শাহাদাত হোসেন তৌহিদ, ফেনী: চিকিৎসক ও জনবলসহ নানা ধরনের সংকটে স্বাস্থ্যসেবা ব্যাহত হচ্ছে ফেনীর দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। ১৮ চিকিৎসকের মধ্যে বর্তমানে পাঁচজন কর্মরত থাকলেও এরই মধ্যে দুজনের বদলির আদেশ এসেছে। একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি দীর্ঘদিন ধরে অকেজো হয়ে পড়ে আছে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গ্যারেজে। শুধু টেকনিশিয়ান না থাকায় হাসপাতালের এক্স-রে যন্¿টি পড়ে আছে সাত বছর ধরে। ফলে উপজেলাসহ আশপাশ এলাকার রোগীরা কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও জনবলকাঠামো এখনও ৩১ শয্যারই রয়ে গেছে। অর্থাৎ এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৪০ পদের অনুকূলে প্রায় অর্ধশত পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য রয়েছে। চিকিৎসকদের ১৮টি মঞ্জুরীকৃত পদের মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তাসহ পাঁচটি পদে চিকিৎসক রয়েছেন। এর মধ্যে দুজনের বদলির আদেশ হয়েছে। এছাড়া দীর্ঘদিন শূন্য রয়েছে আবাসিক মেডিক্যাল অফিসার, জুনিয়র কনসালটেন্ট (সার্জারি), মেডিক্যাল অফিসার ও সহকারী সার্জনসহ আরও চারটি গুরুত্বপূর্ণ পদ।
অন্যদিকে দ্বিতীয় শ্রেণির সিনিয়র স্টাফ নার্স ১০ জনের মধ্যে দুজন, তৃতীয় শ্রেণির সহকারী নার্স একজন, ফার্মাসিস্ট দুজন, মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট (ল্যাব) একজন, রেডিওগ্রাফার ও ক্যাশিয়ার একজন করে, ভাণ্ডাররক্ষক একজন, অফিস সহকারী দুজন, স্বাস্থ্য সহকারী ১৬ জন, ড্রাইভার একজন, হারবাল অ্যাসিস্ট্যান্ট একজন, জুনিয়র মেকানিক একজনসহ শূন্য পদের সংখ্যা ২২। তাছাড়া চতুর্থ শ্রেণির অফিস-সহায়কের দুটি পদ, ওয়ার্ডবয়ের একটি, আয়ার একটি, বাবুর্চির একটি, বাগান মালীর একটি, পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চারটি ও নিরাপত্তা প্রহরীর দুটি পদ শূন্য রয়েছে।
এদিকে প্রতিদিনই দাগনভূঞা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সসহ পৌর শহরের বেসরকারি হাসপাতাল থেকে মুমূর্ষু রোগীদের জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজধানী ঢাকা, বিভাগীয় শহর চট্টগ্রাম, নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতাল, ফেনী সদর হাসপাতাল ও কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানোর দরকার হলে রোগীসহ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অসহায় হয়ে পড়ে। কেননা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একমাত্র অ্যাম্বুলেন্সটি প্রায় দেড় বছর ধরে অকেজো হয়ে পড়ে রয়েছে। অ্যাম্বুলেন্সটি মেরামত করার জন্য বহুবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হলেও নেওয়া হয়নি কোনো উদ্যোগ। ফলে উপজেলার হাজার হাজার অসহায় রোগীর চিকিৎসাসেবা ব্যাহত হচ্ছে।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নীত হলেও জনবলকাঠামো ৩১ শয্যার রয়ে গেছে। বর্তমানে পাঁচ চিকিৎসক থাকলেও দুজনের নামে বদলির আদেশ এসেছে। এদিকে সামনে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ফেনী, কুমিল্লার নাঙ্গলকোট, নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ ও সেনবাগের রোগীরা তো আসেনই, উপরন্তু ফেনী মাইজদী ও লক্ষ্মীপুর জেলার আন্তঃসংযোগ সড়কে দুর্ঘটনাসহ মুমূর্ষু রোগীকে চিকিৎসা দিতে হয়। ফলে উপজেলাবাসীকে চিকিৎসাসেবা দিতে মারাত্মক বেগ পেতে হবে। বিষয়গুলো জানিয়ে একাধিকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিকিৎসকসহ জনবল চাওয়া হলেও আজও মেলেনি।