দরপতনের মধ্যেও ক্রয় চাপে বাড়ল সূচক ও লেনদেন

মো. আসাদুজ্জামান নূর: সপ্তাহের শেষ কার্যদিবস বৃহস্পতিবারেও দেশের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা শেয়ার বিক্রির চেয়ে কেনার প্রতি বেশি আগ্রহী ছিলেন। বাজারে বিক্রেতাদের চেয়ে ক্রেতারা বেশি সক্রিয় ছিলেন। ফলে সৃষ্ট ‘ক্রয় চাপের’ প্রভাবে সূচক ও লেনদেন বৃদ্ধি পায়। এর মধ্য দিয়ে তৃতীয় দিনের মতো ইতিবাচক ধারায় লেনদেন হয় ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই)। তবে দরপতন ঘটেছে লেনদেন হওয়া বেশিরভাগ কোম্পানির।

পুঁজিবাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল চাহিদার শীর্ষে ছিল টেলিযোগাযোগ ও বিবিধ খাত। এ দুই খাতের শেয়ার কেনেন বিনিয়োগকারীরা। অন্যদিকে আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বস্ত্র খাতের শেয়ার ছেড়ে দেয়ায় এ দুই খাতে বিক্রয় চাপ দেখা গেছে। যদিও আগের কার্যদিবসে বস্ত্র খাতের শেয়ার চাহিদা বেশি ছিল।

এছাড়া ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ার কেনায় বেশি আগ্রহী ছিলেন বিনিয়োগকারীরা। এর বিপরীতে ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ার বিক্রি করতে দেখা গেছে। ফলে ‘বি’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ‘ক্রয় চাপ’ ও ‘জেড’ ক্যাটেগরির শেয়ারে ‘বিক্রয় চাপ’ লক্ষ করা গেছে।

গতকাল আর্থিক খাতে বাজার মূলধন শূন্য দশমিক ১৪৫ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। টানা তিন দিনের উত্থানের সঙ্গে শেয়ারবাজারে ছন্দ ফিরিয়ে এনেছে লেনদেন। সূচকের মতো টাকার অঙ্কে লেনদেনও আগের দিনের তুলনায় বেড়েছে, লেনদেন হয়েছে চলতি মাসের মধ্যে সর্বোচ্চ। গতকাল ডিএসইতে এক হাজার ৫০৬ কোটি ২৩ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল এক হাজার ১৬৩ কোটি ৭৮ লাখ টাকার।

গতকাল লেনদেনে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখে বিবিধ খাত। এদিন লেনদেন হয় ৩৫১ কোটি ৯০ লাখ টাকা। ২৩ দশমিক ৯৪ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের আটটি কোম্পানির দর বাড়ার বিপরীতে কমেছে পাঁচটির। আগের কার্যদিবসে লেনদেন অনেক কম হয়েছিল। বুধবার লেনদেন ছিল ১৫৪ কোটি ৭৫ লাখ টাকা।

দ্বিতীয় সর্বোচ্চ অবদান রাখে বস্ত্র খাত। ১৯১ কোটি ১০ লাখ টাকা লেনদেনের মাধ্যমে এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ১৩ শতাংশ। এ খাতের সর্বোচ্চ ৪৭টি কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে। বেড়েছে পাঁচটির ও অপরিবর্তিত ছিল ছয়টির। আগের কার্যদিবসে এ খাতের লেনদেন কম হওয়ায় অবদান ছিল ১১ দশমিক ২৩ শতাংশ।

১৭৭ কোটি ৭০ লাখ টাকা লেনদেনে হওয়া ব্যাংক খাত ছিল তৃতীয় অবস্থানে। এ খাতের সবচেয়ে বেশিসংখ্যক ১৬টি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ার বিপরীতে কমেছে সাতটির ও অপরিবর্তিত ছিল ৯টির। গতকাল ১২ দশমিক ৯ শতাংশ অবদান রাখলেও আগের কার্যদিবসে এর অবদান ছিল মাত্র পাঁচ দশমিক ৩৭ শতাংশ।

চতুর্থ অবস্থানে ছিল ওষুধ ও রসায়ন খাত। এ খাতে গতকাল লেনদেন হয় ১৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা। ১১ দশমিক ০৪ শতাংশ অবদান রাখা এ খাতের সিংহভাগ কোম্পানির শেয়ারদর হ্রাস পেয়েছে। ১৯টি কোম্পানির শেয়ারদর কমার বিপরীতে বেড়েছে ৯টির ও অপরিবর্তিত ছিল মাত্র একটির। আগের কার্যদিবসে লেনদেন কিছুটা বেশি হওয়ায় এ খাতের অবদান ছিল ১১ দশমিক ২৯ শতাংশ।

পঞ্চম অবস্থানে উঠে আসে আইটি খাত। গতকাল এ খাতে লেনদেন হয় ৯৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। লেনদেন আগের দিনের চেয়ে বেশি হওয়ায় গতকাল এ খাতের অবদান দাঁড়ায় ছয় দশমিক ৭০ শতাংশ হয়, যা আগের দিন ছিল এক দশমিক ৭৫ শতাংশ। গতকাল এ খাতের পাঁচটি কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ে ও ছয়টির হ্রাস পেতে দেখা গেছে।

এছাড়া গতকালের লেনদেনে প্রকৌশল খাত পাঁচ দশমিক ৯০ শতাংশ, আর্থিক প্রতিষ্ঠান তিন দশমিক ৮৭ শতাংশ, জ্বালানি তিন দশমিক ৫৪ শতাংশ ও সেবা খাত তিন দশমিক ৩১ শতাংশ অবদান রাখে।

গতকাল ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশের (আইসিবি) ও লাফার্জ হোলসিমের সঙ্গে যেন বেক্সিমকো-গ্রামীণফোনের যুদ্ধ চলেছে। আইসিবির শেয়ারদর সূচক টেনে নামাতে চাইলেও বেক্সিমকো-গ্রামীণফোনের চেষ্টা সেটি হতে দেয়নি। সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ১৩ পয়েন্ট। এর আগের দুই দিনে সূচকটিতে যোগ হয়েছিল ১৮২ পয়েন্ট। বুধবার এক দিনেই বেড়েছে ১১৪ পয়েন্ট। বর্তমানে সূচকটি ছয় হাজার ৯৯৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে।

অপর দুই সূচকের মধ্যে বাছাই করা কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএস৩০ এদিন ২০ পয়েন্ট বেড়েছে। সূচক অবস্থান করছে দুই হাজার ৬৮০ পয়েন্টে। তবে শরিয়াহ্ভিত্তিক কোম্পানিগুলো নিয়ে গঠিত ডিএসইএস এক পয়েন্ট কমে এক হাজার ৪৭৭ পয়েন্টে স্থির হতে দেখা গেছে।

সূচকের টানা তৃতীয় দিনের উত্থানে বড় অবদান ছিল বেক্সিমকো ও গ্রামীণফোনের শেয়ারের। বেক্সিমকোর কারণে সূচকে যোগ হয়েছে ২২৪ পয়েন্ট। আর গ্রামীণফোনের শেয়ার যোগ করেছে আরও ২১২ পয়েন্ট।

সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে ডিএসইতে ৩৭৩টি কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়। এর মধ্যে দর বেড়েছে ১১৫টির, কমেছে ২০৮টির ও ৫০টি কোম্পানির শেয়ারদর অপরিবর্তিত ছিল।

শতাধিক কোম্পানির দরবৃদ্ধির দিনে তিনটির শেয়ারদর যতটুকু বাড়া সম্ভব ততটুকু বেড়েছে। গতকাল ব্র্যাক ব্যাংকের শেয়ারদর বেড়েছে ৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ। কোম্পানিটি ডিএসইর টপটেন গেইনার তালিকার শীর্ষে ছিল। বেশিরভাগ কোম্পানির দরপতনের দিনে সবচেয়ে বেশি ১৩ দশমিক ৮২ শতাংশ শেয়ারদর কমেছে আলিফ ম্যানুফ্যাকচারিংয়ের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০