Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:26 am

দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক: দায়িত্বজ্ঞানহীন কেউ যেন আগামীতে ক্ষমতায় না আসে সে জন্য ভোটদানে দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১৯৯১ সালের প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাবের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই ঘূর্ণিঝড়ের পর ওই দলটির প্রধান বলেছিলেন, ‘যত লোক মারা যাওয়ার কথা ছিল তত লোক মারা যায়নি।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আবার ওরকম কেউ যেন ক্ষমতায় না আসে, যত মানুষ মারা যাওয়ার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি বলে দায়-দায়িত্বহীনতার পরিচয় কেউ যেন না দেয় ভবিষ্যতে, সে জন্যও দেশবাসীকে সতর্ক থাকার অনুরোধ জানাচ্ছি।’

গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ‘আন্তর্জাতিক দুর্যোগ প্রশমন দিবস-২০২২’ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এ কথা বলেন। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে ৫০টি মুজিব কিল্লা, ৮০টি বন্যা আশ্রয়কেন্দ্র ও ২৫টি জেলা ত্রাণ গুদাম-কাম-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা তথ্যকেন্দ্র উদ্বোধন করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘৯১ সালে খালেদা জিয়া যখন ক্ষমতায়, তখন দেশে এক প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড় হলো। সেই ঘূর্ণিঝড়ের পর সংসদে দাঁড়িয়ে খালেদা জিয়া বলেছিলেন, যত মানুষ মরার কথা ছিল তত মানুষ মরেনি। আমি তখন তার কাছে জানতে চেয়েছিলাম, আর কত মানুষ মারা গেলে আপনার মনে হবে যে তত মানুষ মারা গেছে?’

তিনি বলেন, ’৯১-এর ওই দুর্যোগে শুধু তৎকালীন বিএনপি সরকারের দায়িত্বে অবহেলার কারণে বহু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল। দেশের মানুষ যে মরছে সেদিকে তাদের কোনো ভ্রুক্ষেপই ছিল না। অথচ পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল প্রায় দেড় লাখ মানুষের মৃত্যু এবং ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, ক্ষেতের ফসল, এমনকি চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর জাহাজ এবং বিমানবাহিনীর বিমান পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আওয়ামী লীগ তখন বিরোধী দলে থাকলেও সে সময় দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে ত্রাণ নিয়ে ছুটে যায়। পরবর্তী সময়ে সরকারে এসে সেই ঘূর্ণিদুর্গতদের জন্য খুরুশকুল আশ্রয়ণ প্রকল্প তৈরি করে তাদের পুনর্বাসনসহ সেই সময় কুতুবদিয়া থেকে ছোট্ট একটি ছেলেকে ঢাকায় এনে পুনর্বাসন করার একটি ঘটনাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন তিনি। মাতা-পিতাসহ সর্বস্ব হারানো সেই ছেলেটিকে ট্রমা সেন্টার থেকে চিকিৎসা করিয়ে নিজের কাছে রেখে দেন এবং একসময় বঙ্গবন্ধু মেমোরিয়াল ট্রাস্টে চাকরি দেন। পরে বেশ কয়েক বছর পর ছেলেটি আনোয়ারায় তার ভাইয়ের পরিবারের সন্ধান পায়।

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় অনন্য কৃতিত্বের দাবিদার স্বেচ্ছাসেবকদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। ৮৩ জন স্বেচ্ছাসেবককে ১০ হাজার টাকা, সনদ ও মেডেল দেয়া হয়। অনুষ্ঠানে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ৮৩ জনের মধ্যে নির্বাচিত দুজন জয়শ্রী রানী দাস ও মো. জসিম উদ্দিনের হাতে পদক তুলে দেন।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব কামরুল হাসান অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেন। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও চিত্রও অনুষ্ঠানে প্রদর্শিত হয়।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা মনে রাখতে হবে, আমাদের দেশের ভৌগোলিক অবস্থানের কথা চিন্তা করে আমাদের নিজেদের ব্যবস্থাটা (দুর্যোগ মোকাবিলায়) নিজেদেরই করে নিতে হবে। কাজেই উপকূলীয় অঞ্চলে বৃক্ষায়নের মাধ্যমে যত বেশি আপনারা একে সবুজে আচ্ছাদিত করতে পারবেন তত বেশি আমরা আমাদের দেশকে বাঁচাতে পারব।

এই বদ্বীপে আগামীর প্রজন্ম যেন সুন্দরভাবে বসবাস করতে পারে সে জন্য তার সরকার শতবর্ষ মেয়াদি ‘ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ প্রণয়ন করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, আরও কিছু পরিকল্পনাও আমরা গ্রহণ করেছি অর্থাৎ যেকোনো দুর্যোগ থেকে আমাদের দেশটাকে রক্ষার ব্যাপারে আমরা সবসময়ই সচেতন।

তার সরকার নদীর নাব্য বৃদ্ধিতে ড্রেজিং এবং নদীভাঙন প্রতিরোধে এবং পুরোনো জলাধার সংস্কারের পাশাপাশি নতুন নতুন জলাধার সৃষ্টিতেও নানা উদ্যোগ গ্রহণ করছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বদ্বীপ পরিকল্পনায় সারাদেশকে দুর্যোগের মাত্রার ওপর ভিত্তি করে ৬টি দুর্যোগ হটস্পটে বিভক্ত করা হয়েছে। এছাড়া দুর্যোগ ঝুঁকি হ্রাস, দুর্যোগের সাড়াদান প্রস্তুতি ও দুর্যোগ-পরবর্তী পুনরুদ্ধার ব্যবস্থা উন্নয়নে ২০২১-২৫ সাল মেয়াদের জন্য জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। পাশাপাশি আমরা ‘মুজিব জলবায়ু সমৃদ্ধি পরিকল্পনা-দশক ২০৩০’-এর কার্যক্রম শুরু করেছি।

প্রধানমন্ত্রী ভূমিকম্প ঝুঁকি প্রশমনে ঘরবাড়ি ও অট্টালিকা নির্মাণে অবশ্যই বিল্ডিং কোড ও আইন মানার এবং অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা রাখার কথা স্মরণ করিয়ে দেন।