দর বৃদ্ধি আর অভিযানের পরও পেঁয়াজের ‘সেঞ্চুরি’

নিজস্ব প্রতিবেদক: চড়া মূল্যের বাজারে একটু কমে বাজার করতে কারওয়ান বাজারে এসেছিলেন আগারগাঁওয়ের বাসিন্দা শাহিন আলম। তবে বাজার ঘুরে হতাশাই প্রকাশ করলেন তিনি। তার ভাষ্য, ‘বাজারে জিনিসপত্রের দাম কমার পরিবর্তে উল্টো বেড়েছে। বাড়তি দাম আরও চড়েছে।’

গত এক সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজের দাম কেজিতে অন্তত ১০ টাকা বেড়ে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কয়েক সপ্তাহ ধরে আলুর কেজি রয়ে গেছে ৫০ টাকাতেই। যদিও তিন সপ্তাহ আগে বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার আলু, পেঁয়াজ ও ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল, সেটি কেবল ঘোষণাতেই আটকে আছে।

গতকাল শুক্রবারও ঢাকার কয়েকটি কাঁচাবাজারে ওই বেঁধে দেয়া দরের চেয়ে পেঁয়াজ ৩৫ টাকা ও আলু ১৪ টাকা বেশিতে বিক্রি হতে দেখা যায়।

শহিন আলমের ভাষ্য, ‘জিনিসপত্রের দাম আর কবে কমবে? পেঁয়াজ, আলু কোনোটার দামই তো সরকার কমাতে পারল না। উল্টো আরও বেড়েছে। বেড়েছে মানে, বাড়তির পথেই আছে।’

শুক্রবার ঢাকার কয়েকটি বাজার ঘুরে দেখা যায়, পাইকারি দোকানে ভালো মানের দেশি পেঁয়াজের দাম গত এক সপ্তাহে কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খুচরায় দাম পৌঁছে গেছে ১০০ টাকায়। আবার খুচরা দোকানে মাঝারি মানের কিছু দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। তবে কেজিতে ৫০ টাকার নিচে আলু নেই কোথাও।

গত ১৪ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজ, আলু ও ফার্মের ডিমের দাম নির্ধারণ করে দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সেখানে প্রতি কেজি আলুর উৎপাদন খরচ ১১ টাকা ৫১ পয়সা ধরে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে বাজারে পাইকারিতে ২৭ টাকা এবং খুচরায় ৩৬ টাকা নির্ধারণ করা হয়। আর ৩৩ থেকে ৪১ টাকা পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ বিবেচনায় পাইকারিতে ৫৩ টাকা এবং খুচরায় ৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।

এরপর ঘোষণা বাস্তবায়নে সারাদেশের গুদাম ও মোকামে অভিযান চালিয়ে লাখ লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সেই অভিযান অব্যাহত থাকলেও দামে লাগাম টানা যায়নি।

কারওয়ান বাজারে আলুর পাইকারি বিক্রেতা ইউনুস মিয়া বলেন, ‘পাইকারিতে প্রতি কেজি ৩৬ থেকে ৩৭ টাকায় আলু বিক্রি হচ্ছে। কয়েক দিন আগে দাম ৪০ টাকায় উঠে গিয়েছিল। সেই হিসাবে দাম কিছুটা হলেও কমেছে।’

ইউনুস মিয়ার দোকানের পাশেই বস্তা খুলে কেজি দরে আলু বিক্রি করছিলেন আরেক বিক্রেতা। সেখানে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছিল ৪৫ টাকায়।

পাইকারি বাজারে দামের এমন পার্থক্য কেনÑজানতে চাইলে ইউনুস মিয়া বলেন, ‘দাম বেড়ে যাওয়ায় এখন ভালো-খারাপ সব মানের আলুই বস্তায় দিয়ে দেয়া হচ্ছে। খুলে বিক্রি করতে গেলে অনেক নষ্ট আলু পাওয়া যায়। সে কারণে দামের এমন পার্থক্য।’

শুক্রবার ঢাকার মিরপুরে বেশ কয়েকটি দোকান ঘুরেও কোথাও ৫০ টাকার নিচে আলু পাওয়া যায়নি।

পেঁয়াজের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে রসুনের দামও বাড়ছে। মিরপুরে দেশি রসুন প্রতি কেজি ১৮০ টাকা আর চীনা রসুন ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অপরদিকে কারওয়ান বাজারে কিছু দোকানে চীনা রসুন প্রতিকেজি ২২০ টাকায়ও বিক্রি হচ্ছিল।

মানের কারণে দামের পার্থক্য জানিয়ে কারওয়ান বাজারের দোকানি শাহ আলম বলেন, ‘চায়না রসুনের মধ্যেও তারতম্য আছে। ভালো মানের চায়না রসুন ২২০ টাকা। রসুনের দাম গত এক সপ্তাহ ধরে বাড়তি। কেজিতে অন্তত ২০ টাকা বেড়েছে।’

সবজি বাজারে প্রতি কেজি ৫০ টাকার নিচে সবজি মেলানো কঠিন। ৫০ থেকে ৭০ টাকা কেজিতে ধুন্দল, ঝিঙা, চিচিঙ্গা, পটোল, ঢ্যাঁড়শ ও কচুমুখী বিক্রি হচ্ছে। নতুন আসা ফুলকপি ও বাঁধাকপির দাম এখন চড়া। খুব ছোট আকারের ফুলকপি ৩৫ টাকা আর বাঁধাকপি ৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে শুক্রবার।

এদিন দেশি মুরগি প্রতি কেজি ৫১০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগি ২৯০ টাকা, ব্রয়লার ১৯০ টাকা, লেয়ার ৩০০ টাকা এবং গরুর মাংস ৭৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০