে এর শেয়ারের দাম। গত তিন মাসে শেয়ারদর বেড়েছে ছয় গুণের বেশি। যদিও কোনো মূল্য সংবেদনশীল তথ্য নেই বলে একাধিকবার জানিয়েছে কোম্পানিটি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্যমতে, গত বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর খান ব্রাদার্সের শেয়ারদর ছিল ১৯ টাকা ৯০ পয়সা, যা ২০২৪ সালের ১৬ জানুয়ারি দাঁড়িয়েছে ১৪৮ টাকা ২০ পয়সায়। এ হিসেবে কোম্পানিটির শেয়ারদর বেড়েছে ১২৮ টাকা ৩০ পয়সা বা ৬৪৫ শতাংশ।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খান ব্রাদার্স ব্যবসায় লোকসান গুনছে। এমন লোকসানি কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধিতে কারসাজি চক্র জড়িয়ে গেছে। তাই সাধারণ বিনিয়োগকারীদের সতর্ক থাকতে হবে। কেননা শেয়ারদরে বড় ধরনের ধস নামলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।
খান ব্রাদার্সের কোম্পানি সচিব তপন কুমার সরকার বলেন, কোম্পানির শেয়ারদর বৃদ্ধির কোনো সুনির্দিষ্ট কারণ নেই। এতে কোম্পানির কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে জানান তিনি।
বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসির) নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম শেয়ার বিজকে বলেন, কোম্পানিটির লেনদেন পর্যবেক্ষণে রেখেছে বিএসইসি। কোনো প্রকার অনিয়মের প্রমাণ মিললে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি ২০২৩-২৪ হিসাববছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানিটির নিট লোকসান হয়েছে ১৩ লাখ টাকা। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) দাঁড়ায় ১১ টাকা ৮৬ পয়সায়।
সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২৩ হিসাববছরে বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি কোম্পানিটির পর্ষদ। আলোচ্য সময়ে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ৬ পয়সা এবং এনএভিপিএস ছিল ১১ টাকা ৮৭ পয়সা।
এর আগে সমাপ্ত ২০২১-২২ হিসাববছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশের সুপারিশ করেছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ। আলোচ্য হিসাববছরে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১৮ পয়সা। এর আগের হিসাব বছরে এ লোকসান ছিল ১৫ পয়সা।
তার আগে লোকসানের কারণে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০২০-২১ বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের কোনো লভ্যাংশ দেয়নি খান ব্রাদার্স। আগের হিসাব বছরে ২ শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ২০১৮ হিসাববছরে ২ শতাংশ নগদ দিয়েছিল কোম্পানিটি। এছাড়া ২০১৭ হিসাব বছরে ১০ শতাংশ বোনাস, ২০১৬ হিসাব বছরে ১১ শতাংশ বোনাস ও ২০১৫ হিসাব বছরে ১৫ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ পেয়েছিলেন কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডাররা।
কোম্পানিটি ২০১৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২০ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। বর্তমানে কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন ৯৮ কোটি টাকা। শেয়ার সংখ্যা ৯ কোটি ৮০ লাখ। মোট শেয়ারের মাত্র ৩০ দশমিক ১৩ শতাংশ উদ্যোক্তাদের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ৫ দশমিক ৭১ শতাংশ শেয়ার। বাকি ৬৪ দশমিক ১৬ শতাংশ শেয়ার ধারণ করছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা।