কারও ৮০ বছর বয়সেও দাঁত মজবুত, কারও কম বয়সেই দাঁত নড়ে যায়। ছোটদের দুধদাঁত নির্দিষ্ট সময় পর নড়ে গিয়ে পড়ে যায়। এরপর সেখানে স্থায়ী দাঁত ওঠার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এটা স্বাভাবিক। কিন্তু স্থায়ী দাঁত নড়ে যাওয়ার বিষয়টি স্বাভাবিক নয়। নানা কারণে দাঁত নড়ে যেতে পারে। কারণ সঠিক নিয়মে দাঁত পরিষ্কার না করলে অথবা দাঁতের ফাঁকে খাবার আটকে থাকলে দাঁতের ধারক-কলাতে প্রদাহের সৃষ্টি হয়। এতে দাঁত নড়ে যায়।
অনেকের দাঁতে দাঁত ঘসার বা কামড়ানোর বদভ্যাস আছে, যাকে ‘ব্রুকসিজম’ বলে। অনেকের দাঁত এলোমেলো, উঁচুনিচু বা বাঁকা থাকে। এসব ক্ষেত্রে দাঁত পরিষ্কার রাখা কষ্টসাধ্য এবং কোনো কোনো দাঁতে অতিরিক্ত চাপ পড়ার ঝুঁকি থাকে। এসব কারণেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। ক্যালসিয়াম বা ভিটামিন ডি-স্বল্পতায় চোয়ালের হাড়সহ সব হাড়ই ক্ষয় (অস্টিওপোরোসিস) হতে পারে। চোয়ালের হাড় ক্ষয় হলে দাঁত নড়ে যেতে পারে। অর্থোডন্টিক চিকিৎসা, ফিলিং বা ক্যাপ পরানো যথাযথ না হলে বা পাশের দাঁতের সঙ্গে সংযোগ যথাযথ না হলেও দাঁত নড়ে যেতে পারে। ক্রনিক রোগ, বিশেষ করে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, ক্যানসার, শ্বাসকষ্ট, ভিটামিন ও খনিজ স্বল্পতা বা কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ায় এবং ধূমপান থেকেও মাড়িতে প্রদাহ হয়। এতে অকালে দাঁত নড়ে যেতে পারে।
করণীয়: প্রকৃত পরিচর্যার মাধ্যমে দাঁত সুস্থ ও মজবুত রাখা সম্ভব। সকালের নাশতা ও রাতের খাবারের পর দুই মিনিট ধরে প্রতিটি দাঁতের পৃষ্ঠকে পরিষ্কার করতে হবে। টুথপিক বা কাঠির পরিবর্তে ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করতে হবে। খাদ্যতালিকায় চিনিযুক্ত খাবারের পরিবর্তে মৌসুমি তাজা শাকসবজি, ফলমূল, দুধ, টক দই, ছোট মাছ, সামুদ্রিক মাছসহ ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন সি-যুক্ত খাবার রাখার চেষ্টা করতে হবে। মুখ শুষ্ক বা অন্যান্য রোগ থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শে মাউথওয়াশ ব্যবহার করা যেতে পারে। মাড়ি ফুলে গেলে বা রক্ত পড়লে স্কেলিংয়ের মাধ্যমে দাঁতের পৃষ্ঠে জমা ব্যাকটেরিয়াল প্লাক বা ক্যালকুলাস দূর করতে হবে। দেরি হলে অনেক সময় রুট প্ল্যানিং, গ্রাফটিং, কামড় শুদ্ধকরণ, বাইট প্লেট, স্পিøনটিংয়ের মতো চিকিৎসার দরকার হতে পারে। দাঁত ফেলে দেয়ার পর কৃত্রিম দাঁত সংযোজন করা দরকার। তা না হলে অন্য দাঁত নড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বছরে কমপক্ষে একবার দন্তচিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া উচিত।
ডা. মো. আসাফুজ্জোহা
রাজ ডেন্টাল সেন্টার, কলাবাগান, ঢাকা