Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 8:53 pm

দায়-দেনা-লোকসানে বিপাকে গোল্ডেন সন

পলাশ শরিফ: গোল্ডেন সন। পুঁজিবাজারের প্রকৌশল খাতের কোম্পানি। একসময়কার ‘সোনার ছেলে’ এখন বিনিয়োগকারীদের কাছে দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে। টানা তিন বছরে প্রায় ৫৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা লোকসান গুনেছে। অন্যদিকে এ সময়ে ঋণের বোঝাও বেড়েছে প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। চলমান সংকটময় পরিস্থিতি থেকে ঘুরে দাঁড়ানো ‘বেশ কষ্টসাধ্য’ বলে মনে করছেন কোম্পানিটির উদ্যোক্তারা।

তথ্যমতে, ২০০৭ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় চট্টগ্রামভিত্তিক প্রকৌশল খাতের কোম্পানি গোল্ডেন সন। ২০১৫ সাল পর্যন্ত দৃশ্যত ভালো অবস্থানে ছিল কোম্পানিটি। এরপর ২০১৭ সালে কাস্টমস আইন ভঙ্গের অভিযোগে এনবিআরের কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের সঙ্গে ঝামেলায় জড়িয়েছে গোল্ডেন সন। এর জের ধরে কোম্পানিটির বন্ড লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছিল। সেইসঙ্গে বন্ড সুবিধার মাধ্যমে আনা কাঁচামালে উৎপাদিত পণ্য রপ্তানি না করে খোলাবাজারে বিক্রির অভিযোগে বড় অঙ্কের জরিমানা করা হয়েছিল কোম্পানিটিকে। এ নিয়ে টানাপড়েনে কোম্পানিটির উৎপাদনও বন্ধ ছিল। আইনি লড়াই শেষে কারখানার চাকা ঘুরলেও এখনও পুরোপুরি উৎপাদনে ফিরতে পারেনি কোম্পানিটি। সেইসঙ্গে ওই টানাপড়েনে সৃষ্ট ইমেজ সংকটও কোম্পানিটিকে বিপাকে ফেলেছে, যে কারণে এখন ব্যবসায়িকভাবে খারাপ সময় পার করছে গোল্ডেন সন।

গোল্ডেন সনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বেলাল আহমেদ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বড় ধরনের সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। কাঁচামালের মূল্যবৃদ্ধিসহ বেশকিছু কারণে উৎপাদন খরচসহ সব ধরনের ব্যয় বাড়ছে। এমনিতেই দেশের রপ্তানিমুখী কোম্পানিগুলো খারাপ সময় পার করছে। আমরাও সেই পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। এখন কোম্পানির উৎপাদন চলছে, কিন্তু সেই আয়ে সব খরচ মেটানো যাচ্ছে না। ব্যাংকের ঋণের বোঝা টানতে হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার পথ খোঁজা হচ্ছে। কিন্তু সেই পথটা সহজ নয়।’

আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৯ সালের জুন শেষে গোল্ডেন সনের উৎপাদিত পণ্য বিক্রয়লব্ধ আয় প্রায় ৭৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে, যা ২০১৭ সালের জুন শেষে ছিল প্রায় ৮২ কোটি ২০ লাখ টাকা। এ হিসেবে তিন বছরে কোম্পানিটির ওই আয় প্রায় আট কোটি ৮৫ লাখ টাকা বা ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ কমেছে। তবে উৎপাদন ব্যয় বৃদ্ধির কারণে ওই আর্থিক বছরেও (২০১৬-১৭) প্রায় ২১ কোটি ৮০ লাখ টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে গোল্ডেন সন। আর ২০১৯ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির মোট আয় প্রায় ৭৩ কোটি ৩৫ লাখ টাকায় নেমেছে। ব্যয় ও ব্যাংকঋণের বোঝা বইতে গিয়ে লোকসান কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সর্বশেষ আর্থিক বছর শেষে প্রায় ১৭ কোটি টাকা কর-পরবর্তী লোকসান গুনেছে গোল্ডেন সন।

এদিকে ২০১৬ সাল থেকে পরবর্তী তিন বছরে গোল্ডেন সনের দায়দেনাও উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। ২০১৭ সালের জুন শেষে কোম্পানিটির ব্যাংকঋণের অঙ্ক ২০০ কোটি টাকার নিচে ছিল, যা ২০১৯ সালের জুন শেষে প্রায় ২৮৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। মূলত দীর্ঘমেয়াদি ঋণ নেওয়ায় গোল্ডেন সনের ব্যাংকঋণ প্রায় এক-তৃতীয়াংশ বেড়েছে। কোম্পানির উৎপাদন ও বিক্রি কমে যাওয়ায় নিত্যকার ব্যয় মেটাতে পারলেও ব্যাংকের ঋণ পরিশোধে হিমশিম খাচ্ছে কোম্পানিটি।

উল্লেখ্য, চট্টগ্রামভিত্তিক কোম্পানি গোল্ডেন সন ২০০৫ সালে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদনে যায়। এর দু’বছর পরই পুঁজিবাজারে আসে কোম্পানিটি। প্রায় ১৭১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা পরিশোধিত মূলধনের কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৩৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের হাতে ১৮ দশমিক ৭৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ৪২ দশমিক ২৮ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। বিতর্ক ও লোকসানের কারণে কোম্পানিটির শেয়ারদর এখন ইস্যুমূল্যের অনেক নিচে। গত দু’বছরে কোম্পানিটির শেয়ারদর প্রায় অর্ধেকের বেশি কমেছে।