Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 3:45 am

দখল হওয়া ব্যাংক ফিরে পেতে বিক্ষোভ

নিজস্ব প্রতিবেদক: দখল হওয়া ব্যাংকের মালিকানা পুনরুদ্ধার, অর্থপাচারে সহায়তাকারীদের অপসারণ ও অবৈধ নিয়োগ বাতিল, চাকরিতে পুনর্বহালসহ বিভিন্ন দাবিতে ব্যাংকে ব্যাংকে বিক্ষোভ চলছে। ব্যাংক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংকে বুধবার নজিরবিহীন বিক্ষোভের পর গতকাল বৃহস্পতিবার কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে অভিযোগ করার মতো জায়গা পাচ্ছে না ব্যাংকগুলো। বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে এমন খবর পাওয়া গেছে।

জানা যায়, আগের মালিকানা ফিরে পাওয়ার জন্য গতকাল বেসরকারি খাতের আইএফআইসি, এসআইবিএল, ওয়ান, ইউসিবি, বাংলাদেশ কমার্সসহ কয়েকটি ব্যাংকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে। বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংকে কয়েক দিন ধরে বিক্ষোভ চলছে। এছাড়া রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা ও অগ্রণী ব্যাংকে বুধবার বৈষম্যের শিকার কর্মকর্তারা বিক্ষোভ করেন।
বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংককে (ইউসিবি) সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার পরিবারের নিয়ন্ত্রণমুক্ত করার দাবিতে আন্দোলন শুরু করেছেন ব্যাংকের দেড় শতাধিক শেয়ারধারী। গতকাল সকালে গুলশানে ইউসিবির প্রধান কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে তারা এই দাবি জানান। এ সময় তারা বিভিন্ন ফেস্টুন প্রদর্শন করে সাবেক ভূমিমন্ত্রীর ‘বিদেশে অর্থ পাচার’ ও ব্যাংকটির নানা অনিয়ম নিয়ে অভিযোগ উত্থাপন করেন।
ইউসিবির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ছিলেন সাবেক ভূমিমন্ত্রীর বাবা চট্টগ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা প্রয়াত আখতারুজ্জামান চৌধুরী। শুরু থেকে ব্যাংকটির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন পারটেক্স গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান এমএ হাসেম। তারা বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৬ সাল পর্যন্ত উভয়ের পরিবারের সদস্যরাই ব্যাংকটিতে যুক্ত ছিলেন ও নেতৃত্ব দেন।
ব্যাংকের সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালে পারটেক্স গ্রুপের মালিক পরিবারের সদস্যদের ইউসিবি ছেড়ে যেতে বাধ্য করা হয়। ব্যাংকটির চেয়ারপারসনের দায়িত্ব নেন সাইফুজ্জামান চৌধুরীর স্ত্রী রুকমিলা জামান। তবে রুকমিলা জামান যুক্তরাজ্যে অবস্থান করায় ব্যাংকটি মূলত সাইফুজ্জামান চৌধুরী পরিচালনা করেন, এমনটাই জানিয়েছেন ব্যাংকটির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ ব্যাংকে গতকাল পাঠানো এক চিঠিতে ব্যাংকটির কিছু শেয়ারধারী জানিয়েছেন, রুকমিলা জামান ব্যাংকের চেয়ারপারসন হলেও সাইফুজ্জামান চৌধুরী কার্যত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন এবং তার ‘স্বেচ্ছাচারিতা ও লুটপাটের কারণে’ ব্যাংকটি আজ দেউলিয়া হওয়ার পথে। ওই চিঠিতে অভিযোগ করা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরীর যুক্তরাজ্যে এক হাজার ৮৮৮ কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে, যা এই ‘ব্যাংকের আমানতকারীদের টাকা লুট করে পরিশোধ করা হয়েছে।’ চিঠিতে আরও অভিযোগ করা হয়, ২০১৭ সাল থেকে ব্যাংকটিকে একটি পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ‘অবাধ লুটপাট, আর্থিক দুর্নীতি ও বিদেশে টাকা পাচার’ করা হয়েছে। ফলে ব্যাংকটিতে খেলাপি ঋণ বেড়েছে। ২০১৭ সালে ব্যাংকে খেলাপি ঋণ ছিল এক হাজার ৭৯২ কোটি টাকা, যা ২০২৩ সাল শেষে বেড়ে হয়েছে দুই হাজার ৭৮২ কোটি টাকা।

শেয়ারধারীদের চিঠিতে আরও বলা হয়, সাইফুজ্জামান চৌধুরী তার ক্ষমতা ব্যবহার করে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা উপেক্ষা করে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এজন্য ব্যাংকটির সম্পদের মান খুবই দুর্বল হয়ে পড়েছে। তা ছাড়া ব্যাংকটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের ফিরিয়ে আনা প্রয়োজন। তা না হলে এই ‘ব্যাংকের ওপর আমানতকারীদের আস্থা’ উঠে যেতে পারে। শেয়ারধারীরা পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে ‘পরিবারতন্ত্র ভেঙে’ দেয়ার দাবি জানান।

শেয়ারধারীদের অভিযোগ সম্পর্কে সাইফুজ্জামান চৌধুরী এখনও কোনো বক্তব্য দেননি। তবে গত বছর তার বিদেশে সম্পদের বিষয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। নির্বাচনী হলফনামায় বিদেশে সম্পদ থাকার কথা গোপন করার অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে। লন্ডনে ব্যবসা ও সম্পদ থাকার কথা এক সংবাদ সম্মেলনে স্বীকার করেন সাইফুজ্জামান চৌধুরী। তবে তার দাবি, বিদেশের সম্পদ করার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ থেকে তিনি কোনো টাকা নেননি। গতকাল যখন শেয়ারধারীরা ব্যাংকটির সামনে বিক্ষোভ করেন, তখন ইউসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরিফ কাদরী তাদের সঙ্গে কথা বলেন।
এদিকে গতকালও অফিসে আসেননি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার। তিনি কোথায় আছেন, তাও জানেন না কর্মকর্তারা। গত বুধবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চার ডেপুটি গভর্নর, বিএফআইইউ প্রধান ও নীতি উপদেষ্টাকে বের করে দেয়া হয়। তারা কেউ গতকাল আর অফিসে আসেননি। এতে করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতি গ্রহণেও অচলাবস্থা তৈরি হয়েছে। যদিও দৈনন্দিন কাজ অব্যাহত আছে।