দক্ষিণাঞ্চলের সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপরে, বন্যার শঙ্কা

প্রতিনিধি, বরিশাল: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নি¤œচাপের কারণে দক্ষিণাঞ্চলের প্রায় সব নদীতে পানি বেড়েছে। ফলে বরিশাল বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সব নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পূর্ণিমার আগমন ও ভারতের উড়িষ্যা উপকূলে অতিক্রম করা নিন্মাচাপ লঘুচাপে রূপ নেয়ায় পানি বাড়ছে। আগামী দুই দিন ধারাবাহিকভাবে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হবে পানি। এ কারণে নিন্মাঞ্চল ও বরিশাল নগরীর অনেক এলাকায় পানি ঢুকে পড়েছে। ফলে এসব এলাকার বাসিন্দাদের ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। গতকাল বুধবার বিকালে এ তথ্য জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম।

তিনি বলেন, বিভাগের প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। মূলত বৈরী আবহাওয়া, পূর্ণিমার আগমন এবং বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ বিদ্যমান থাকায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিকে বন্যা বলা যাবে না। এটি মৌসুমি পানিপ্রবাহ। আশা করা যাচ্ছে, দুই দিন পরে নিরাপদ সীমায় নামবে নদীর পানিপ্রবাহ।

এ কর্মকর্তা বলেন, বরিশাল জেলার কীর্তনখোলা নদীর পানি ১২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং ভোলা জেলার খেয়াঘাট এলাকার তেঁতুলিয়া নদীর পানি ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

দৌলতখান উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৬৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, তজুমদ্দিন উপজেলার সুরমা ও মেঘনা নদীর পানি ৮৭ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, ঝালকাঠি জেলার বিশখালী নদীর পানি ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পটুয়াখালী জেলার মির্জাগঞ্জ উপজেলার বুড়িশ্বর/পায়রা নদীর পানি ২৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, বরগুনা জেলার বিশখালী নদীর পানি ৩৬ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পাথরঘাটা উপজেলার বিশখালী নদীর পানি ৬৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে, পিরোজপুর জেলার বলেশ্বর নদীর পানি দুই সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে এবং উমেদপুরের কঁচা নদীর পানি ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বিভাগের ছয়টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করেছিল। আর এখন ১০টি নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করল।

জলানুসন্ধান বিভাগের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মাসুম বলেন, পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভাগের উপকূলে এবং বিভিন্ন শহরে জোয়ারের পাানি ঢুকে পড়েছে। এসব পানি সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা অবস্থান করে। এরপর আবার নেমে যায়। পানি স্থায়ী হলে বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো।

বরিশাল বিভাগীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের উচ্চ পর্যবেক্ষক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, নিন্মচাপ লঘুচাপে রূপ নেয়ায় সারাদিন বরিশালে ২৪ দশমিক ছয় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এমন আবহাওয়া আরও দুই দিন বিরাজ করবে। সমুদ্রবন্দরে ৩ নম্বর এবং নদীবন্দরে ১ নম্বর নৌ-হুশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।

ঝালকাঠিতে প্লাবিত ১৫ গ্রাম: এদিকে বঙ্গোপসাগরে নি¤œচাপের প্রভাবে ঝালকাঠির বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বেড়েছে। জোয়ারের পানি স্বাভাবিক অবস্থার চেয়ে পাঁচ ফুট বেড়ে তলিয়ে গেছে নদীপাড়ের ১৫ গ্রাম।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রাকিব হোসেন জানান, জেলায় সুগন্ধা, বিষখালি ও হলতা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

এদিকে বুধবার সকাল থেকেই জোয়ার আর দমকা বাতাসে বেড়েই চলছে পানি। এতে নদী উপচে পানি ঢুকে পড়ছে উপকূলীয় কাঁঠালিয়া উপজেলার ১০টি গ্রামে।

জোয়ারের অস্বাভাবিক পানিতে কাঁঠালিয়া উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বাসভবনসহ উপজেলা সদরেও হাঁটুপানি হয়েছে বলে জানিয়েছেন উপজেলা সুজনের সম্পাদক মো. ফারুক হোসেন খান। তিনি বলেন, আমুয়া থেকে জাঙ্গালিয়া নদী পর্যন্ত ৩১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ না থাকায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে এ এলাকার মানুষকে সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়তে হয়। এ ছাড়া সুগন্ধা ও বিষখালি নদীর পানি বেড়ে জেলা সদর, নলছিটি ও রাজাপুর উপজেলায় আরও পাঁচটি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। জেলা শহরের চরাঞ্চলেও অসংখ্য বাড়ি-ঘরে পানি ঢুকে পড়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০