দাম নিয়ন্ত্রণে কমতে পারে পেঁয়াজ আলু আমদানির শুল্ককর

রহমত রহমান: দেশে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম লাগামহীন। এর মধ্যে পেঁয়াজ ও আলু অন্যতম। প্রতিদিনই পেঁয়াজের দাম যেন লাফিয়ে বাড়ছে। সঙ্গে আলু দেশে উৎপাদিত পণ্য হলেও এর দাম অসহনীয় পর্যায়ে। আমদানি করেও বাজার নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, এক বছরে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৪৭ শতাংশ, আর আলুর বেড়েছে প্রায় ৪৬ শতাংশ। তবে শুল্ককর বেশি হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী এই দুটি ভোগ্যপণ্য আমদানি করা যাচ্ছে না। বাজার নিয়ন্ত্রণে এবার এই দুটি পণ্যের শুল্ককর কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। শুল্ককর কমাতে সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠি পেয়ে কাজ শুরু করেছে এনবিআর। শুল্ককর কমানো হলে আমদানি বাড়বে। এতে দুটি পণ্যের দাম সহনীয় পর্যায়ে আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

একাধিক সূত্রমতে, দেশে অত্যাবশ্যকীয় ভোগ্যপণ্য হিসেবে আলু ও পেঁয়াজর গুরুত্ব অপরিসীম। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে এ দুটি ভোগ্যপণ্যের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে। টিসিবির হিসাব অনুযায়ী, আলুর দাম গত এক মাস কেজিপ্রতি প্রায় ৬ টাকা এবং এক বছরে প্রায় ৪৩ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১৬ জুলাই এক কেজি আলু মানভেদে সর্বনিম্ন ৫৬ টাকা ও সর্বোচ্চ ৬৫ টাকা বিক্রি হয়েছে; যা এক মাস পূর্বে অর্থাৎ ১৬ জুন ছিল সর্বনিম্ন ৫৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা। ফলে এক মাসে আলু প্রতি কেজিতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় সাড়ে ৫ টাকা। একইভাবে আলু ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই মানভেদে প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। সে হিসাবে এক বছরে প্রতি কেজি আলুতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৪৩ টাকা।

অপরদিকে, টিসিবি পেঁয়াজের দাম যাচাই করেছে। এতে দেখা গেছে, একইসঙ্গে প্রতি কেজি দেশীয় পেঁয়াজের দাম এক মাসে প্রায় ৩৬ টাকা ও এক বছরে প্রায় ৭৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। আর আমদানি করা পেঁয়াজের দাম প্রতি কেজিতে ২৫ টাকা ও এক বছরে প্রায় ১৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। চলতি বছরের ১৬ জুলাই মানভেদে প্রতি কেজি দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১১০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকায়; যা ১৬ জুন বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি সর্বনিম্ন ৮০ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ৯০ টাকা। ফলে এক মাসের ব্যবধানে প্রতি কেজিতে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ৩৬ টাকা। আবার ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই প্রতি কেজি দেশীয় পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। সে হিসাবে এক বছরে দেশীয় পেঁয়াজের দাম বেড়েছে প্রায় ৭৭ টাকা। আবার ১৬ জুলাই প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে সর্বনিম্ন ১০৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১২০ টাকা; যা এক মাসে আগে ছিল ৮৫ থেকে ৯৫ টাকা। প্রতি কেজিতে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ২৫ টাকা। আর ২০২৩ সালের ১৬ জুলাই প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ফলে এক বছরের ব্যবধানে প্রতি কেজি আমদানি করা পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে প্রায় ১৫০ টাকা।
সূত্রমতে, দেশে প্রতি বছর পেঁয়াজের স্থানীয় চাহিদা ২৬ থেকে ২৭ লাখ মেট্রিক টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত পেঁয়াজ দ্বারা চাহিদা ৭৫ থেকে ৮০ শতাংশ পূরণ করা হয়। পেঁয়াজ আমদানির প্রধান উৎস হচ্ছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত। ভারতে পেঁয়াজের উৎপাদন ঘাটতি রয়েছে। ফলে ভারত সরকার বাংলাদেশসহ কয়েকটি দেশে পেঁয়াজ রপ্তানি নিরুৎসাহিত করতে রপ্তানিতে সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে। বাংলাদেশ অধিক মূল্যে পেঁয়াজ আমদানির ফলে স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অপরদিকে, দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদা প্রায় ৮০ থেকে ৮৫ লাখ মেট্রিক টন। দেশে প্রতি বছর আলুর চাহিদার অতিরিক্ত আলুর উৎপাদন হয়। ফলে দেশ থেকে আলু রপ্তানি হয়ে থাকে। গত দুই উৎপাদন মৌসুম হতে প্রতিকূল আবহাওয়ার কারণে আলুর উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। ফলে চাহিদার চেয়ে জোগান কম হওয়ায় দেশে প্রতিনিয়ত আলুর দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।

এনবিআর সূত্রমতে, আলু ও পেঁয়াজÑএই দুটি ভোগ্যপণ্য দেশে উৎপাদিত হয়। ফলে দেশীয় আলু ও পেঁয়াজকে সুরক্ষা দিতে আমদানি করা আলু ও পেঁয়াজের ওপর অতিরিক্ত শুল্কারোপ করা হয়েছে। আলু আমদানি ৩৩ শতাংশ শুল্ককর আরোপিত রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেÑ২৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি, ৫ শতাংশ অগ্রিম কর ও ৩ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি। আর পেঁয়াজ আমদানিতে ১০ শতাংশ শুল্ককর আরোপিত রয়েছে। যার মধ্যে রয়েছেÑ৫ শতাংশ কাস্টমস ডিউটি ও ৫ শতাংশ রেগুলেটরি ডিউটি।
অপরদিকে, দেশের বাজারে আলু ও পেঁয়াজের দাম প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে দাম নিয়ন্ত্রণ করতে হলে একমাত্র উপায় হলো এ দুটি ভোগ্যপণ্য আমদানি করা।

আর আমদানি করতে হলে এ দুটি পণ্যের আমদানিতে শুল্ককর কমাতে হবে। শুল্ককর কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে সম্প্রতি এনবিআরকে চিঠি দেয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়েছে, দেশে চাহিদাতিরিক্ত আলুর উৎপাদন থাকায় ভোগ্যপণ্য হিসেবে আলু আমদানি করা হয় না। তাই আলু আমদানি থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণের বিষয়টি জড়িত নয়। চাহিদা অনুযায়ী উৎপাদন ঘাটতি থাকায় আলুর স্থানীয় মূল্য স্থিতিশীল করার জন্য সরকার আলু আমদানির অনুমতি প্রদান করে থাকে। বর্তমানে আলু আমদানিতে মোট ৩৩ শতাংশ শুল্ককর আরোপিত রয়েছে। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে বর্তমানে প্রতি মেট্রিক টন আলুর এফওবি মূল্য প্রায় ৩৫০ মার্কিন ডলার। এফওবি মূল্যের সঙ্গে ফ্রেইট, ইন্স্যুরেন্স ও ৩৩ শতাংশ শুল্ককর দেয়ার পর আলু আমদানি করা হলে স্থানীয় যে মূল্য দাঁড়াবেÑতা দিয়ে আলুর মূল্য স্থিতিশীল করা সম্ভব হবে না।

অপরদিকে, পেঁয়াজ রপ্তানিতে ভারত সরকার সর্বনিম্ন রপ্তানি মূল্য ৫৫০ ডলার নির্ধারণ করেছে। বিদ্যমান শুল্কে সরকার এ খাতে কাক্সিক্ষত রাজস্ব অপেক্ষা অধিক পরিমাণ রাজস্ব পাচ্ছেÑযা স্থানীয় বাজারে পেঁয়াজের মূল্য বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। বর্তমান প্রেক্ষাপট বিবেচনায় স্থানীয় বাজারে আলু ও পেঁয়াজের সরবরাহ বৃদ্ধি ও মূল্য স্থিতিশীল করার জন্য আমদানির পরিমাণ বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। সে লক্ষ্যে আলু আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ, নিয়ন্ত্রণমূলক শুল্ক অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। একইসঙ্গে পেঁয়াজ আমদানিতে কাস্টম ডিউটি ৫ শতাংশ অব্যাহতি প্রদান করা প্রয়োজন। আলু ও পেঁয়াজ আমদানিতে শুল্ককর কমানো হলে আমদানিকারকরা এই দুটি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে উৎসাহিত হবেন এবং স্থানীয় বাজারে স্থিতিশীলতা আসবে। সে জন্য এ দুটি পণ্যের শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নিতে এনবিআরকে অনুরোধ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে এনবিআরের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাওয়ার পর এনবিআর বিষয়টি যাচাই করছে। আলোচনাসাপেক্ষে আমদানিতে শুল্ককর কমানোর উদ্যোগ নেয়া হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০