দাবি পূরণ না হওয়ায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সব আদালত বর্জনের ঘোষণা

প্রতিনিধি, ব্রাহ্মণবাড়িয়া: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় জেলা ও দায়রা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক (জেলা জজ) মোহাম্মদ ফারুককে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আইনজীবীরা এবার সব আদালত বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন। কয়েক দফায় সময় বাড়ানো হলেও দাবি পূরণ না হওয়ায় এবার সব আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা।

গতকাল মঙ্গলবার সাধারণসভা শেষে বেলা ৩টার দিকে জেলা আইনজীবী সমিতি ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবীরা জেলার কোনো আদালতে যাবেন না বলে ঘোষণা দেন।

এর আগে দাবি পূরণ না হওয়ায় পঞ্চম দফায় গত ৩১ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাওয়া থেকে বিরত ছিলেন আইনজীবীরা।

পঞ্চম দফায় কর্মবিরতির বেঁধে দেয়া সময়সীমা ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়েছে। দীর্ঘ এক মাসের বেশি সময় ধরে দুই বিচারকের আদালত বর্জন করে আসছেন আইনজীবীরা। এর আগে গত ১ জানুয়ারি থেকে আইনজীবীরা মোহাম্মদ ফারুকের ও ৫ জানুয়ারি থেকে জেলা জজ শারমিন নিগারের আদালত বর্জন শুরু করেন। তারা জেলা জজসহ দুই বিচারককে বদলি ও নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ অপসারণের দাবি জানিয়ে আসছিলেন। দাবি পূরণের জন্য একাধিকবার আলটিমেটামও দিয়েছেন আইনজীবীরা।

জানা গেছে, শীতকালীন ছুটির আগে গত ১ ডিসেম্বর আদালতের শেষ কার্যদিবস ছিল। ওইদিন তিনটি মামলা না নেয়ায় ১ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন করেন আইনজীবীরা। এরপর ২ জানুয়ারি বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাদানুবাদের একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন। ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। পরে ১৫ জানুয়ারি আইনজীবীরা আদালতে ফিরে গেলেও জেলা জজ শারমিন নিগার এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন অব্যাহত রাখেন। এর আগে ৪ জানুয়ারি এক দিনের কর্মবিরতি পালন করে জেলা বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন। এতে আদালতে অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়।

এদিকে গত ২৬ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ থেকে দ্বিতীয়বারের মতো আবার সভাপতি নির্বাচিত হন তানভীর ভূঞা। তিনি বলেন, ‘আমাদের (আইনজীবী) বিষয়টি মীমাংসিত। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সিদ্ধান্ত মেনে এবং তার প্রতি সম্মান রেখে আমরা দুই বিচারকের আদালত ছাড়া বাকি সব আদালতে ফিরে গেছি। দাবি মেনে নেয়া হবে, এমন আশ্বাসে ১৫ জানুয়ারি থেকে আমরা আদালতে ফিরে গেছি। কিন্তু এখনও দাবি পূরণ হয়নি। তাই দুই বিচারকের আদালত বর্জনের সময় বারবার বাড়ানো হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সঙ্গে আইনজীবীরা একাধিকবার আলোচনা করেছেন। ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আদালতে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন আইনজীবীরা। এ সময় আদালতে সব ধরনের ফটোকপির দোকানও বন্ধ থাকবে।’

এর আগে ৫ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত আইনজীবীদের ৬ কার্যদিবস কর্মবিরতি এবং ৪ জানুয়ারি বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের কর্মবিরতির কারণে জেলার প্রায় দেড় লাখ বিচারপ্রার্থী দুর্ভোগে পড়েন। বিচার পেতে প্রতিদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে আসেন ১৫ থেকে ২০ হাজার মানুষ। পরে ১৫ জানুয়ারি থেকে আইনজীবীরা জেলার সব আদালতে ফিরে যান। এতে আদালতের অচলাবস্থা দূর হয়। তবে ওই দুই বিচারকের আদালত বর্জন অব্যাহত রাখেন আইনজীবীরা।

জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেন, দুই বিচারককে বদলিসহ নাজিরের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি এখনও পূরণ হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সার্বিক সিদ্ধান্ত নিতে বর্তমান সভাপতি তানভীর ভূঞাকে আহ্বায়ক করে ২১ সদস্যের একটি উপকমিটি গঠন করা হয়েছে।

সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন, ‘আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের দেয়া আশ্বাস পূরণ না হওয়ায় আমরা পূর্বের জায়গায় ফিরে গেছি। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সব কোর্টে (আদালতে) সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলবে। কোনো আদালতেই আইনজীবীরা যাবেন না।

প্রসঙ্গত, ৫, ৮ ও ৯ জানুয়ারি আইনজীবীরা তিন কার্যদিবসের কর্মবিরতির ডাক দেন। পরে ১০, ১১ ও ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত দ্বিতীয় দফায় আরও তিন কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করেন আইনজীবীরা। ৫ থেকে ১২ জানুয়ারি পর্যন্ত মোট ছয় কার্যদিবস কর্মবিরতি পালন করেন তারা। ১৫ জানুয়ারি থেকে ৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যে দাবি আদায়ের জন্য আইনজীবীরা পাঁচ দফায় আলটিমেটাম দেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০