Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 7:29 pm

দক্ষ বাজারে দুর্বল শেয়ারের দর অযৌক্তিকভাবে বাড়ে না

প্রতি রবি থেকে বৃহস্পতিবার পুঁজিবাজারের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে এনটিভি ‘মার্কেট ওয়াচ’ অনুষ্ঠানটি সম্প্রচার করে। বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনায় তার গুরুত্বপূর্ণ অংশ নিয়ে শেয়ার বিজের নিয়মিত আয়োজন ‘এনটিভি মার্কেট ওয়াচ’ পাঠকের সামনে তুলে ধরা হলো:

উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে দেশের বর্তমান বাজার দক্ষ নয়। এটি একটি অদক্ষ বাজার। যদি দক্ষ বাজার হতো তাহলে দুর্বল শেয়ারের দর অযৌক্তিকভাবে বাড়তো না। দক্ষ বাজারের শেয়ারের প্রকৃত মূল্যকে খুব বেশি অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত করা যায় না। দেশের পুঁজিবাজার অনেকটা গুজবভিত্তিক। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। মো. ছায়েদুর রহমানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন অর্থনীতিবিদ ড. এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম এবং আইসিএমএবির সভাপতি মোহম্মদ সেলিম, এফসিএমএ।

এবি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, অর্থনীতির বর্তমান পরিস্থিতি আমার কাছে মোটামুটি সন্তোষজনক মনে হয়। যদিও কিছু চ্যালেঞ্জ বা উদ্বেগের বিষয় আছে। যদি সার্বিক অর্থনীতিকে বিবেচনায় নেই তাহলে সম্প্রতি কিছুটা উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছিল। আর এর পেছনে দুটি মূল কারণ ছিল। একটি হচ্ছে, আমাদের রেমিট্যান্স প্রবাহে ধস নেমেছিল। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি ছিল প্রায় ১৭ শতাংশের মতো এবং রফতানি প্রবৃদ্ধিও ছিল খুবই অল্প বা দুই শতাংশের নিচে। সম্প্রতি এ দুটি ক্ষেত্রেই বেশ ঊর্ধ্বগতি দেখা যাচ্ছে। গত অর্থবছরে আর একটি বড় সমস্যা ছিল প্রাকৃতিক দুর্যোগ। যার কারণে ফসলের অনেক ক্ষতি হয়েছিল। ফলে খাদ্য আমদানি বেড়ে গিয়েছিল। বর্তমানে এ পরিস্থিতি থেকে কিছুটা উন্নীত হয়েছে তবে কিছু চ্যালেঞ্জ আছে। বৈশ্বিক প্রেক্ষাপট  খুব একটা সন্তোষজনক নয়। যদিও দেখা যাচ্ছে উন্নত দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি কিছুটা বাড়ছে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্রেক্সিটের পরে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং ব্রিটেনের সঙ্গে দেশের বর্তমান বাণিজ্যে ডিউটি ফ্রি, কোটা ফ্রি আমদানির যে সুবিধা আছে, বিশেষ করে ব্রিটেনে বিদ্যমান থাকবে কিনাÑতা একটি চিন্তার বিষয়। সম্প্রতি আমেরিকার বাজারে আমাদের প্রবৃদ্ধির হার বেশ কমে গেছে। সেখানে ট্রাম্পের যে বাণিজ্যনীতি সেটি আমাদের দেশের জন্য বাণিজ্যবান্ধব নয়। তাছাড়া এটি নির্বাচনের বছর। আর প্রত্যেক নির্বাচনের বছরেই সাধারণত দেখা যায় অর্থনীতির প্রবৃদ্ধি কিছুটা ধীরগতির হয়। তার কারণ বিনিয়োগকারীরা এ সময় এক ধরনের অনিশ্চয়তায় থাকে। এমনিতেই জাতীয় উৎপাদনের আনুপাতিক হার হিসেবে দেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গত ৮-৯ বছর ধরে প্রায় একই পর্যায়ে আছে। এছাড়া সম্প্রতি পুঁজিবাজারে বড় ধরনের পতন হয়েছিল এবং সেটি আবার কিছুটা ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। গত কয়েকদিন পুঁজিবাজারের সূচকে ইতিবাচক ধারা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। অন্তত এই মুহূর্তে পুঁজিবাজারে বড় মাত্রায় উদ্বেগ সৃষ্টিকারী কোনো ইঙ্গিত নেই। তাই বিনিয়োগকারীরা যদি এখন একটু বাছবিচার করে বিনিয়োগ করেন তাহলে বাজার আরও ভালো হবে।

মোহম্মদ সেলিম বলেন, উন্নত দেশগুলোর পুঁজিবাজারের সঙ্গে তুলনা করলে দেখা যাবে দেশের বর্তমান বাজার দক্ষ নয়। এটি একটি অদক্ষ বাজার। যদি দক্ষ বাজার হতো তাহলে খারাপ শেয়ারের দর অযৌক্তিকভাবে বাড়তো না। দক্ষ বাজারের শেয়ারের প্রকৃত মূল্যকে খুব বেশি অতিমূল্যায়িত বা অবমূল্যায়িত করা যায় না। দেশের পুঁজিবাজার অনেকটা গুজবভিত্তিক। কিছু ট্রেডার কাল্পনিকভাবে এই গুজবগুলো তৈরি করে। যার ফলে খারাপ শেয়ারগুলোর দর ঊর্ধ্বগামী হতে দেখা যায় অনেক সময়। এ ক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের আরও সচেতন হতে হবে বলে মনে করি। শুধু গুজবের ওপর ভিত্তি করে শেয়ারে বিনিয়োগ করা থেকে দূরে থাকতে হবে। বিনিয়োগের আগে যাচাই-বাছাই করে কোম্পানির ইতিহাস দেখে বিনিয়োগ করলে মুনাফা করা সম্ভব বলে মনে করি।

 

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম