দাদন ব্যবসায়ীর বিচারের দাবিতে গ্রামবাসীর মানববন্ধন

প্রতিনিধি, ফুলবাড়ী (দিনাজপুর): এক দাদন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন কয়েক গ্রামের মানুষ। ধারের দ্বিগুণ টাকা পরিশোধ করেও মুক্তি মিলছে না সুদ থেকে। টাকা পরিশোধের পরেও দাদন ব্যবসায়ীর দায়ের করা মামলার হাত থেকে বাঁচতে দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন অনেক পরিবার। আবার অনেকে দাদন ব্যবসায়ীর ভয়ে হয়েছেন গ্রামছাড়া। দাদন ব্যবসায়ীর বিচারের দাবিতে মানববন্ধন করে এসব কথা বলেন ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

গতকাল সকালে দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার সন্নিকটে পার্বতীপুর উপজেলার হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর গ্রামের মোড়ে ফুলবাড়ী-খয়েরপুর রাস্তায় এক ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন করেন হামিদপুর ইউনিয়নের বাঁশপুকুর, ধুলাউদাল, হামিদপুর, খলিলপুর সরদারপাড়াসহ কয়েক গ্রামের বাসিন্দারা।

গ্রামবাসী বলেন, হামিপুর ইউনিয়নের দক্ষিণ পলাশবাড়ী ধুলাউদাল গ্রামের জাকির হোসেনের ছেলে দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ইসলামের দাদন ব্যবসার রোষানলে পড়ে সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েছে কয়েক গ্রামের শতাধিক পরিবার। তারা, দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুল ফাঁকা চেক ও ফাঁকা নন-জুডিশেল স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে নিয়ে দাদনে টাকা ধার দিয়ে ওই টাকার দ্বিগুণ টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরেও ১০ গুণ টাকা চেক বা স্ট্যাম্পে লিখে মামলা দায়ের করেছে গ্রামবাসীর নামে। এদের মধ্যে কেউ মিথ্যা মামলার হাত থেকে বাঁচতে আদালতের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন, আবার অনেকে হয়েছেন গ্রামছাড়া।

তাইজুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি জানান, তিনি ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে এক লাখ ৩০ হাজার টাকা পরিশোধ করার পরেও, তার নামে চার লাখ টাকার মামলা দিয়েছেন দাদন ব্যবসায়ী। একই কথা বলেন নাসরীন বানু নামে এক গৃহবধূ। ওই গৃহবধূ বলেন, তিনি ২০ হাজার টাকা ধার নিয়ে ৪২ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও, তার নামে দুই লাখ ৮০ হাজার টাকার মামলা দেয়া হয়েছে। আব্বাস আলী নামে এক গ্রামবাসী জানান, তিনি ৫০ হাজার টাকা ধার নিয়ে সুদসহ এক লাখ টাকা পরিশোধ করা সত্ত্বেও তার নামে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকার চেক জালিয়াতির মাশরা দেয়া হয়েছে। এভাবে গ্রামের শত শত পরিবার সুদ ব্যবসায়ী আনোয়ারুলের মামলা এখন দিশেহারা হয়ে পড়েছে।

গ্রামবাসী জানায়, আনোয়ারুলের দাদন ব্যবসার হাত থেকে রক্ষা পায়নি শিক্ষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী, গৃহবধূ এমনকি প্রতিবন্ধী পর্যন্ত। এ জন্য এই সুদ ব্যবসায়ী আনোয়ারুলের শাস্তির দাবিতে ভুক্তভোগী গ্রামবাসী এই মানববন্ধন করেন।

মানববন্ধনে গ্রামবাসীর পক্ষে বক্তব্য দেন বড়পুকুরিয়া স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ আব্দুল কাদের, পাটিকাঘাট উচ্চবিদ্যালয়ের শিক্ষক আবুল হোসেন, ভুক্তভোগী গ্রামবাসী তাইজুল ইসলাম, গৃহবধূ নাসরীন বেগম, মঞ্জুরুল ইসলাম, ইয়ন সরদারসহ ভুক্তভোগী গ্রামবাসী।

এদিকে দাদন ব্যবসায়ী বর্তমানে একটি মামলায় দিনাজপুর কারাগারে বন্দি থাকায় তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভাব হয়নি। তার পরিবারের সদস্যরা এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

এ বিষয়ে জানতে চালে বড়পুকুরিয়া পুলিশ তদন্তকেন্দ্রের ইনচার্জ পুলিশ পরিদর্শক সুলতান মাহমুদ বলেন, দাদন ব্যবসায়ী আনোয়ারুলের বিরুদ্ধে দাদন ব্যবসা, ধর্ষণ মারামারিসহ ১১টি মামলা বিচারাধীন। এর মধ্যে একটি মামলায় বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছেন আনোয়ারুল। তিনি জানান, ভুক্তভোগী গ্রামবাসী অভিযোগ দায়ের করলে তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০