দক্ষতা ও আনুগত্যের পাশাপাশি পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে

একটি প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি বিভাগ-প্রধানের সাফল্যের ওপর নির্ভর করে ওই প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বা সিইওর সফলতা। সিইও সফল হলে প্রতিষ্ঠানটির মুনাফা বেশি হয়। খুশি হন শেয়ারহোল্ডাররা। চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে সিইও’র সুনাম। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও), কোম্পানি সচিব, চিফ মার্কেটিং অফিসারসহ এইচআর প্রধানরা থাকেন পাদপ্রদীপের আড়ালে। টপ ম্যানেজমেন্টের বড় অংশ হলেও তারা আলোচনার বাইরে থাকতে পছন্দ করেন। অন্তর্মুখী এসব কর্মকর্তা সব সময় কেবল প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য বাস্তবায়নে ব্যস্ত থাকেন। সেসব কর্মকর্তাকে নিয়ে আমাদের নিয়মিত আয়োজন ‘টপ ম্যানেজমেন্ট’। শেয়ার বিজের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এবার ইনফ্রাসট্র্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানির (আইআইএফসি) প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব মো. জসিম উদ্দিন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন মো. হাসানুজ্জামান পিয়াস

‘দক্ষতা ও আনুগত্যের পাশাপাশি পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে’

মো. জসিম উদ্দিন ইনফ্রাসট্র্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানির (আইআইএফসি) প্রধান অর্থ কর্মকর্তা ও কোম্পানি সচিব। সম্পন্ন করেছেন চার্টার্ড সেক্রেটারি কোর্স, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্সি ও মানবসম্পদ ব্যবস্থাপনার ওপর কোর্সসহ আরও কয়েকটি পেশাগত ডিগ্রি। তিনি ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড সেক্রেটারিজ অব বাংলাদেশ, দি ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ, দি চার্টার্ড ইনস্টিটিউট অব পাবলিক ফাইন্যান্স অ্যান্ড অ্যাকাউন্ট্যান্সি, ইনস্টিটিউট অব পারসোনাল ম্যানেজমেন্ট, ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট কনসালট্যান্স অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ সোসাইটি অব হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্ট ও ঢাকা ট্যাক্সেস বার অ্যাসোসিয়েশনসহ

আরও কিছু পেশাগত প্রতিষ্ঠানের সদস্য

শেয়ার বিজ: আইআইএফসি সম্পর্কে কিছু বলুন…

মো. জসিম উদ্দিন: ইনফ্রাসট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ফ্যাসিলিটেশন কোম্পানি বাংলাদেশ সরকারের অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অধীনে প্রতিষ্ঠিত একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান। এটি ১৯৯৯ সালে কোম্পানিজ আইন ১৯৯৪-এর অধীনে নিবন্ধিত হয়। আইআইএফসি নানা বিষয়ে কনসালটেন্সি সেবা প্রদান করে থাকে। বিশ্বব্যাংকের প্রাইভেট সেক্টর ইনভেস্টমেন্ট ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের (পিএসআইডিপি) অধীনে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) ত্বরান্বিত ও উৎসাহিত করার জন্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি। পরবর্তী সময়ে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে বিদেশেও পরামর্শ সেবা প্রদান করে যাচ্ছে আইআইএফসি। এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে এ সেবা বিস্তৃত হয়েছে। একই সঙ্গে নানা আন্তর্জাতিক কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছে আমাদের প্রতিষ্ঠান। এর মধ্যে রয়েছে পিডব্লিউসি, ডেলোয়েট প্রভৃতি।

 

শেয়ার বিজ: আইআইএফসির জন্য কোন বিষয়টিকে চ্যালেঞ্জিং বলে মনে করেন?

জসিম উদ্দিন: আইআইএফসি দেশের বাইরেও কনসালটেন্সি সেবা দিয়ে থাকে। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে দেশি বিশেষজ্ঞ নিয়ে বিদেশে ও দেশে আন্তর্জাতিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা চ্যালেঞ্জের। তাছাড়া বিশ্ববাজারে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ।

 

শেয়ার বিজ: কোম্পানির সঙ্গে সচিবের সম্পর্ক কেমন?

জসিম উদ্দিন: কোম্পানির সঙ্গে সচিবের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। প্রতিষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন কোম্পানি সচিব। স্টেকহোল্ডার ও কোম্পানির মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন তিনি। এছাড়া কোম্পানিতে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা রয়েছে কোম্পানি সচিবের।

 

শেয়ার বিজ: যারা কোম্পানি সচিব পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের উদ্দেশে কিছু বলুন…

জসিম উদ্দিন: যারা এ পেশায় ক্যারিয়ার গড়তে চান, তাদের স্বাগত জানাই। এটি একটি চ্যালেঞ্জিং ও আকর্ষণীয় পেশা। যদিও বাংলাদেশে এ পেশা বেশি পুরনো নয়, তবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশে এ পেশার উপস্থিতি রয়েছে অনেক বছর ধরেই। বাংলাদেশে পেশাটি নতুন হওয়ায় এখনও অনেক দক্ষ পেশাদার কোম্পানি সচিবের চাহিদা রয়েছে। কোম্পানির সচিব হিসেবে কাজ করার জন্য বিশেষ কিছু দক্ষতা ও গুণাবলীর প্রয়োজন। যারা এ পেশায় আসতে চান, তাদের উচিত এ পেশা সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা, পেশার দক্ষতা ও গুণাবলী সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নেওয়া।

 

শেয়ার বিজ: বাংলাদেশে কোম্পানি সচিব পেশার সম্ভাবনা কেমন?

জসিম উদ্দিন: খুবই সম্ভাবনাময় পেশা এটি। এখন করপোরেটাইজেশনের যুগ। এমনকি সরকারের অনেক সংস্থাও কোম্পানিতে পরিণত হচ্ছে। কোম্পানির সংখ্যা বাড়লে কোম্পানি সচিবের প্রয়োজন হবে। একই সঙ্গে পুঁজিবাজারে আরও অনেক নতুন প্রতিষ্ঠান তালিকাভুক্ত হবে। কোম্পানিগুলো যত বেশি সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে চাইবে, ততই পেশাদার কোম্পানি সচিবের গুরুত্ব বাড়বে। এ কারণে এ পেশার ভবিষ্যৎ নিয়ে আমি উচ্ছ্বসিত বলতে পারেন। প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য কোম্পানিতে সুশাসন নিশ্চিত করা প্রয়োজন। কোম্পানি সচিবরা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে থাকেন।

 

শেয়ার বিজ: পেশা হিসেবে ‘কোম্পানি সচিব’ পদটিকে কীভাবে মূল্যায়ন করেন?

জসিম উদ্দিন: নিঃসন্দেহে এটি একটি আকর্ষণীয় পেশা। দেখুন, দেশের সব পেশা আইনের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। দেশে চার্টার্ড সেক্রেটারিজ আইন-২০১০ পাস হয়েছে। এ আইনের মধ্য দিয়ে স্বীকৃতি পেয়েছে কোম্পানি সচিব পেশা।

 

শেয়ার বিজ: সিএফও হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন, কোম্পানি সচিব এবং সিএফও- এ দুটি দায়িত্বই একসঙ্গে উপভোগ করছেন?

জসিম উদ্দিন: অবশ্যই উপভোগ করছি। আমি মনে করি, কর্মসন্তুষ্টি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে বিশেষ সহায়তা করে। প্রত্যেককে কর্মসন্তুষ্টি নিয়ে কাজ করা উচিত।

 

শেয়ার বিজ: সরকারি প্রতিষ্ঠানে একজন সচিবের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয় কি?

জসিম উদ্দিন: পেশাটাই চ্যালেঞ্জিং। তবে সরকারি প্রতিষ্ঠান হিসেবে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হয়। সে মন্ত্রণালয়ে আইন-কানুন সম্পর্কে ধারণা থাকতে হয়।

 

শেয়ার বিজ: দায়িত্ব পালনে সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে আপনার মূলমন্ত্র কী?

জসিম উদ্দিন: প্রথমেই বলতে চাই যোগাযোগ দক্ষতা নিয়ে। অবশ্যই যোগাযোগ দক্ষতা এক্ষেত্রে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পারস্পরিক সহযোগিতা ও ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করে যাওয়া উচিত। এভাবে প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি অর্জন করাই মূলমন্ত্র বলে মনে করি।

 

শেয়ার বিজ: সফল সচিব হতে আপনার পরামর্শ কী?

জসিম উদ্দিন: দক্ষতা ও আনুগত্যের পাশাপাশি পেশার প্রতি শ্রদ্ধাবোধ থাকতে হবে। নানা ধরনের আইন সম্পর্কে ধারণা রাখতে হবে। বিশেষ করে কোম্পানিজ আইন ও সিকিউরিটিজ আইনসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক আইনে পারদর্শী হতে হবে। তবেই তিনি সফল সচিব হতে পারবেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০