দামুড়হুদায় মরুভূমির প্রাণী দুম্বা পালনে নতুন সম্ভাবনা

মফিজ জোয়ার্দ্দার, চুয়াডাঙ্গা: চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে শুরু হয়েছে মরুভূমির প্রাণী দুম্বা পালন। সাধারণত সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যেই এ প্রাণীর বসবাস। তবে দামুড়হুদায় ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত এ খামারে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরির মাধ্যমে সেখানে ছোট একটি খামার করে লালন-পালন করা হচ্ছে দুম্বা। এলাকার আওহাওয়াও দুম্বা পালনে অনুকূল হওয়ায় দেখা দিয়েছে নতুন সম্ভাবনা।

জানা গেছে, উপজেলার কোষাঘাটা গ্রামে রয়েছে ওয়েভ ফাউন্ডেশন পরিচালিত ৪০ থেকে ৪২ বিঘা জমির ওপর একটি বিশাল খামার। এ খামারে ছাগল, মুরগি পালনসহ রয়েছে হ্যাচারি। সেখানেই ২০১৯ সালে পালন শুরু হয় দুম্বা। এজন্য তৈরি করা হয় আরবের মরুভূমির আদলে কৃত্রিম মরুভূমি। পরে ওই বছরের নভেম্বর মাসে ঢাকার সাদেক এগ্রো থেকে আয়েশি ও রেড মাসাই জাতের ছয়টি দুম্বা ক্রয় করে আনা হয়।

এ দুম্বাগুলোর জন্য মোট খরচ পড়ে আট লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সেগুলো থেকেই জš§ নিয়েছে চারটি দুম্বা শাবক। সুস্থতার সঙ্গে দিনদিন বেড়ে উঠছে শাবকগুলো। এসব দুম্বা সবুজ ঘাস, খড়, গম, ভুট্টা, ছোলা, গাছের পাতা খেয়েই প্রতিনিয়ত বেড়ে উঠছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।

খামার সহায়ক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘দুম্বা মরুভূমি পছন্দ করে। তাই এখানে ছোট পরিসরে কৃত্রিম মরুভূমি তৈরি করা হয়েছে। ইতোমধ্যে মেয়ে দুম্বাগুলো চারটি বাচ্চা দিয়েছে। সেগুলো দিন যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বেড়ে উঠছে। বাচ্চাগুলোসহ মোট দুম্বার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০টিতে।’

তিনি জানান, গমের ভুষি, চালের কুড়া, ভুট্টা ভাঙা, সরিষার খৈল, চিটাগুড়, খড়, মাল্টিভিটামিনসহ বিভিন্ন খাদ্য একত্রে মিশিয়ে তাদের তিন বেলা খেতে দেয়া হয়। এছাড়া সবুজ ঘাস, কাঁঠাল পাতা তাদের পছন্দ। ছাগল ভেড়ার মতোই লালন-পালন করা হয় এসব দুম্বা।

খামারের সহকারী সমন্বয়কারী ডা. তুহিন মিয়া বলেন, ‘আমাদের এলাকায় দুম্বার খামার নতুন। তবে দেশের অন্যান্য স্থানে কমবেশি যারাই দুম্বা পালন করছেন, কেউই লোকসানে নেই। কারণ ছাগল ভেড়ার মতোই দুম্বা লালন-পালন করা যায়। বংশও বৃদ্ধি করে ছাগল-ভেড়ার মতোই। আবহাওয়া, খাবার, চিকিৎসাতে সমস্যা নেই। তবে একটু সতর্ক থাকলে ঠাণ্ডা লাগা রোগ এড়ানো সম্ভব। তিন থেকে চার বছরে একটি দুম্বা পূর্ণবয়স্ক হয়। তখন তার ওজন হয় ১০০ থেকে ১২০ কেজি পর্যন্ত। দাম হতে পারে দুই থেকে আড়াই লাখ টাকা। কোরবানির সময় এর চাহিদাও বেশ।’

দামুড়হুদা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মশিউর রহমান বলেন, ‘দুম্বা ও ভেড়া কাছাকাছি প্রাণী। দুম্বা মরুর প্রাণী হলেও এটি একটি সহনশীল প্রাণী। দেখতে ভেড়ার মতো, তবে পেছনের অংশ ভারী। ভেড়ার মতোই দ্রুত বংশ বৃদ্ধি করে। মাংস উৎপাদনেও ছাগল ভেড়ার চেয়ে এগিয়ে। অর্থনৈতিক দিক দিয়ে ছাগল ভেড়ার চেয়ে দুম্বা পালন লাভজনক। এছাড়া কোরবানির সময় প্রচুর বাণিজ্যিক সম্ভাবনা থাকে। আমাদের এই পরিবেশে দুম্বা পালনে তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না, তাই এ খাতে নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০