Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 5:12 pm

দড়িতে বাঁধা ইতি মনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিল পুনাক

প্রতিনিধি, শেরপুর:অটিজম ও নিউরোলজিক্যাল ডিজিসে আক্রান্ত দড়িতে বাঁধা শিশু ইতি মনির চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছে শেরপুরের পুলিশ নারী কল্যাণ সমিতি (পুনাক)। গত ১৩ জুন দৈনিক শেয়ার বিজ পত্রিকায় ‘শেরপুরে দড়িতে বাঁধা ইতি মনির ভবিষ্যৎ!’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর ইতি মনি ও তার পরিবারের পাশে দাঁড়ায় পুনাক। এ বিষয়ে সমন্বয়ের জন্য দায়িত্ব দেয়া হয়েছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলা টিমকে। সংগঠনটির সাবেক সভাপতি নাঈমুর রহমান তালুকদার চিকিৎসার বিষয়টি গতকাল শনিবার গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন।

গত বৃহস্পতিবার সকালে ইতি মনিকে শেরপুর পুলিশ লাইন্স হাসপাতালে আনা হয়। এ সময় পুলিশ লাইন্সের বিশেষজ্ঞ ডা. বিকাশ ইতির প্রাথমিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ শেষে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজের শিশু বিকাশ কেন্দ্রে রেফার করেন। এ সময় ইতিকে দীর্ঘসময় থেরাপি দেয়ার কথাও জানিয়েছেন তিনি। নিয়মিত থেরাপি, পরিচর্যা ও উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে ইতিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলেও জানানো হয়েছে।

ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার সাধারণ সম্পাদক আনিকা তাসফিয়া বলেন, গণমাধ্যমে ইতি মনির বিষয়টি প্রকাশের পর শেরপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামান মহোদয় ও পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ ইতি মনির খোঁজ নিয়েছেন। শ্রীবরদী থানা পুলিশের একটি টিম ও ভলান্টিয়ার ফর বাংলাদেশ শেরপুর জেলার একটি টিম ইতি মনির বাড়িতে গিয়ে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করেছে। পরে পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ শিশু ইতি মনির পরিবারের সঙ্গে কথা বলে তার চিকিৎসার বিষয়ে আমাদের সমন্বয়ের জন্য বলেছেন।

ইতি মনি শেরপুরের শ্রীবরদী উপজেলার ভেলুয়া এলাকার ইব্রাহিম মিয়ার মেয়ে। জšে§র পর তিন বছর স্বাভাবিক থাকলেও পরে অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করে ইতি। এ সময় সে তার নিজের শরীরের মাংস কামড়িয়ে ক্ষত তৈরি করার পাশাপাশি পুকুর ও সড়ক ধরে হেঁটে চলে যাওয়া শুরু করত। বেশ কয়েকবার হারিয়ে যাওয়ার পর তাকে এখন বেঁধে রাখা হয় দড়ি দিয়ে। বর্তমানে তার শরীরের ভারসাম্য নেই বললেই চলে।

ইতির বাবা ইব্রাহিম মিয়া জীবিকার তাগিদে রাজধানী ঢাকায় কাজ করেন। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করিয়েও কোনো সমাধান না পেয়ে এখন দড়িতে বেঁধে রাখা হয় তাকে। অর্থাভাবে দুই বছর ধরে তার চিকিৎসাও বন্ধ রয়েছে।

সম্প্রতি দৈনিক শেয়ার বিজ-সহ বেশ কিছু গণমাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে শেরপুরের পুলিশ সুপার মো. কামরুজ্জামানের নজরে আসে। পরে পুনাকের পক্ষ থেকে ইতির চিকিৎসার দায়িত্ব নেয়া হয়। শেরপুরের পুনাক সভানেত্রী সানজিদা হক মৌ বলেন, অসচ্ছল ও নি¤œ আয়ের মানুষের চিকিৎসার দায়িত্ব পুনাক সবসময় নেয়। একজন শিশুকে এভাবে দড়িতে বেঁধে রাখা অমানবিক। এটি আমাদের নিজেদের জন্যও কষ্টের। একজন শিশুর চিকিৎসা করাতে পারলে আমাদের নিজেদেরও তৃপ্তি লাগবে। ইতি আবারও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসবে, এটাই আমাদের প্রত্যাশা।