Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 8:45 pm

দরপতনে বিএসইসির কোনো নির্দেশনা কাজে আসছে না

নিজস্ব প্রতিবেদক: টানা দরপতনে হতাশা ও উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন বিনিয়োগকারীরা। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির কোনো দিকনির্দেশনা কাজে আসছে না। পতনমুখী পুঁজিবাজারকে টেনে তুলতে দেয়া একগুচ্ছ সিদ্ধান্তও বাজারে আস্থা ফেরাতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে অর্থমন্ত্রীর বৈঠক ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নানা ঘোষণায়ও বাজার পতন ঠেকানো যায়নি।

গত মার্চে পুঁজিবাজারে অব্যাহত দরপতন ঠেকাতে নতুন করে সার্কিট ব্রেকারে পরিবর্তন আনে বিএসইসি। নতুন নিয়ম অনুযায়ী, শেয়ারদর বাড়তে পারবে ১০ শতাংশ। আর সর্বোচ্চ শেয়ারদর কমতে পারবে দুই শতাংশ। এরপর পুঁজিবাজার স্থিতিশীল ফান্ড থেকে ১০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের জন্য আইসিবিকে নির্দেশ দেয়া হয়।

সর্বশেষ পুঁজিবাজারে তারল্য প্রবাহ ধরে রাখতে মার্জিন ঋণ দেয়ার ক্ষেত্রে আরও ছাড় দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। এখন থেকে সূচক যা-ই থাকুক না কেন পিই রেশিও ৪০ পর্যন্ত যেকোনো শেয়ারে ১:১ অনুপাতে ঋণ সুবিধা পাবেন বিনিয়োগকারীরা। অর্থাৎ একজন বিনিয়োগকারীর যত টাকার বিনিয়োগ রয়েছে, তার শতভাগ অর্থ তিনি মার্জিন ঋণ হিসাবে পাবেন।

গতকাল অর্থমন্ত্রীর দিকনির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে পুঁজিবাজারে এখন পর্যন্ত কোনো সুবাতাস পরিলক্ষিত হয়নি। বিনিয়োগকারীরাও নতুন আশায় বুক বাঁধতে শুরু করেছিলেন। তবে সপ্তাহের প্রথম দিনই পুঁজিবাজারে অশনিসংকেত দেখা গেছে। গতকাল ডিএসইসির সূচকের পতন হয় ৫০ পয়েন্টের বেশি।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার টেনে তুলতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা নানা পদক্ষেপ নিলেও পুঁজিবাজারে কিছু কারসাজি চক্র এখনও সক্রিয়। তাদের কারসাজিতে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রয় চাপের কারণে বাজার ইতিবাচক প্রবণতায় ফিরতে পারছে না।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, কয়েকজন বড় কারসাজি চক্রের বিরুদ্ধে নিয়ন্ত্রক সংস্থার আইওয়াশের কারণে বাজারে এমন পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, সাফকো স্পিনিং ও ডেল্টা লাইফের মতো কয়েকটি আলোচিত শেয়ারের কারসাজির বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই হঠাৎ তদন্ত শুরু করেছে। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও ডিএসই এক বছর আগে ঘটে যাওয়া কারসাজি টের পেয়েছে এক বছর পর। বাজার থেকে কারসাজিকারীরা শত কোটি টাকা লুট করে নিরাপদে শেয়ারগুলো থেকে সটকে পড়েছে। এখন শেয়ারগুলোর দর যখন আগের মতো তলানিতে এসে ঠেকেছে, তখনই বিএসইসি ও ডিএসই নড়েচড়ে বসেছে। যখন কারসাজি করেছিল তখনও সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বলির পাঁঠা হয়েছে। এখন শেয়ারগুলোর দর তলানিতে এসে ঠেকেছে, এখনও সাধারণ বিনিয়োগকারীরাই বলির পাঁঠা হচ্ছেন।

তারা বলছেন, কয়েক দিন ধরে অভিযুক্ত বড় বিনিয়োগকারীরা বিভিন্ন পোর্টফোলিও থেকে অনবরত বিক্রয় চাপ দিচ্ছেন, যে কারণে বাজার উঠতে পারছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ও সরকারের ভালো উদ্যোগও বিফল হয়ে পড়ছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থা যদি সত্যি কারসাজিকারীদের শাস্তি দিতে চায়, তাহলে তাদের লেনদেনও নিয়ন্ত্রণ করত, কিন্তু তারা তা করছে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থ্ াজানে, কয়েক দিন ধরে কোন ব্যক্তিরা বিক্রয় চাপ দিয়ে বাজারের পতন ঘটাচ্ছে। তাদের পোর্টফোলিওগুলোর শেয়ার বিক্রি নিয়ন্ত্রণ করলে বাজার এভাবে অস্থির হতো না বলে বিনিয়োগকারীরা আক্ষেপ করেন।

গতকাল মঙ্গলবার দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইসির সূচক কমেছে ৫০ পয়েন্টের বেশি। ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স ৫০দশমিক ০৮ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭৯ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ৬ হাজার ২১১ দশমিক ৪৬ পয়েন্টে। ডিএসইর অন্য সূচকগুলোর মধ্যে শরিয়াহ্ সূচক ৯ দশমিক ৭০ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৭০ শতাংশ এবং ডিএসই-৩০ সূচক ১৪ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট বা শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে যথাক্রমে এক হাজার ৩৬৭ দশমিক ২৮ পয়েন্টে এবং দুই হাজার ২৯৫ দশমিক ০৫ পয়েন্টে।

ডিএসইতে গতকাল টাকার পরিমাণে লেনদেন হয়েছে ৬৬০ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, যা আগের কার্যদিবস থেকে এক কোটি ৭৬ লাখ টাকার বেশি। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয়েছিল ৬৫৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। ডিএসইতে গতকাল ৩৭৬টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ৫৫টির বা ১৪ দশমিক ৬৩ শতাংশের শেয়ার ও ইউনিট দর বেড়েছে। দর কমেছে ২৭৮টির বা ৭৩ দশমিক ৯৪ শতাংশের এবং ৪৩টির বা ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট দর অপরিবর্তিত রয়েছে।

অন্য পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক সূচক সিএএসপিআই এদিন ১২৯ দশমিক ১০ পয়েন্ট বা ০৭ দশমিক শূন্য শতাংশ কমে দাঁড়িয়েছে ১৮ হাজার ২৭০ দশমিক ৯০ পয়েন্টে। সিএসইতে হাত বদল হওয়া ২৮১টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে শেয়ারদর বেড়েছে ৭৬টির, কমেছে ১৭২টির ও অপরিবর্তিত রয়েছে ৩৩টির দর। গতকাল সিএসইতে ১৮ কোটি ৭০ লাখ টাকার শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন হয়েছে।