নতুন বছর নতুন স্বপ্ন। স্বপ্নগুলোকে সফল করতে নিজের সঙ্গেই নিজে প্রতিজ্ঞা করার সময় এসেছে। নতুন বছরকে বরণ করে নিতে বিভিন্ন দেশেই এ আয়োজন করে থাকে। এদেশেও তার ব্যতিক্রম নয়। বরং নতুনকে বরণ করে নিতে অনেক আয়োজন সবসময়ই।
আমাদের দেশে স্বাভাবিকভাবেই বাংলা নববর্ষ বা পহেলা বৈশাখ এবং ইংরেজি থার্টি ফার্স্ট নাইট পালনের একটা রেওয়াজ আছে দীর্ঘদিন থেকেই। তবে বিগত ১০ বছর আগেও ইংরেজি নতুন বছরকে বরণ করে নিতে এত উৎসাহ-উদ্দীপনা ছিল না, যেটা বর্তমানে বিরাজমান। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সভ্যতা, সংস্কৃতির অনেক পরিবর্তন ঘটে এটাও হয়তো তারই একটা নমুনা।
বাংলা নববর্ষের ইতিহাস ঐতিহ্য বিবেচনা করে, বাঙালি পরিবার ওইদিন বৈশাখী সাজে সেজে পান্তা-ইলিশ খেয়ে থাকে। পরিবার নিয়ে ঘুরতে যায় গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে দূর শহরে। তৈরি হয় একটা উৎসবমুখর পরিবেশ। গ্রামে গ্রামে মেতে উঠে গরুর শিংয়ের খেলা। শুরু করে বিভিন্ন উৎসব। সঙ্গে যুক্ত হয় পুরোনো বছরের হালখাতা। সবারই একটা পরিকল্পনা থাকে নতুন বছরকে ঘিরে নতুন আঙ্গিকে শুরু করবে সব কার্যক্রম।
তবে এর পুরোই ব্যতিক্রম থার্টি ফার্স্ট নাইট। থার্টি ফার্স্ট নাইটের কয়েকদিন আগের থেকেই শহরে হিড়িক পরে যায় আতশবাজি এবং ফানুস কেনাবেচার। বিভিন্ন বয়সী মানুষ অংশ নেয় এই আনন্দমুখর উৎসবে। তবে এসব আয়োজনের বৃহৎ একটা অংশ তরুণ প্রজš§। রাত ১২টার পর থেকেই শুরু হয়ে যায় আতশবাজির উচ্চশব্দ এবং ছেড়ে যায় আকাশ রাঙানো ফানুস। বিভিন্ন কালারে কালারে ছেয়ে যায় আকাশের কালো ছায়া। নিঃসন্দেহে একটা আলাদা পরিবেশ সৃষ্টি হয় নানান আলো এবং মিশ্রিত শব্দের পুলকে এবং তারুণ্য মন চমকে উঠে ফানুসের রঙিন ঝলকে। আলাদা উদ্দীপনা দেয় আতশবাজি ফোটানোর বিকট আওয়াজে। মনে হয় যেন চারপাশ ভেঙে চুরমার হয়ে যাবে বা যাচ্ছে। অথবা মনে হতে পারে অনবরত আকাশে মেঘের গর্জন বয়ে বেড়াচ্ছে। এছাড়া থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে চলে বিভিন্ন জায়গায় নাচ, গানের আয়োজন। থাকছে তরুণ প্রজšে§র ঘোরাঘুরিসহ নানান কার্যকলাপ। তবে এত আনন্দ-উল্লাসের মধ্যেই মাঝে মধ্যে দুঃখকর সংবাদ শুনতে হয়। এত এত আতশবাজির শব্দে ঘুমাতে পারে না হাসপাতালের শত শত অসুস্থ রোগী। এছাড়াও যাদের বাসায় বৃদ্ধ মা-বাবা আছেন তাদের জন্য এমন বিরামহীন বিকট আওয়াজ একটা অস্বস্তিকর অবস্থা সৃষ্টি করে। বিশেষ করে ঢাকায় যেভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এমন বিকট আওয়াজ চলতে থাকে তাতে সমস্যা হওয়াটাই অস্বাভাবিক কিছু না। অনেক সময় অনবরত বিকট শব্দে জরুরি অবস্থায় থাকা রোগীদের নানা জটিলতার সম্মুখীনও হতে হয়। এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। অতিরিক্ত আনন্দ করতে নতুন করে যুক্ত হয় ফানুস। আগুন দিয়ে বিগত সালের সব দুঃখ দূর আকাশে বিলিয়ে দিতে চায় আবেগি মন। এর ফাঁকেই অনেক সময়ই ফানুস পরে যায় অথবা কোথায় না কোথায় আটকে গিয়ে আগুনের তেজোদ্দীপ্ত ধোঁয়া সৃষ্টি করে। এভাবে বিগত সময়ে অনেক জায়গায় আগুন লেগেছে। এছাড়া আতশবাজির ফুলকা অনাকাক্সিক্ষতভাবে বিভিন্ন জায়গায় পড়ে যায়। সঙ্গে সঙ্গেই ঘটে যায় বিভিন্ন অপ্রীতিকর ঘটনা। কেননা এখানে উচ্চতাপ এবং চাপে বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থাকে। এমনকি আতশবাজি না ফুটে কোথায় পরে গেলে এর ভয়াবহতা হতে পারে আরও মারাত্মক।
প্রতিবছরই থার্টি ফার্স্ট নাইটকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন নীতিমালা তথা সীমাবদ্ধতা দেওয়া হয়ে থাকে। তবে সেটা অধিকাংশ সময়ে কাগজে-কলমেই থেকে যায়। ২-৪ জায়গায় প্রশাসনের তদারকি দেখা গেলেও সেটা যৎসামান্য।
আনন্দ-উৎসবে নিঃসন্দেহে বাধা দেয়া উচিত নয়। এটা নাগরিকের অধিকার। তবে আনন্দ উৎসব যদি জনদুর্ভোগ, জনভোগান্তি সৃষ্টি করে তবে সেখানে অবশ্যই প্রশাসনের হস্তক্ষেপ করতে হবে।
সুতরাং জনভোগান্তির কথা বিবেচনা করে এমন রাতব্যাপী আয়োজন বন্ধ করতে হবে। যারা এসবের আয়োজন করে তাদের ও সামগ্রিক দিক হিসাব করে আয়োজন করতে হবে। পাশাপাশি যাতে কোনো রকম দুর্ঘটনার স্বীকার হতে না হয়, সেদিকে নজরদারি রাখতে হবে আয়োজকদের। থার্টি ফার্স্ট নাইটকে কেন্দ্র করে যেন কোনো অনৈতিক কার্যক্রম না ঘটে, সেদিকে প্রশাসনের কড়া নজরদারি বাড়াতে হবে।
সায়েদ আফ্রিদী
শিক্ষার্থী
ঢাকা কলেজ