নিজস্ব প্রতিবেদক: অনেক তরুণ-তরুণীর অভিযোগ রয়েছে থ্রিজি ও ফোরজি সেবার গুণগত মান নিয়ে। তারা আশানুরূপ সেবা পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করছেন। এর জন্য মাঝে মধ্যে আমাকে বোকাও শুনতে হয় বলে মন্তব্য করেছেন ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী বলেন, আমি যখনই কোনো জায়গায় বিশেষ করে ফেসবুকে ইয়ং জেনারেশনের ছেলেমেয়েদের সঙ্গে যোগাযোগ করি তখনই বলে এখনও থ্রিজিতে কথা বলতে পারি না, ফোরজির স্পিড পাই না, টুজি ঠিকমতো কাজ করে না, নেটওয়ার্ক কাজ করে না, অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।
গতকাল রাজধানীতে আইইবি মিলনায়তনে ফাইভজি সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ‘নিঃসন্দেহে আমাদের মোবাইল ও ইন্টারনেট সেবাদাতাদের যে গুণগত মানের সেবা দেওয়া উচিত ছিল, সেই গুণগত মানের সেবা আমরা দিতে সক্ষম হচ্ছি না। জনগণের মধ্যে এ নিয়ে প্রচণ্ড অসন্তুষ্টি কাজ করেছে। একজন মন্ত্রী পর্যন্ত সংসদে দাঁড়িয়ে আমাদের অপারেটরদের সমালোচনার মধ্যে ফেলেছেন। আমার এমন কোনো দিন যায় না যেদিন দু-চার-পাঁচটা অভিযোগ আসে না। বহু জায়গায় অভিযোগ- আমার নেটওয়ার্ক ঠিকমতো কাজ করে না।’
এই সংকটটা রয়ে গেছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সাধারণ মানুষের ধারণা রয়েছে, টুজি, থ্রিজি, ফোরজির নেটওয়ার্ক এখন পর্যন্ত গড়ে তুলতে পারিনি; ফাইভজি নিয়ে কেন কথা বলছেন? আমি গালিটা একটু বেশি খাই; কারণ ফাইভজি নিয়ে বেশি কথা বলি। এটি খুব স্পষ্ট করা দরকার যে, ফাইভজি ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিভ্যুলেশনের মহাসড়ক। সে কারণে আমি পছন্দ করি আর না করি আমার টুজি, থ্রিজি, ফোরজির কোয়ালিটি অব সার্ভিস কতটা উন্নত করতে পারব কি পারব না তার চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে, আমি ফাইভজির মহাসড়ক যথাসময়ে নির্মাণ করতে পারব কি না?’
পৃথিবীর বেশ কয়েকটি দেশ ফাইভজি নিয়ে তৎপর হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, খুব কম দেশের মধ্যে আমরা এরই মধ্যে ফাইভজির পরীক্ষা করে ফেলেছি, চার দশমিক ১৩ জিপিপিএস স্পিড পেয়েছিলাম।
ফাইভজির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করতে হবে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘জনগণ ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আলোচনা করছি। গাইডলাইন তৈরি করতে হবে সবার মতামত নিয়ে। এটি এমনভাবে তৈরি করতে চাই, যাতে প্রত্যেকের কাছে ব্যবহার করে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘ফাইভজি ও চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের ফলে যেসব দেশে মানুষ কম আর যন্ত্র বেশি দিয়ে মানুষের কাজ করানো হবে। কিন্তু যেখানে মানুষ বেশি সেখানে কী হবে। এটা কি আমাদের জন্য অভিশাপ না আশীর্বাদ? এটা নির্ভর করবে সহজ, সাবলীল ও পরিকল্পিতভাবে এর ব্যবহারের ওপর।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লব সবার জন্য এক নয়। এটি উন্নত বিশ্বের জন্য যেমনটা অনুন্নত, বিশ্বের জন্য তা নয়। আমাদের মধ্যে যে আইওটি সম্ভাবনা রোবটিকস চর্চা শুরু হয়েছে। ফাইভজির চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করার আহ্বান জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, জনগণ ছাড়াও ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে আলোচনা করছি। গাইডলাইন তৈরি করতে হবে সবার মতামত নিয়ে। এটি এমনভাবে তৈরি করতে চাই, যাতে প্রত্যেকের কাছে ব্যবহার করে দেশকে সামনের দিকে নিয়ে যেতে কোনো ধরনের অসুবিধা না হয়।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান মো. জহুরুল হক বলেন, ফাইভজি প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে শিক্ষা, যোগাযোগ, চিকিৎসা, শিল্প-পরিবহন, জাতীয় নিরাপত্তার প্রতিটি ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন ও গুণগত মান উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়বে।
ফাইভজির মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, ক্লাউড, আইওটির মতো উন্নত প্রযুক্তির সামগ্রিক ব্যবহার বিকাশের পথ উšে§াচন করবে। এ জন্য বিটিআরসি একটি রোডম্যাপ তৈরি করেছে।
চেয়ারম্যান বলেন, ফাইভজির জন্য তরঙ্গই সব নয়; অবকাঠামো উন্নয়ন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অবশ্য অবকাঠামো উন্নয়নের দিক দিয়ে আমরা এখন সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছি। অনেকেই বিটিআরসি তরঙ্গ মূল্য বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ করেন। আসলে এই অভিযোগ ঠিক নয়। তরঙ্গ মূল্য আমরা নয়; আপনারাই বাড়িয়েছেন। নিলামে বেশি মূল্য দিয়ে বাড়িয়েছেন। তাই নিলামে ডাক দেওয়ার আগে বিষয়টি ভেবে নেওয়া উচিত। পরে তরঙ্গ মূল্য কমানো বিটিআরসি’র জন্য কঠিন বিষয়।
বিটিআরসির স্পেকট্রাম বিভাগের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল আলম ফাইভজির রোডম্যাপ ঘোষণা করেন। রোডম্যাপ অনুযায়ী, ২০২১-২০২৩ সালের মধ্যে ফাইভজি চালু করার জন্য সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ। ২০২১ সালের মধ্যে সব বিভাগীয় শহরে, ২০২২ সালের মধ্যে ৫০ শতাংশ জেলা শহর, ২০২৩ সালের মধ্যে সব জেলা শহর এবং ২০২৬ সালের মধ্যে সব উপজেলা, হাইওয়ে, রেলওয়েতে ফাইভজি চালু করা হবে।
সেমিনারে আরও বক্তব্য রাখেনÑডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব অশোক কুমার বিশ্বাস, স্পেকট্রাম বিভাগের কমিশনার মো. আমিনুল হাসান, গ্রামীণফোনের এন্টারপ্রাইজ বিজনেসের জেনারেল ম্যানেজার রেদওয়ান হাসান খান, এরিকসন বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার আবদুস সালাম, হুয়াওয়ে বাংলাদেশের চিফ টেকনিক্যাল অফিসার জেরি ওয়াং সু প্রমুখ।