শেয়ার বিজ ডেস্ক: রিজিওনাল ক্লাইমেট সামিট ২০২৩-এ একশনএইড বাংলাদেশ ‘ইউএন লিগ্যালি বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট অন ট্রান্সন্যাশনাল কর্পোরেশনস অ্যান্ড বিজনেস এন্টারপ্রাইজস উইথ হিউম্যান রাইটস’ শীর্ষক একটি উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকের আয়োজন করে। একশনএইড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ্ কবির সভাটি সঞ্চালনা করেন এবং অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার ইস্যু সমাধানে বিশেষ মনযোগ দিয়ে লিগ্যালি বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ এশিয়ার সম্পৃক্ততার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত ও পরিবেশ অধিদপ্তর সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমপি। বাংলাদেশ জলবায়ু সংসদের চেয়ারম্যান তানভীর শাকিল জয়, অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক বাংলাদেশ সংসদীয় ককাসের চেয়ারপার্সন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি এবং নেপালের জলবায়ু সংসদ সদস্য সোবিতা গৌতম সহ ভারত, নেপাল, ভুটান ও শ্রীলংকার সম্মানীত সংসদ সদস্যবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও আইএলও, আইওএম, ব্র্যাক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, সুইজারল্যান্ড দূতাবাসের প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকরা বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের অ্যাডভোকেট ও মানবাধিকার কর্মী ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া লিগ্যালি বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট প্রাসঙ্গিকতা এবং অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের স্বীকৃতি বিষয়ে বক্তব্য রাখেন। তিনি ২০১৪ সালে ট্রান্সন্যাশনাল কর্পোরেশন এবং অন্যান্য ব্যবসায়িক উদ্যোগ সম্পর্কিত ওপেন এন্ড ইন্টার-গভর্নমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপ প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন, যার লক্ষ্য এই সংস্থাগুলির মানবাধিকারের প্রভাব নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক উপকরণ তৈরি করা। তিনি ব্যবসায় মানবাধিকারের ঝুঁকি মোকাবেলায় বৈশ্বিক মানদণ্ড হিসেবে ব্যবসা ও মানবাধিকার সম্পর্কিত জাতিসংঘের গাইডিং প্রিন্সিপালস (২০১১) এর ভূমিকা তুলে ধরেন। এরই ধারাবাহিকতায় ২০১৫ সালে আলোচনা শুরু হয় ও ২০২২ সালে অষ্টম অধিবেশনে তৃতীয় সংশোধিত খসড়া পর্যালোচনা করা হয়। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া “আইজিডব্লিউজি” আয়োজিত পরামর্শ সভায় অংশগ্রহণসহ এসব আলোচনায় একশনএইড বাংলাদেশ ও প্রাণ প্রকৃতি সুরক্ষা মঞ্চের অবদানের ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
লিগ্যালি বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট -এর চতুর্থ সংশোধিত খসড়াটি ২৪ টি আর্টিকেল নিয়ে গঠিত। জনাব বড়ুয়া এই সংশোধিত খসড়ার সমস্যাগুলি এবং আমাদের মতামত সংযুক্ত করার অব্যাহত সুযোগ তুলে ধরেন। ব্যারিস্টার জ্যোতির্ময় বড়ুয়া অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার রক্ষায় একটি সংসদীয় ককাস গঠন, অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে একটি অবস্থানপত্র প্রণয়ন, আন্তঃদেশীয় অভ্যন্তরীণ বিরোধ নিষ্পত্তি ব্যবস্থা স্থাপনে বাধ্য করা, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য একটি ব্যবস্থা তৈরি করা এবং অভিবাসী শ্রমিকদের মানবাধিকার লঙ্ঘন সম্পর্কিত ইউনিভার্সাল পিরিয়ডিক রিভিউতে দেশভিত্তিক প্রতিবেদন জমা দেওয়ার আহ্বান জানান। কর্মী সরবরাহকারী এবং গ্রহণকারী দেশের মধ্যে তথ্যের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং এলবিআই প্রক্রিয়ায় অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য একটি দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক নেটওয়ার্ক প্রতিষ্ঠা করা।
সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয় বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন জনিত অভিবাসন, যার জন্য মূলত উন্নত দেশগুলোর দায়ী, এর জন্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ কখনোই যথেষ্ঠ নয়। কপ-২৭ এ অভিবাসীদের অধিকার রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অঙ্গীকারের কথা উল্লেখ করে তিনি লিগ্যালি বাইন্ডিং ইন্সট্রুমেন্ট কাঠামোর মধ্যে জলবায়ু ন্যায়বিচার নীতি অন্তর্ভুক্তির পক্ষে মত দেন।
সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী স্বেচ্ছায় অভিবাসন ও এ প্রক্রিয়ায় ন্যায্যতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তার মতে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর উচিত সম্মিলিতভাবে তাদের মজুরির মান বাড়ানোর চেষ্টা করা এবং সম্মিলিতভাবে চুক্তি নিয়ে আলোচনা করা। তিনি আরও উল্লেখ করেন, বাংলাদেশে বর্তমানে আইনের অভাব রয়েছে, যা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জনাব পাটোয়ারী অভিবাসীদের মানবাধিকার সংরক্ষণে আইওএম এবং আইএলওকে সাথে থাকতে আহ্বান জানান এবং বলেন অভিবাসীদের সম্পর্কে সম্মিলিত দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক নেটওয়ার্কের মধ্যে সক্ষমতা তৈরি করতে সাহায্য করা উচিত।
নেপালের সংসদ সদস্য সোবিতা গৌতম জলবায়ু অভিবাসন মোকাবেলা এবং খাদ্য নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করার ক্ষেত্রে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর সহযোগিতার ওপর গুরুত্বারোপ করেন।
সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে “ফোর্স ম্যালএডাপটেশন” সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেন, এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে আলোচনা করেন। তিনি মানব নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়া এবং এই বহুমুখী সমস্যা সমাধানে অন্যান্য দেশের সাথে সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার উপর জোর দেন।
অংশগ্রহণকারীরা সর্বসম্মতিক্রমে এই অঞ্চলের সংসদীয় সদস্যদের নেতৃত্বে অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকারের জন্য একটি দক্ষিণ এশীয় ফোরাম প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একমত হন। এই ফোরাম এলবিআই প্রক্রিয়ায় দক্ষিণ এশীয় দেশগুলির কণ্ঠকে প্রসারিত করবে এবং অভিবাসী শ্রমিকদের অধিকার সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলি সমাধান করে তাদের দরকষাকষির ক্ষমতা জোরদার করবে।