বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের নিম্নসীমায় অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর চাকরি নিয়োগ এবং ব্যবসায় উন্নয়ন সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে যৌথভাবে উদ্যোগ নিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ও সাজিদা ফাউন্ডেশন।
এই উদ্যোগের প্রথম ধাপে কোভিড-১৯ এর প্রভাবে জীবিকা হারানো ঢাকা, চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরের ৩০০ সুবিধাবঞ্চিতদের সহায়তা করবে প্রতিষ্ঠান দুটি।
সাজিদা ফাউন্ডেশনের একটি সাম্প্রতিক জরিপ থেকে জানা যায়, শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যসীমার নিম্নে অবস্থানকারী জনগোষ্ঠীর ৭৭.৫ শতাংশ মানুষ কোভিড-১৯ মহামারি প্রভাবে চাকরি হারিয়ে অথবা খুবই কম বেতনে চাকরি করে টিকে থাকার জন্য প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এদের মধ্যে ৪১.৯ শতাংশ মানুষ এতোই দরিদ্র যে তারা করোনা আক্রান্ত হলে সে চিকিত্সার খরচ বহন করতে সক্ষম না। নতুন এই উদ্যোগের মাধ্যমে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড উদ্যোক্তা, কর্মসংস্থান এবং মহামারী দ্বারা অসমনুপাতিকভাবে প্রভাবিত দুর্বল সম্প্রদায়ের জন্য রিস্কিলিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকটি ইউসিইপি ও ব্র্যাক-এর সহায়তায় ১৫০০ জনেরও বেশি মানুষদের উন্নয়ন সাধনে এরূপ অবদান রেখেছে।
স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ-এর সিইও নাসের এজাজ বিজয় বলেন, ‘কোভিড-১৯ মহামারির সাথে চূড়ান্ত লড়াইটা মূলত আমাদের তৃণমূল সম্প্রদায়কেই লড়তে হয়। বিভিন্ন সাস্থ্য সমস্যার ভোগান্তির পাশাপাশি, এই মহামারী অর্থনৈতিকভাবে দুর্বলদের জন্য জীবিকার ধরণকে নতুন আকার দিচ্ছে। যার দরুন অনেকেই অর্থনৈতিক ভাবে পুনর্বাসিত হতে পারছেন না। এসকল জনগোষ্ঠীর উন্নয়ন আমদের পাশে থাকার জন্য আমি সাজিদা ফাউন্ডেশনকে ধন্যবাদ জানাতে চাই। জাতি গঠনের নিরন্তর প্রচেষ্টা আমাদের পক্ষ থেকে সবসময় অব্যাহত থাকবে। এই প্রচেষ্টায় এবং আগামী চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় সহায়ক হিসেবে আমরা আরও সামাজিক দায়বদ্ধ প্রতিষ্ঠানকে আমাদের পাশে পাবো বলে আমি আশাবাদী।’
সাজিদা ফাউন্ডেশনের সিইও জাহিদা ফিজ্জা কবির বলেন, ‘বিশ্বব্যাপী অসচ্ছল পরিবারদের জন্য কোভিড-১৯ শুধু স্বাস্থ্যসেবা খাতেই নয় বরং অর্থনীতি ও জীবিকার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা দিয়েছে। সেই সব পরিবারগুলোর জন্য আমাদের সাহায্যের হাত আমরা বাড়িয়ে দিয়েছি যাতে তারা আগামী দিনগুলিতে এরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়। স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংকের সাথে আমাদের অংশীদারিত্বের মাধ্যমে, আমরা সঠিক সময়ে সঠিক ব্যক্তিকে আমাদের সহযোগিতার আওতায় আনতে পারবো বলে মনে করি। শহুরে অসচ্ছল পরিবারগুলির কষ্ঠদূর করার জন্য সম্মিলিত পদক্ষেপের প্রয়োজন এবং এই মহৎ উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য আমরা আমাদের অংশীদারকে ধন্যবাদ জানাই।’
নতুন এই উদ্যোগটি জনগোষ্ঠীদের চাহিদা ও ক্ষমতার উপর নির্ভর করে কর্মসংস্থান-কেন্দ্রিক দক্ষতা প্রশিক্ষণ, শিক্ষানবিশ ও ইনস্টিটিউট-ভিত্তিক প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষতা বৃদ্ধি করে চাকরির নিয়োগের সুযোগ প্রদান করবে। সেইসাথে সাজিদা লাইভলিহুড অফিসারদের দ্বারা এমপ্লয়বিলিটি স্কিলস প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এই প্রশিক্ষণটিতে আর্থিক ও মৌলিক শিক্ষা, সফট স্কিল ডেভেলপমেন্ট এবং কর্মচারীদের অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি অন্তর্গত।
শিক্ষানবিশ জনগোষ্ঠীদের জন্য তিন মাসের প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা রয়েছে যেখানে টেইলারিং, ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রিক্যালসহ অন্যান্য ব্যবসায় করার প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করা হবে। “বৈদ্যুতিক ইনস্টলেশন এবং রক্ষণাবেক্ষণ” ক্ষেত্রে সদস্যদের প্রশিক্ষণের জন্য বিআইটিএসি চাঁদপুরে ইনস্টিটিউট ভিত্তিক বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। এছাড়া ব্যবসায়িক উন্নয়ন সাধনে সহায়তার জন্য, সম্ভাব্য উদ্যোক্তাদের অর্থের অ্যাক্সেসসহ তাদের নিজস্ব ব্যবসায় স্থাপন এবং তা পরিচালনা করতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।
বাংলাদেশের উন্নয়নে পাশে থাকার প্রতিশ্রুতির ধারা অব্যাহত রেখে, এই কোভিড পরিস্থিতিতেও বিগত বছরে ৩০ টি উল্ল্যেখযোগ্য আন্তর্জাতিক অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এছাড়াও স্বাস্থ্যসেবা ও জরুরী সহায়তা প্রদান, জীবিকা পুনর্গঠন এবং দীর্ঘ-মেয়াদী বিকাশ সাধনের লক্ষ্যে ২০২১ সালের জন্য প্রায় ১৩ কোটি ৫০ লক্ষ (১.৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) টাকার স্ট্র্যাটেজিক কোভিড-১৯ রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের ঘোষণা দিয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বাংলাদেশ। এছাড়াও, স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক শিক্ষা, স্বাস্থ্য, পরিবেশ, খেলাধুলা ইত্যাদি ক্ষেত্রে নিয়মিত নন-কোভিড কমিউনিটি এনগেজমেন্ট উদ্যোগ অব্যাহত রেখেছে। বিজ্ঞপ্তি