থ্যালাসেমিয়া বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ। এটি যেমন কোনো ছোঁয়াচে রোগ নয়, তেমনি রক্তের ক্যানসারও নয়। জিনগত ত্রুটির কারণে এই রোগে অস্বাভাবিক হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় বলে লোহিত রক্তকণিকা সময়ের আগেই ভেঙে যায়। ফলে রক্তশূন্যতা দেখা দেয়।
ক্লিনিক্যালি থ্যালাসেমিয়া তিন ধরনের হতে পারে। সবচেয়ে তীব্র ও জটিল ধরন ‘মেজর’ হিসেবে পরিচিত। আছে ‘ইন্টারমিডিয়েট’ বা মধ্যম পর্যায়। আবার ‘মাইনর’ ধরনের উপসর্গ মৃদু থাকে। এ ক্ষেত্রে প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাপন করা যায়।
থ্যালাসেমিয়ার বাহক আর থ্যালাসেমিয়ার রোগী এক নয়। বাহকের তেমন কোনো উপসর্গ থাকে না, তেমন কোনো চিকিৎসাও লাগে না। তবে একজন বাহক পরবর্তী প্রজšে§ রোগ বহন করতে সক্ষম।
থ্যালাসেমিয়া কেন হয়: মা ও বাবা দুজনই থ্যালাসেমিয়া রোগের বাহক হলে সন্তান থ্যালাসেমিয়ার রোগী হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
মানবদেহে ২৩ জোড়া বা ৪৬টি ক্রোমোজোম থাকে। প্রতি জোড়ার অর্ধেক মায়ের আর বাকি অর্ধেক বাবার কাছ থেকে আসে। ১৬ নম্বর ক্রোমোজোমে থাকে আলফা জিন আর ১১ নম্বর ক্রোমোজোমে থাকে বিটা জিন। আলফা ও বিটা জিনদ্বয় আলফা ও বিটা গ্লোবিন নামের প্রোটিন তৈরি করে, যা অনেক অ্যামিনো অ্যাসিডের সমষ্টি। জন্মগতভাবে ১৬ অথবা ১১ নম্বর ক্রোমোজোমের আলফা অথবা বিটা জিন সঠিকভাবে অ্যামিনো অ্যাসিড তৈরি করতে না পারলে আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন নামের প্রোটিন ত্রুটিপূর্ণ হয়। আলফা অথবা বিটা গ্লোবিন চেইন ত্রুটিপূর্ণ থাকলে হিমোগ্লোবিনও ত্রুটিপূর্ণ হয়। স্বাভাবিক মানুষের লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু ১২০ দিন হলেও ত্রুটিপূর্ণ গ্লোবিনের কারণে থ্যালাসেমিয়া রোগীর লোহিত রক্তকণিকার গড় আয়ু মাত্র ২০ থেকে ৬০ দিন। অপরিপক্ব অবস্থায় লোহিত রক্তকণিকা ভেঙে যায়, তাই রক্তস্বল্পতা দেখা দেয়।
কীভাবে বুঝবেন: থ্যালাসেমিয়ার বাহক শৈশব থেকে স্বাভাবিক মানুষ হিসেবেই বেড়ে ওঠে। এমন হতে পারে যে জীবনে কখনও তার সমস্যাটি ধরাই পড়ে না। তাই কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কি না, তা বাহ্যিকভাবে বোঝার কোনো উপায় নেই। মৃদু রক্তস্বল্পতা বা প্রয়োজনের সময় যেমন গর্ভধারণকালে বা সার্জারির সময় রক্তস্বল্পতার কারণ জানতে গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে শনাক্ত হতে পারে। তবে থ্যালাসেমিয়ার রোগী জন্মের ছয় মাস বয়স থেকেই ফ্যাকাসে হতে থাকে, ক্রমে জন্ডিস দেখা দেয়। পেটের প্লিহা ও যকৃৎ বড় হয়ে যায়। ঠিকমতো শরীরের বৃদ্ধি হয় না। এছাড়া আরও নানা জটিলতা হতে পারে। থ্যালাসেমিয়া মেজর তাই শিশুকালেই ধরা পড়ে। [চলবে]
ডা. মোহাম্মদ কামরুজ্জামান
সহকারী অধ্যাপক, হেমাটোলজি
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতাল, ঢাকা