সারাদেশে ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছে সরকার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলে কর্মচাঞ্চল্য শুরু হয়েছে। অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর মধ্যে সর্ববৃহৎ চট্টগ্রামের মীরেরসরাই অর্থনৈতিক অঞ্চল। এ অর্থনৈতিক অঞ্চলটি পুরোদমে চালু হলে সেখানে কয়েক লাখ শ্রমিকের কর্মসংস্থান হবে। কিন্তু অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোয় যে ধরনের শ্রমশক্তি প্রয়োজন, সেই মানের জনশক্তির বেশ ঘাটতি রয়েছে দেশে। কাজেই দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির বিষয়ে সরকারকে অনেক বেশি গুরুত্ব দেয়া উচিত বলে মনে করি।
দৈনিক শেয়ার বিজে গতকাল ‘দেশে ১০০ শিল্প পার্ক হচ্ছে, প্রয়োজন লাখ লাখ দক্ষ শ্রমিক’ শীর্ষক একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদনের তথ্য মতে, দেশে তৈরি হওয়া নতুন নতুন শিল্প কারখানার জন্য বিপুলসংখ্যক দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন বলে জানিয়েছেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব। কিন্তু প্রয়োজন অনুপাতে দেশে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হচ্ছে না। এ জন্য দেশে কর্মসংস্থানের সুযোগের বিষয়ে তিনি ব্যাপক মাত্রায় প্রচারণা চালানোর বিষয়ে তাগিদ দেন। তবে কেবল প্রচারণা চালিয়েই এ সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন লাগসই উদ্যোগ।
এ কথা অনস্বীকার্য যে, আমাদের প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা শ্রমবাজারের প্রয়োজনীয়তার নিরিখে সাজানো হয়নি। ফলে বিপুলসংখ্যক শিক্ষিত জনশক্তি শ্রমবাজারের জন্য প্রয়োজনীয় দক্ষতা অর্জন করতে না পারায় বেকার বসে থাকছে। দেশে এখনও পর্যন্ত সর্ববৃহৎ শ্রমবাজার তৈরি পোশাকশিল্পকেন্দ্রিক। কিন্তু এ শিল্পে মধ্যম পর্যায়ের ব্যবস্থাপনায় নেতৃত্ব দেয়ার উপযোগী জনশক্তি এখনও দেশে তৈরি হয়নি। ফলে এ খাতের বড় উদ্যোক্তারা ভারত ও শ্রীলঙ্কার মতো দেশ থেকে দক্ষ জনশক্তি নিয়ে আসছেন। আর এসব বাইরের জনশক্তি মোটা অঙ্কের বেতনে কাজ করার সুযোগ পাচ্ছে বাংলাদেশে। অথচ প্রায় অর্ধ শতাব্দীকাল পেরিয়ে গেলেও দেশের তৈরি পোশাক খাত এখনও ‘মিড লেভেল’ ম্যানেজমেন্ট পর্যায়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে পারেনি।
কেবল তৈরি পোশাক খাতই নয়, দেশে উদীয়মান আরও অনেক শিল্প খাতেই দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়নি। এমনকি দেশে কাঁচা চামড়ার প্রাচুর্য থাকলেও দক্ষ ব্যবস্থাপনার অভাবে এ খাত বিশ্বদরবারে স্থান করে নিতে পারছে না। তৈরি পোশাক খাত রপ্তানিতে বড় অবদান রাখলেও এ খাতের কাঁচামাল বহুলাংশে বিদেশ থেকে আমদানি করতে হয়। চামড়ার ক্ষেত্রে সেই সংকট নেই। দেশেই প্রচুর পরিমাণ কাঁচা চামড়ার সরবরাহ রয়েছে। তা সত্ত্বেও এ খাত শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড়াতে পারছে না।
উৎপাদনশীল খাতে এভাবে পিছিয়ে থাকার কারণ অনুসন্ধানের মাধ্যমে ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া উচিত বলে মনে করি। এ ক্ষেত্রে শিল্পের উদ্যোক্তাদের এগিয়ে আসা উচিত। আমাদের দেশে শিল্পমালিকরা সবসময় দক্ষ জনশক্তি খোঁজেন। কিন্তু সাধারণ কর্মী নিয়োগ দিয়ে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে তাদের দক্ষ করে গড়ে তোলার বিষয়ে তেমন আগ্রহ পরিলক্ষিত হয় না। একটি উদীয়মান অর্থনীতির দেশ হিসেবে বাংলাদেশে প্রতি বছর যেসংখ্যক দক্ষ জনশক্তি প্রয়োজন, কেবল সরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তার সরবরাহ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। তাই এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতকে এগিয়ে আসতে হবে। সংশ্লিষ্ট মহল এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেই বিশ্বাস।