Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 10:31 pm

‘দলীয় বিবেচনায় ভিসি নিয়োগ’ বন্ধ চাইলেন বিরোধীদলীয় এমপিরা

নিজস্ব প্রতিবেদক: দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়ে প্রকৃত শিক্ষাবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য পদে নিয়োগ দেয়ার দাবি উঠেছে জাতীয় সংসদে। গতকাল একটি বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিরোধী দলের দুই সংসদ সদস্য এই দাবি জানান। তারা বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে সমালোচনা করেন।

জবাবে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, ‘বরেণ্য শিক্ষাবিদদের অনেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য হিসেবে কাজ করতে আগ্রহী হন না।’

গতকাল ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিল, ২০২২’ জাতীয় সংসদে তোলেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।

বিল পাসের আলোচনায় অংশ নিয়ে বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনুর রশীদ বলেন, একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হচ্ছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অবস্থা কী? উপাচার্যরা বিদায় নিচ্ছেন, পুলিশ প্রহরায় তাদের ক্যাম্পাস ত্যাগ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি রুয়েটের উপাচার্যকে নিয়ে কলঙ্কজনক তথ্য এসেছে। তিনি প্রকৃত শিক্ষাবিদদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্য নিয়োগ করার জন্য দাবি জানান।

জাতীয় পার্টির সংসদ সদস্য মুজিবুল হক চুন্নু বলেন, ‘আগে উপাচার্যদের কথা শুনলে শ্রদ্ধায় মাথা নত হয়ে আসত। এখন তাদের দুর্নীতির খবর শুনে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে। তারা পরিবারের সদস্যদের নিয়োগ দিচ্ছেন, দুর্নীতি করছেন।’ তিনি দলীয় বিবেচনার বাইরে গিয়ে উপাচার্য নিয়োগ দেয়ার জন্য দাবি জানান।

বিএনপির সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য রুমিন ফারহানা বলেন, ‘একটার পর একটা বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে, কিন্তু কর্মসংস্থান তৈরিতে এসব বিশ্ববিদ্যালয় ন্যূনতম ভূমিকা রাখছে না। এখন সরকারি চাকরি লোভনীয় সন্দেহ নেই। দেড়-দুই বছর আগেও বিসিএস নিয়ে এত উম্মাদনা ছিল না। কারণ শিক্ষিত তরুণদের জন্য এখনকার তুলনায় ভালো চাকরির সুযোগ তখন বেশি ছিল।’

বিরোধী সদস্যদের বক্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের কার্যকলাপ নিয়ে কিছু কিছু সমালোচনা আছে, যেগুলোর সত্যতাও আছে এবং সেগুলোর বিষয়ে ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু ঢালাওভাবে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের নিয়ে মন্তব্য করা সমীচীন নয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য নিয়োগের জন্য যখন প্যানেল প্রস্তুত করে পাঠানো হয়, তখন কিছু বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে তালিকা করা হয়। তাদের একাডেমিক একসিলেন্স, গবেষণাকর্ম, বিভিন্ন ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন কি না, এসব দেখা হয়। উপাচার্য শুধু একাডেমিক দিক দেখেন না, নেতৃত্ব দেয়ার গুণাবলিও জরুরি। একই সঙ্গে প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেছেন কি না, সেটাও দেখা হয়। এসব বিবেচনায় যাদের সবচেয়ে ভালো মনে করা হয়, তাদের নাম প্রস্তাব করা হয়।’

শিক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের খুবই বরেণ্য শিক্ষকরা আছেন, যাদের উপাচার্য হিসেবে পেলে গর্ব অনুভব করতাম। কিন্তু তাদের অনেকেই এই প্রশাসনিক দায়িত্ব নিতে আগ্রহী হন না। আমরা চাইলেও সবচেয়ে ভালো কেউ আগ্রহী হবেন তেমন নয়।’

শিক্ষামন্ত্রীর এই বক্তব্যের জবাবে বিএনপির হারুন বলেন, ‘আস্থার সংকট এবং স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ নেই বলে বরেণ্য শিক্ষাবিদেরা উপাচার্য হতে আগ্রহী হন না।’

পরে কণ্ঠভোটে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পিরোজপুর বিল, ২০২২’ সংসদে পাস হয়। এর আগে বিলের ওপর দেয়া জনমত যাচাই-বাছাই কমিটিতে পাঠানো ও সংশোধনী প্রস্তাবগুলোর নিষ্পত্তি করেন স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী।

বিলে বলা হয়েছে, পিরোজপুর সদরে এই বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণ করা হবে। উচ্চশিক্ষা ও গবেষণার জন্য এক বা একাধিক ইনস্টিটিউট নির্মাণ করা যাবে।

অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে নতুন এ আইন করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি চার বছর মেয়াদের জন্য দুই উপ-উপাচার্য নিয়োগ করবেন। যাদের একজন একাডেমিক ও আরেকজন প্রশাসনিক কার্যক্রম দেখবেন