Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 2:43 am

দণ্ড স্থগিত হলে জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেওয়া যাবে

নিজস্ব প্রতিবেদক: বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা কিংবা দণ্ড হাইকোর্টে স্থগিত হলে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন হাইকোর্ট। এই আদেশের ফলে সম্পদের গরমিল তথ্য দুদকে দেওয়া-সংক্রান্ত মামলায় দণ্ড স্থগিত চেয়ে করা আবেদনকারী সাবিরা সুলতানার নির্বাচনে প্রার্থী হতে কোনো বাধা নেই। সেইসঙ্গে এই আদেশের ফলে এখন থেকে হাইকোর্টে কারও দণ্ড স্থগিত করার পর প্রার্থীর নির্বাচন করতে আর কোনো বাধা নেই।
গতকাল যশোরের ঝিকরগাছা উপজেলার চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করে গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক বেঞ্চ এই আদেশ দেন। আদালতে সাবিরা সুলতানার পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। তার পক্ষে ছিলেন এজে মোহাম্মদ আলী, আমিনুল ইসলাম ও এসকে গোলাম রসুল। দুদকের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এবিএম বায়েজিদ। পরে আমিনুল ইসলাম জানান, সাবিরা সুলতানার দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন জানালে আপিল বিভাগ তা নিষ্পত্তি করতে হাইকোর্টের একক বেঞ্চে শুনানির জন্য পাঠান। শুনানি নিয়ে আদালত আদেশ দেন।
আদেশে ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২৬(১) ধারা এবং সংবিধানের ৬৬(২)(ঘ) অনুচ্ছেদ অনুসারে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করা হয়। এখন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে তার আর কোনো বাধা থাকল না। আদালত পর্যবেক্ষণ দিয়ে বলেছেন, কোনো ব্যক্তির দণ্ড আপিল বিভাগে চূড়ান্তভাবে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত তার সাজা বা দণ্ড চূড়ান্ত বলে বিবেচিত হবে না। তবে আপিল চলাকালে তার সাজা বা দণ্ড স্থগিত হলে তিনি নির্বাচনের জন্য অযোগ্য হবেন না। বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তির সাজা কিংবা দণ্ড স্থগিত করার ক্ষমতা হাইকোর্ট বিভাগের রয়েছে বলেও পর্যবেক্ষণে বলা হয়।
গতকালের আদেশের পর থেকে যারা নির্বাচনে অংশ নিতে চান তারা হাইকোর্টে সাজা বা দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করে নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে জানান অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। তবে এর আগে গত ২৮ নভেম্বর বিচারিক আদালতে কোনো ব্যক্তি দুই বছরের অধিক সাজাপ্রাপ্ত হলে তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না বলে হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ। এর ফলে বিচারিক আদালতের সাজার রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত করা হলে কিংবা আপিল চলাকালে কোনো ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে দণ্ড স্থগিত কিংবা বাতিল হলে ওই ব্যক্তির নির্বাচনে অংশ নিতে কোনো বাধা থাকবে না।
এর ফলে হাইকোর্টের দুটি পৃথক বেঞ্চ সাজা বা দণ্ড স্থগিত নিয়ে পৃথক পর্যবেক্ষণ দেওয়ায় নির্বাচন কমিশন কোন আদেশ অনুসরণ করবে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম বলেন, যাদের ক্ষেত্রে আদালত ইতোমধ্যে দণ্ড স্থগিত করেননি, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন না। তবে আজকের এই আদেশের পর যারা এই আদেশের আলোকে হাইকোর্টে দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন করবেন তারা নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন। তবে রায়কে সংবিধান-পরিপন্থি বলে এর বিরুদ্ধে আপিলের ঘোষণা দিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষ। গতকাল সাংবাদিকদের এ কথা বলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে মিথ্যা তথ্য ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত অবৈধভাবে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা মামলায় যশোর জেলার ঝিকরগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান সাবিরা সুলতানাকে গত ১২ জুলাই ঢাকার বিশেষ আদালতের বিচারক শহিদুল ইসলাম দুর্নীতি দমন আইন ২০০৪ সালের ২৬(২) ধারায় তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ডাদেশ দেন। একইসঙ্গে দুটি ধারায় পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড ও অনাদায়ে আরও তিন মাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দেন আদালত। পাশাপাশি পৃথক দুই ধারায় তাকে দেওয়া তিন বছরের সাজা একসঙ্গে চলবে বলেও আদেশ দেন আদালত। রায়ে সাবিরা সুলতানার এক কোটি ৭৮ হাজার ১৩৫ টাকা রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করারও আদেশ দেওয়া হয়।
এরপর গত ১৭ জুলাই ঢাকার বিশেষ জজ-৭-এর বিচারক মো. শহিদুল ইসলামের আদালতে আত্মসমর্পণ করে আপিলের শর্তে জামিনের আবেদন করেন তিনি। আদালত শুনানি শেষে জামিনের আবেদন নাকচ করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর এ মামলায় গত ৬ আগস্ট তিনি হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন।
পরে আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে সাবিরা সুলতানা তার সাজা ও দণ্ড স্থগিত চেয়ে আবেদন জানালে তার শুনানি গ্রহণে অপারগতা প্রকাশ করেন হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এরপর নিয়ম অনুসারে মামলাটি শুনানির জন্য প্রধান বিচারপতি মামলাটি বিচারপতি মোহাম্মদ রইচ উদ্দিনের একক হাইকোর্ট বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন, যার ধারাবাহিকতায় এ মামলার শুনানি নিয়ে সাবিরা সুলতানার সাজা ও দণ্ড স্থগিত করা হয় এবং একই সঙ্গে সাজা বা দণ্ড স্থগিত করলে বিচারিক আদালতে দণ্ডিত ব্যক্তি নির্বাচনে অংশ নিতে পারবেন বলে পর্যবেক্ষণ দেন হাইকোর্ট।