সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডের সম্প্রসারিত বিকল্প হিসেবে বেসরকারি ১৯টি ডিপোকে নানা শর্তে লাইসেন্স দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। ডিপো থেকে রপ্তানি পণ্য যাতে দ্রুত বন্দরে যায়, সে বিষয়টিতে নজর রাখে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আর স্পর্শকাতর এসব স্থাপনায় নিয়োজিত শ্রমিকদের নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত হচ্ছে কি না, তা দেখভালের দায়িত্ব রয়েছে কলকারখানা অধিদপ্তর, ফায়ার সার্ভিস ও পরিবেশ অধিদপ্তরের। পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণে আইন ও বিধিমালা আছে, কিন্তু বেসরকারি ডিপোগুলোর কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির নিয়মিত মিটিং হয় না। এমনকি গত দুই বছর এ মিটিং হয়নি।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বেসরকারি ডিপোর কার্যক্রম, পরিদর্শন ও মান নিয়ে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোসহ ব্যবসায়ীদের সংগঠন চট্টগ্রাম চেম্বার, সিঅ্যান্ডএফ প্রতিনিধি ও শিপিং এজেন্ট প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গড়া হয় একটি কমিটি। প্রতি চার মাস পর চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি দলের ডিপো পরিদর্শন করে পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদন দেয়ার কথা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে।
অভিযোগ রয়েছে, ডিপোটি কোথায় স্থাপন করা হচ্ছে, কীভাবে এটি পরিচালনা করা হবে, আমদানি-রপ্তানি পণ্য হ্যান্ডেল করার মতো সক্ষমতা আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখে লাইসেন্স দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ; এরপর আর তদারকি করে না। আবার বন্দর কর্তৃপক্ষ চায় বন্দর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর অনুমোদন হোক। অপরদিকে কাস্টমস চায় ২০ কিলোমিটারের মধ্যে, আর ১৯টি ডিপো এরই মধ্যে লাইসেন্স পেয়ে পণ্য রপ্তানি করছে, যেগুলোর কোনোটিরই নিরাপত্তা ব্যবস্থা সন্তোষজনক নয়। ডিপোর ব্যাপারে শিপিং এজেন্ট ও ফ্রেইট ফরোয়ার্ডার্স অ্যাসোসিয়েশন এর আগে কয়েক দফা আপত্তিও জানিয়েছে। তারপরও তিনটি নতুন ডিপো হচ্ছে চট্টগ্রামে। কিন্তু নতুন নীতিমালা অনুযায়ী, স্থাপিত আইসিডিগুলোকে অবশ্যই শহরের ২০ কিলোমিটার দূরে স্থাপন করতে বলা হয়েছে। কিন্তু এই নীতিমালাও মানছে না নতুন হতে যাওয়া তিন বেসরকারি কনটেইনার ডিপো।
একটি দায়িত্বশীল সংস্থার প্রধান বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, চট্টগ্রাম বন্দর থেকে অন্তত ২০ কিলোমিটার দূরে থাকবে কনটেইনার ডিপো। কিন্তু বন্দরের পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে আটটি কনটেইনার ডিপো আছে। কীভাবে সম্ভব? কোনো
ধরনের সমন্বয় নেই। সমন্বয় না থাকায় ডিপোগুলোতে নানা অপব্যবস্থাপনা আছে, যার উদাহরণ বিএম ডিপোতে বিস্ফোরণ।
চট্টগ্রাম চেম্বার ও চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী কমিটির সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, বেসরকারি কনটেইনার ডিপোগুলো ব্যবস্থাপনার জন্য কমিটি আছে, কিন্তু নিয়মিত মিটিং হচ্ছে না। নিয়মিত মিটিং হলে ডিপোগুলোর ত্রুটি ও বিচ্যুতি আলোচনায় উঠে আসে। এতে ডিপোগুলোর সতর্ক হওয়ার সুয়োগ সৃষ্টি হয়।
বাংলাদেশ ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, বেসরকারি ডিপোর কার্যক্রম ও নিয়ন্ত্রণে চট্টগ্রাম বন্দরের নেতৃত্বে একটি ১১ জনবিশিষ্ট কমিটি আছে। গত দুই বছর করোনার কারণে মিটিং হয়নি। তবে আমাদের তদারকি কার্যক্রম চলমান আছে। আর সমন্বয় আছে। ডিপোতে কোনো অনিয়ম হলে তা দেখার দায়িত্ব তদারকি বিভিন্ন সংস্থা আছে। এ দুর্ঘটনার আগে কোনো সংস্থা তো আপত্তি তোলেনি। আর হাইডোজেন পার-অক্সাইড থেকে কখনও আগুন লাগে না।
এ বিষয়ে জানার জন্য গত মঙ্গলবার চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার ফখরুল আলমকে ফোন করা হলে তিনি ফোনে সাড়া দেননি।
উল্লেখ্য, চট্টগ্রাম বন্দরে গত বছরের ৩৩ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছে। এর মধ্যে ১৯টি বেসরকারি কনটেইনার ডিপোর মাধ্যমে ১৮ লাখ কনটেইনার হ্যান্ডলিং হয়েছিল। এর মধ্যে এছাক ব্রাদার্স ইন্ডাস্ট্রিজ, চিটাগং কনটেইনার, কিউএনএস কনটেইনার সার্ভিস, ট্রান্স কনটেইনার, কেঅ্যান্ডটি লজিস্টিক, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট, ওশান কনটেইনার, গোল্ডেন কনটেইনার, শফি মোটরস ও ইনকনট্রেড, পোর্ট লিংক লজিস্টিকস, কেডিএস লজিস্টিক, বিএম কনটেইনারসহ মোট ১৯টি বেসরকারি ডিপো আছে।