শেয়ারবাজারে দক্ষ বিনিয়োগকারী গড়ে তোলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ক্যাপিটাল মার্কেট (বিআইসিএম)। গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত এ-সংক্রান্ত খবর পাঠক তথা বিনিয়োগকারীদের আশাবাদী করবে বলেই আমরা মনে করি। এটি নবীন বিনিয়োগকারীকে শেয়ার ব্যবসায় দক্ষ হয়ে ওঠার পাশাপাশি পুঁজিবাজার-সম্পর্কিত জ্ঞান বৃদ্ধিতে সহায়তা জোগাবে।
শেয়ারবাজারে উত্থান-পতন থাকবেই। পতনে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক বিনিয়োগকারী। সর্বস্বান্ত হওয়ারও নজির রয়েছে। এর প্রধান কারণ যথেষ্ট না জেনেবুঝে বিনিয়োগ করা। শেয়ারবাজারে ব্যবসার জন্য একসঙ্গে অনেক কিছু বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑকোম্পানির আর্থিক অবস্থা বিশ্লেষণ, তার আর্থিক বিবরণী, নিরাপত্তার দিক বিশ্লেষণ, পোর্টফোলিও ম্যানেজমেন্ট, ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রভৃতি। শেয়ার বিজকে বিআইসিএমের নির্বাহী প্রেসিডেন্ট বলেছেন, বিনিয়োগকারীদের জন্য অপরিহার্য এ বিষয়গুলোই জানতে পারবেন প্রশিক্ষণার্থীরা।
এখন পর্যন্ত আমাদের শেয়ারবাজারে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীই ডে ট্রেডার। তাদের উদ্বুদ্ধ করা দরকার, যাতে দীর্ঘমেয়াদি না হলেও অন্তত মধ্যমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে যেন বাজারে বিনিয়োগ করেন। গুজবে কান দেবেন না, হুজুগে মেতে উঠবেন না, দ্রæত মুনাফার বিষয়ে উদগ্রীব থাকবেন নাÑএ ধরনের বিনিয়োগকারীই শেয়ারবাজারের প্রাণ। আমাদের শেয়ারবাজারে তাদের আরও বেশি করে প্রয়োজন।
আর সব ব্যবসার মতোই শেয়ারবাজারেও ঝুঁকি রয়েছে। এক অর্থে এখানে ঝুঁকি বরং বেশি। ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা তাই অধিক জরুরি এক্ষেত্রে। দক্ষ বিনিয়োগকারীরা এটি করেই থাকেন। শেয়ারবাজার সাময়িকভাবে বিপর্যস্ত হলেও তারা বাজার থেকে হারিয়ে যান না। তারা জানেন, বাজার আবারও ঘুরে দাঁড়াবে।
দক্ষ বিনিয়োগকারী বাজারে অধিক সংখ্যায় এবং সক্রিয় থাকলে সতর্ক থাকে কোম্পানিগুলোও। বিনিয়োগকারীরা সচেতন থাকলে যেনতেনভাবে তাদের আকৃষ্ট করার প্রবণতাও কমে আসে। যথাসম্ভব নির্ভরযোগ্য আর্থিক বিবরণী দেওয়ার চেষ্টা থাকে কোম্পানিগুলোর। এতে বাজারের সঙ্গে সঙ্গে কোম্পানিতেও স্বচ্ছতা বাড়ার সুযোগ সৃষ্টি হয়। বাজারের আয়তন বাড়লে পুঁজি গঠনের সুযোগ বাড়বে। তখন উদ্যোক্তারা ব্যাংকঋণ না নিয়ে শেয়ারবাজার থেকে অর্থ সংগ্রহে আগ্রহী হবেন।
আশার কথা, শেয়ারবাজারকে গতিশীল ও চাঙা করতে এর মধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা নিয়েছে বিএসইসি। বিনিয়োগকারীদের প্রশিক্ষিত করে তোলারও উদ্যোগ নিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। দেশে কর্মরত বহুজাতিক কোম্পানিগুলোকে বাজারে আনার চেষ্টা রয়েছে। এর পাশাপাশি বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিনিয়োগ শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে সিকিউরিটিজ হাউজগুলো।
শেয়ার বিজও এ ক্ষেত্রে কিছু ভ‚মিকা রাখতে সচেষ্ট। প্রতিদিনই বিশেষজ্ঞ মতসহ প্রতিবেদন প্রকাশ, কোম্পানির সমস্যা ও সম্ভাবনাসহ ভেতরের খবর তুলে ধরছে এ পত্রিকা। বিনিয়োগকারীদের সচেতন করতে সীমিত পরিসরে প্রশিক্ষণ কোর্স চালু করেছে।
বিআইসিএমের এক বছরমেয়াদি পোস্ট-গ্র্যাজুয়েট ডিপ্লোমা ইন ক্যাপিটাল মার্কেট (পিজিডিসিএম) কোর্সে ক্লাস নেবেন এ খাতের অভিজ্ঞ পেশাজীবী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ইনস্টিটিউটের অনুষদ সদস্যরা। এই পথ ধরে অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোও এমন প্রশিক্ষণের আয়োজন করতে পারে।
বিনিয়োগকারী প্রশিক্ষিত হলে বাজারে তাদের অংশগ্রহণের মান বাড়বে, বাড়বে কোম্পানিগুলোর স্বচ্ছতাও। বিনিয়োগকারী সচেতন হলে শেয়ারবাজার নিয়ে ব্যক্তি বা গোষ্ঠীবিশেষ খেলায় মেতে উঠতে পারবে না। প্রশিক্ষিত বিনিয়োগকারীরা সক্রিয় থাকলে শেয়ারবাজারে ধস নামার ঘটনাও ঘটবে কম। আত্মপ্রত্যয়ের সঙ্গে ব্যবসা অব্যাহত রাখতে পারবেন তারা।
Add Comment