Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 1:31 pm

দাম না পেয়ে হতাশ রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোরের রাজারহাটে ঈদুল আজহার পর প্রথম হাটে আশানুরূপ চামড়া ওঠেনি। হাটে আসা বিক্রেতারা সরকার-নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি করতে না পেরেও হতাশ। তবে আড়তদারদের দাবি, ভালো চামড়া সরকার-নির্ধারিত দামেই কিনছেন। আগামী শনিবার হাটে অনেক চামড়ার আমদানি হবে আশা হাট-সংশ্লিষ্টদের।

যশোরের রাজারহাট দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার হাট। সপ্তাহের দুই দিন এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হয়। এ হাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। প্রতিবছর কোরবানির ঈদের প্রথম ও দ্বিতীয় হাটে অন্তত ১০ কোটিরও বেশি টাকার চামড়া বেচাকেনা হলেও তিন বছর ধরে চামড়া বেচাকেনায় ধস নেমেছে। গতকাল মঙ্গলবার ঈদ-পরবর্তী প্রথম হাটে চামড়ার তেমন বেচাকেনা হয়নি।

রাজারহাট মোকামের কয়েকজন খুচরা ব্যবসায়ী বলেন, কয়েক বছর আগেও একটি কোরবানির গরুর চামড়া প্রায় তিন হাজার টাকায় পর্যন্ত কোরবানিদাতাদের কাছ থেকে মৌসুমি ব্যবসায়ীরা কিনে নিতেন, আর সেই টাকা যেত কোরবানির বিধান অনুযায়ী গরিব মানুষের কাছে। এখন সেই চামড়ার ক্রেতাও নেই অনেক ক্ষেত্রে।

সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী, চলতি বছর লবণজাত প্রতি বর্গফুট গরুর চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৭ থেকে ৫২ টাকা, গত বছর যা ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। একই চামড়া ঢাকার বাইরে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে, যা গত বছর ছিল ৩৩ থেকে ৩৭ টাকা। এছাড়া সারাদেশে খাসির চামড়া প্রতি বর্গফুট ১৮ থেকে ২০ টাকা, গত বছর যা ছিল ১৫ থেকে ১৭ টাকা। পাশাপাশি প্রতি বর্গফুট বকরির চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ থেকে ১৪ টাকা, যা গত বছর একই ছিল।

গতকাল রাজারহাট চামড়ার হাটে কথা হয় নড়াইল থেকে আসা ক্ষুদ্র চামড়া ব্যবসায়ী কাজল বিশ্বাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, হাটে ৫০০টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছি। প্রতিটি চামড়া কিনেছি ৩০০ থেকে ৭০০ টাকা দরে। লবণ, জনখরচ ও পরিবহন বাবদ তার প্রতিটি চামড়ায় আরও ২০০ টাকা করে খরচ হয়েছে। আজকের হাটে বড় চামড়া বিক্রি করেছেন ৯০০ টাকা এবং ছোটগুলো ৪০০ টাকা দরে। এরই মধ্যে তার ২০টি চামড়া বিক্রি হয়নি। গড়ে চামড়া বিক্রি হয়েছে সাড়ে ২২ টাকা ফুট দরে। অর্থাৎ সরকার-নির্ধারিত দামের অর্ধেক পেয়েছেন তিনি।

অভয়নগর থেকে আসা মহাদেব বিশ্বাস বলেন, ২০০টি গরু আর ১০০টি ছাগলের চামড়া এনেছি। গরুর চামড়া ৭০০ টাকা দরে আর ছাগলের চামড়া ২০-২৫ টাকা দরে বিক্রি করেছি। গরুর চামড়াপ্রতি খরচ বাদ দিয়ে ১০০ টাকা করে গচ্ছা গেছে। এছাড়া গাভীর চামড়ার দাম বলছেন না ক্রেতারা। গড়পড়তা আমার প্রায় ৫০ হাজার টাকা লোকসান হবে। পরের হাটে আশানুরূপ দাম না পেলে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যাবে।

হাটে কথা হয় আরেক চামড়া ব্যবসায়ী বাগান দাসের ভাগনে ফুলচান দাসের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা দুই হাজারটি ছাগলের চামড়া কিনি। কিছু লবণ কেনা ছিল। লবণের দাম বেশি এবং বেশি টাকা দিয়ে শ্রমিক না পাওয়ায় প্রায় এক হাজার ২০০টি চামড়া নষ্ট হয়ে গেছে। এতে হাজার বিশেক টাকা ক্ষতি হয়েছে। এখন এই পচা চামড়া অন্যত্র নিয়ে পুঁততে হবে। তাতে আরও হাজার পাঁচেক টাকা খরচ হবে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা জানান, রাজারহাটের চামড়া বাজারের ছোট ব্যবসায়ীদের ট্যানারি মালিকদের কাছে ১০ কোটি টাকা বকেয়া পড়ে রয়েছে। দুই বছর ধরে তারা পাওনা টাকা পরিশোধ করেননি, যে কারণে তারা পুঁজি হারিয়ে এখন নিঃস্বপ্রায়। এখন ন্যায্য দামে চামড়া বিক্রি করতে না পারলে তারা চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।

বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাংগাঠনিক সম্পাদক শেখ মমিনুল মজিদ পলাশ বলেন, সরকার-নির্ধারিত দামেই আমরা চামড়া কিনছি। ক্ষুদ্র বিক্রেতারা অসত্য তথ্য দিয়েছেন। তবে কিছু ছাগলের চামড়া প্রসেসিংয়ের অভাবে নষ্ট হওয়ার কথা তিনি স্বীকার করেন।

বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ১০ হাজার চামড়া ব্যবসায়ীর সমন্বয়ে রাজারহাট চামড়ার হাটে কোরবানির ঈদ-পরবর্তী হাটে লক্ষাধিক চমড়া বেচাকেনার মধ্যে দিয়ে অন্তত শতকোটি টাকা হাতবদল হয়। ঢাকার ট্যানারি মালিকদের কাছে প্রায় ১০ কোটি টাকা বকেয়া আছে। গত কয়েক বছরের লোকসান ও বকেয়া আদায় না হওয়ায় কোরবানি-পরবর্তী চামড়ার ব্যবসা নিয়ে ব্যবসায়ীরা দুশ্চিন্তায় রয়েছেন। চলতি বছর ঢাকার বাইরে চামড়ার দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি বর্গফুট ৪০ থেকে ৪৪ টাকায়। মঙ্গলবারের হাটে হাজার পাঁচেক চামড়া উঠেছে। আগামী শনিবার বড় হাট। আশা করা যায়, সেদিন কমপক্ষে ৩০ হাজার গরুর চামড়া উঠবে। দাম ভালো পাওয়ায় দূর-দূরান্ত থেকে ক্ষুদ্র ও বড় ব্যবসায়ীরা আগামী হাটে চামড়া নিয়ে আসবেন।