Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 8:17 pm

দশ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য চারজন ডাক্তার

প্রতিনিধি, নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়: জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের স্বাস্থ্যসেবা দিতে রয়েছে ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টার। তবে মেডিকেল সেন্টারটি প্রয়োজনের সিকিভাগও চিকিৎসা চাহিদা পূরণ করতে পারছে না বলে দাবি শিক্ষার্থীদের। গুরুতর যে কোনো অসুস্থতার জন্য শিক্ষার্থীদের যেতে হয় ত্রিশাল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স অথবা ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।

ব্যথার দান মেডিকেলের প্রতি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কারণ অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠার পর থেকে সময়ে সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়টিতে খোলা হয়েছে অনেকগুলো নতুন নতুন বিভাগ। বিভাগের সঙ্গে আনুপাতিক হারে বেড়েছে শিক্ষার্থী-শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যা। বর্তমানে ২৪টি বিভাগে আট হাজারেরও অধিক শিক্ষার্থী এবং তিন শতাধিক শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবার মিলিয়ে প্রায় দশ হাজার মানুষের বিপরীতে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু এই বিপুলসংখ্যার সঙ্গে বাড়েনি ব্যথার দান মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক, নার্স, ক্রাফসহ অন্যান্য স্টাফের সংখ্যা, বাড়েনি পর্যাপ্ত বরাদ্দও।

জানা যায়, অসুস্থতা একটি অনিশ্চিত বিষয় হলেও স্টাফ সংকটের কারণে রুটিনে নির্দিষ্ট সময়েই মাত্র চিকিৎসা দেয় ব্যথার দান। যেখানে শুক্রবার ও শনিবার সার্বক্ষণিক এবং বাকি দিনগুলোতে রাত আট থেকে সকাল আটটা পর্যন্ত বন্ধ থাকে মেডিকেল সেন্টার। এই বন্ধ সময়ে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার প্রয়োজন হলে বিপাকে পড়ে যায় অসুস্থ শিক্ষার্থীরা।

এছাড়া দশ হাজারের বিপরীতে রোগীদের সার্বক্ষণিক পরিবহন সেবার জন্য রয়েছে একটি মাত্র অ্যাম্বুলেন্স। যেটিও সবসময় না পাওয়ার অভিযোগ করেছে শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়টি শহর থেকে ছাব্বিশ কিলোমিটার দূরে হওয়ায় একসময় একাধিক শিক্ষার্থী অ্যাম্বুলেন্স কল করলে প্রায় সময় ভীষণ বিপাকে পড়েন বলে জানান অ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভারও। এছাড়া প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা ও রোগ নির্ণয়ের জন্য নেই পর্যাপ্ত যন্ত্রপাতি। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতির অভাবে গুরুতর রোগে আক্রান্ত রোগীদের তাৎক্ষণিক চিকিৎসা সেবা প্রদানে হিমশিম বেগ পোহাতে হয় কর্তৃপক্ষকে।

মেডিকেল সেন্টার নিয়ে অসন্তুষ্ট জানিয়ে ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী নাইমুল ইসলাম অনিক বলেন, মেডিকেল সেন্টারে প্যারাসিটামল আর ওমিপ্রাজলে সীমাবদ্ধ। যেকোনো সমস্যা, অসুস্থতায় এর বাইরে কোনো প্রেসক্রিপশন এখানে পেয়েছি বলে মনে হয় না।

সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের ২০১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী তামান্না আক্তার ব্যথার দান নিয়ে অভিযোগ করে বলেন, যেকোনো সময় যেকোনো শিক্ষার্থীর অসুস্থ হওয়া খুব স্বাভাবিক। কিন্তু প্রয়োজনীয় ওষুধ সরবরাহে তারা সবসময়েই অবহেলা করে এমনকি রাতের বেলা মেডিকেল সেন্টারে সব চিকিৎসা বন্ধ থাকে। চারটি হলে রোজই বহু শিক্ষার্থী অসুস্থ হচ্ছে। রাতের বেলা কেউ অসুস্থ হলে আমাদের ত্রিশাল স্বাস্থ কমপ্লেক্সে যাওয়া লাগে। প্রয়োজনীয় ওষুধ এবং রাতের বেলা আমাদের সঠিক চিকিৎসা সেবা দিলে আমাদের ভোগান্তি অনেকাংশেই কমে যাবে।

ব্যথার দানের সার্বিক সংকট ও অসঙ্গতি নিয়ে মেডিকেল সেন্টারের ডেপুটি চিফ মেডিকেল অফিসার ডা. আবুল খায়ের মোহাম্মদ হেলাল উদ্দিনের কাছে জানতে চাইলে তিনি সংকট ও শিক্ষার্থীদের অসন্তুষ্টির কথা স্বীকার করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের আট-দশ হাজার জনের জন্য এ মেডিকেল সেন্টার। কিন্তু এখানে আমাদের ডাক্তার আছেন মাত্র চারজন। নার্স-ক্রাফ, ওয়ার্ড বয়সহ সবমিলিয়ে আমাদের টোটাল স্টাফ মাত্র ১১ জন। এই সামান্য সংখ্যক স্টাফ আমাদের প্রয়োজনের তুলনায় খুবই অপ্রতুল। স্টাফ স্বল্পতার কারণে আমাদের নাইট শিফট চালু কর সম্ভব হচ্ছে না। আর ওষুধ সরবরাহের কথা যদি বলেন, তাহলে বলি, আমরা বছরে দশ লাখ টাকা বরাদ্দ পাই। এই সামান্য বরাদ্দে শিক্ষার্থীদের সব মেডিসিন সরবরাহ করা সম্ভব না। সামগ্রিক বিষয় বিবেচনায় নিয়ে আমারা রেজিস্ট্রার দপ্তরে আমাদের ডাক্তার, নার্স ও বরাদ্দের চাহিদার জানিয়ে কাগজ জমা দিয়েছি। আশা করি, তারা বিষয়গুলো বিবেচনায় নিবেন।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ ড. হুমায়ুন কবীর বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল সেন্টার হলো প্রথামিক চিকিৎসা কেন্দ্র। এখানে চাহিদার তুলনায় বরাদ্দ সংকট আছে এর মধ্যেই আমাদের মানিয়ে শিক্ষার্থীদের সন্তুষ্টি করতে হয়। চিকিৎসক, নার্স, এটেনডেন্স অনেক রকমের জনবল প্রয়োজন। রোগ নির্ণয়, মেডিকেল টেস্টের জন্য আধুনিক সরঞ্জামাদিও দরকার হয়। আমরা অব্যাহতভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে যেন মেডিকেল সেন্টারে এসব সংকট দূর করতে পারি। মেডিসিন ক্রয়ের জন্য বরাদ্দ বাড়ানোর জন্য আমাদের পরিকল্পনায় রয়েছে।