Print Date & Time : 29 June 2025 Sunday 5:19 pm

দাম না বাড়িয়েও গ্যাস সংকটের সমাধান সম্ভব

নিজস্ব প্রতিবেদক: গ্যাস খাতের দুর্নীতি, অনিয়ম ও অপচয় ঠেকানো গেলে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি আমদানির পরও গ্যাসের দাম বৃদ্ধির প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনটির সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, গ্যাস সেক্টরে বর্তমানে যে পরিমাণ অনিয়ম ও দুর্নীতি হয় তা রোধ করা গেলে মূল্য বৃদ্ধি না করেই গ্যাস সংকটের সমাধান সম্ভব।
রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে গতকাল ‘গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির অযৌক্তিক প্রস্তাব ও বাস্তবতা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ক্যাবের সহসভাপতি এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ূন কবির ভূঁইয়া এবং ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শামসুল আলম।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ক্যাবের অনুষ্ঠান সমন্বয়ক আহমদ একরামুল। এতে তিনি গ্যাসের মূল্য বৃদ্ধির বিপরীতে মূল্য না বাড়ানোর পক্ষে ক্যাবের বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। গ্যাস সংকটের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করতে গিয়ে বলা হয়, আবাসিক খাতে মাসে ৮৮ ঘনমিটার গ্যাস দেওয়া সাপেক্ষে বিল নির্ধারিত রয়েছে ৮০০ টাকা, কিন্তু সে গ্যাসের ২০ শতাংশও অনেক গ্রাহক পান না। সেইসঙ্গে গ্যাসের চাপও খুব কম থাকে। তাহলে বাকি গ্যাস যায় কোথায়। বলা হয়, গ্যাস খাত সুরক্ষায় প্রি-পেইড ও ইভিসি মিটার চালুকরণ, অবৈধ নেটওয়ার্ক ও সংযোগ বিচ্ছিন্নকরণ, খরচে সাশ্রয়ী হওয়া ও সাশ্রয়ী মাত্রা নির্ধারণ করাÑএনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের এসব আদেশ প্রতিপালন করা হলে কেবল ঢাকা ও চট্টগ্রামেই ৩০ কোটি ঘনমিটার গ্যাস সাশ্রয় হবে।
গ্যাসের দাম বৃদ্ধির ক্ষেত্রে ক্যাবের আপত্তির পক্ষে যুক্তি দেখিয়ে বলা হয়, এলএনজি ব্যবহার এখনও শুরুই হয়নি। তাই এলএনজিমিশ্রিত গ্যাসের মূল্যহার বৃদ্ধির উদ্যোগ অযৌক্তিক ও অন্যায্য। বলা হয়, সব সিস্টেমে গেইন থাকলেও মূল্যহারে তা সমন্বয় করা হয়নি। অথচ তিতাস সিস্টেম লসে আছে, যা অগ্রহণযোগ্য। সংবিধানমতে, কোম্পানিগুলো জনগণের। কোম্পানির মুনাফাও জনগণের। তা সরকারের ডিভিডেন্ড ধরে মূল্যহার নির্ধারণে নিজেদের আপত্তির কথা জানিয়েছে ক্যাব।
ক্যাবের প্রস্তাব ও সুপারিশে বলা হয়, তিতাসের বিতরণ ব্যবস্থা উন্নয়নে বিদ্যমান ব্যবস্থার স্টাডি হতে হবে। গ্যাস খাতের শতভাগ মালিকানা জনগণের নিশ্চিত করতে ব্যক্তি খাতে শেয়ার বিক্রি নিষিদ্ধ এবং ব্যক্তি খাত থেকে শেয়ার সরকারি খাতে ফিরিয়ে আনতে হবে। স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে তিতাসকে ব্রেক ইভেনে পরিচালিত হতে হবে। গ্যাস সংকট থাকা পর্যন্ত ইক্যুইটিভিত্তিক রেট অব রিটার্ন নিশ্চিত হতে হবে। গ্যাস খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে জ্বালানি উপদেষ্টার নেতৃত্বাধীন গ্যাস সংযোগ কমিটি রদ করতে হবে।
ক্যাব সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, জ্বালানি খাতে দুর্নীতি ও অপচয় হচ্ছে। হাজার হাজার মাইল এমনকি মাইলের পর মাইল অবৈধভাবে গ্যাসের সংযোগ দেওয়া হচ্ছে। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলোও সিস্টেম লসের কবলে পড়ছে। কিন্তু সিস্টেম লস সমন্বয় করতে গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব জনগণ মেনে নেবে না, বরং কর্মকাণ্ডে স্বচ্ছতা আনেন।
ক্যাবের জ্বালানি উপদেষ্টা ড. এম শামসুল আলম বলেন, সিস্টেম লস দেখিয়ে গ্যাসের দাম বৃদ্ধি অযৌক্তিক, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না। সম্প্রতি দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়া কয়লাখনির কয়লা উধাও নিয়ে করা এক প্রশ্নের জবাবে এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বলেন, দেড় লাখ টন ও চার হাজার টন কয়লার স্তূপের পার্থক্য যাদের চোখে পড়ে না, তারা কীভাবে দায়িত্বে থাকেন। তিনি বলেন, জ্বালানি খাতে ন্যায়বিচার ও সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা না গেলে এ খাতে চুরি রোধ করা সম্ভব নয়।