নজরুল ইসলাম: দেশে কভিড-১৯-এর নতুন ধরন ওমিক্রন দু’জনের শরীরে শনাক্ত হয়েছে। তারা জিম্বাবুয়েফেরত নারী ক্রিকেটার। আর দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত নিখোঁজ ২৪০ জনের মধ্যে কয়েকজনকে ট্রেস করা হয়েছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে তাদের মধ্যে ওমিক্রন পাওয়া যায়নি। কিন্তু বাকিদের ট্রেস করা যায়নি। এতে তাদের মাধ্যমে দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
ইতোমধ্যে বিশ্বের ৬২টি দেশে ওমিক্রন ছড়িয়ে পড়ার খবর প্রকাশ হয়েছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতে গতকাল পর্যন্ত ৩৩ জনের শরীরে ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে বলে এনডিটিভি জানিয়েছে।
ওমিক্রন বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে থেকে ফিরে আসা ২২ জন নারী ক্রিকেটারকে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেল প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁওয়ে রাখা হয়। এরপর গত ১, ৩ ও ৫ ডিসেম্বর তিন দফায় তাদের কভিড পরীক্ষা করা হয়। ৬ ডিসেম্বর তৃতীয় টেস্টে দুই খেলোয়াড়ের কভিড পজিটিভ পাওয়া যায়। শনিবার তাদের ওমিক্রন শনাক্ত হয়েছে।’
এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকাফেরত ২৪০ জনের খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না। তাদের বিষয়ে জানতে চাইলে ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, ‘তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজনকে ট্রেস করা হয়েছে। তাদের শরীরে ওমিক্রন পাওয়া যায়নি।’
২৪০ জনের মধ্যে মোট কতজনকে ট্রেস করা হয়েছেÑজানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সংখ্যাটি রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) বলতে পারবে।’
ওমিক্রন প্রতিরোধে প্রস্তুতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো প্রস্তুত রয়েছে।’
যাদের ট্রেস করা যায়নি তাদের মাধ্যমে ওমিক্রন ছড়াতে পারে কি না জানতে চাইলে তিনি কোনো মন্তব্য করেননি।
নিখোঁজ ২৪০ জনের বিষয়ে জানতে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এএসএম আলমগীরের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি মিটিংয়ে ব্যস্ত আছেন বলে কল কেটে দেন।
সার্বিক বিষয়ে জানতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র ও পরিচালক (রোগ-নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলামের মোবাইল ফোনে কল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি।
গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানিয়েছেন, ওমিক্রন শনাক্ত দুজনের সংস্পর্শে যারা এসেছিলেন তাদেরও শনাক্ত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমরা কন্টাক্ট ট্রেসিং করছি, সবাইকে পরীক্ষার আওতায় এনেছি। যারা সঙ্গে ছিল বা সংস্পর্শে এসেছে, সবার পরীক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আক্রান্ত দুজনই স্বাভাবিক আছেন। কারও কোনো ধরনের জটিল উপসর্গ নেই।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিম্বাবুয়ে থেকে আসা আমাদের দুই নারী ক্রিকেটার; যাদের শরীরে ওমিক্রন ভাইরাস পাওয়া গেছে, তাদের আমরা কোয়ারেন্টাইনে রেখেছি। তারা সুস্থ আছেন। তাদের যা যা চিকিৎসা দরকার সেগুলো ব্যবস্থা করা হয়েছে। মাঝে মধ্যেই পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে কী অবস্থায় আছে। পুরোপুরি সেরে উঠতে হয়তো কিছুদিন সময় লাগবে। অন্তত ২ সপ্তাহ লাগবে। পুরোপুরি যখন সেরে উঠবে তখনই আমরা তাদের ছাড়তে পারব।’
দেশের বাইরে থেকে যারা আসবেন তাদের সবাইকে আরও সতর্ক হতে হবেÑউল্লেখ করে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আফ্রিকার বাইরে ৬২টা দেশে এখন পর্যন্ত পাওয়া গেছে এই ওমিক্রন ভাইরাস। এটি খুবই দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, কিন্তু উপসর্গটা মৃদু। এখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যুর সংবাদ আমরা পাইনি। ডেলটা ভাইরাসের থেকে বেশি ক্ষতিকারক নয় এটি।’
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বরাত দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ডব্লিউএইচও বলেছে, আমরা যে টিকা ব্যবহার করছি, এই টিকাও ওমিক্রন দমনে কিছুটা কাজ করে। যেসব টিকা আমরা ব্যবহার করছি, সেগুলোর প্রতিরোধ ক্ষমতা রয়েছে। সে জন্য আমরা চাইব, যারা এখনও টিকা নেয়নি তারা তাড়াতাড়ি যেন টিকা নেয়। আমরা প্রায় ৭ কোটির মতো টিকা দিয়েছি। দ্বিতীয় ডোজ ৪ কোটির মতো হয়েছে। টিকা নেয়ার আগে যে আগ্রহ ছিল, আমরা দেখছি এখন ভাটা পড়েছে। যারা টিকা নিচ্ছে তারা কিন্তু তেমন অসুস্থ হচ্ছে না। আমাদের হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা কম, মৃত্যুর সংখ্যা খুবই কম। দুদিন আগে শূন্য ছিল, শুক্রবার একজন ছিল। টিকার ব্যবস্থার ফলেই এ পরিস্থিতি দাঁড়িয়েছে।’