দারিদ্র্য বিমোচনে মূল্যস্ফীতি রোধে গুরুত্ব দিন

দীর্ঘ সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে দেশের শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার বেড়েছে। বেড়েছে আয়বৈষম্যও। উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে বেশির ভাগ। অনেক পরিবার রয়েছে খাদ্যনিরাপত্তাহীনতার ঝুঁকিতে। গ্রামের তুলনায় শহরের দরিদ্র মানুষ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে বেশি। ‘করোনা মহামারি ও পরবর্তী প্রতিবন্ধকতা কীভাবে বাংলাদেশের দারিদ্র্য, আয়বৈষম্য, শিক্ষা এবং খাদ্য সুরক্ষার ওপর প্রভাব ফেলছে’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট যৌথভাবে গবেষণাটি করেছে। এতে বলা হয়, ২০১৮ সালে শহরাঞ্চলে দারিদ্র্যের হার ছিল ১৬ দশমিক ৩ শতাংশ। ২০২৩ সালে সেটি বেড়ে ১৮ দশমিক ৭ শতাংশ হয়েছে। একই সময়ে গ্রামীণ দারিদ্র্যের হার ২৪ দশমিক ৫ শতাংশ থেকে কমে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ হয়েছে। সানেম-জিইডি ২০১৮ সালে দেশব্যাপী ১০ হাজার ৫০০টি খানায় একটি জরিপ চালায়। এর মধ্যে ৯ হাজার ৬৫টি খানায় গত বছরের অক্টোবর ও নভেম্বরে আবার জরিপ করা হয়। নতুন জরিপের ভিত্তিতে প্রস্তুত করা গবেষণা প্রতিবেদনের ফল মঙ্গলবার গণমাধ্যমে পাঠায় সানেম, সেটি প্রকাশিত হয়  গতকাল। সানেম বলেছে, জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) নির্দেশিকা অনুযায়ী এ খাদ্যনিরাপত্তাহীনতা পরিমাপ করা হয়েছে। যেহেতু এফএও বিজ্ঞানসম্মত এবং সরকারও এটিকে গুরুত্ব দিয়ে থাকে, তাই গবেষণা প্রতিবেদনের আলোকে নীতিনির্ধারণ করতে হবে আমাদের।

সুস্থ-সবল জনগোষ্ঠী দেশের সম্পদ। এ জনসম্পদই দুর্বল হতে চলেছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি অভিঘাতে। দরিদ্র পরিবারগুলো খাদ্যাভ্যাসে যে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে, তার প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের বিশেষ করে সীমিত ও নিম্ন আয়ের কর্মজীবীদের ওপর। খরচ কমাতে তারা মাংস, ডিম, ফলমূল প্রভৃতি খাওয়া বাদ দিচ্ছে। ফলে ন্যূনতম পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন পরিবারের সদস্যরা। দারিদ্র্যের হার বেড়ে যাওয়া, স্কুলে না যাওয়া শিশুর সংখ্যাও বাড়ছে, এমনটা উঠে এসেছে সানেমের প্রতিবেদনে। স্কুলে না যাওয়া ৪৩ দশমিক ২ শতাংশ শিশুর পরিবারের  আর্থিক সামর্থ্য নেই; ১৪ দশমিক ৮ শতাংশ শিশুর পরিবার তাদের অর্থ উপার্জনের জন্য কাজে নিযুক্ত করেছে।

দেশ দীর্ঘ সময় ধরে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। এর প্রভাব দরিদ্র মানুষের ওপর পড়েছে। তাই উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়া প্রয়োজন। মানুষকে সামাজিক সুরক্ষা বেষ্টনীতে আনার চেয়ে উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দারিদ্র্যের কারণে মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। যথাযথ সুযোগ-সুবিধার অভাবে মানবসম্পদে পরিণত হতেও পারে না। তাদের খণ্ডকালীন নয়, পূর্ণকালীন কর্মসংস্থান কিংবা আয়বর্ধক কর্মসূচিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে, কর্মহীন মানুষ নিরুপায় হয়েই জীবিকার তাগিদে অপরাধপ্রবণ হয়ে ওঠে। দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারের নেয়া কর্মসূচিকে অপ্রতুল নয়। তবে সুশাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, তদারকি না থাকায় সেগুলোর সুফল পাচ্ছে না প্রকৃত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। আইনের শাসন, সুবিচার, সুশাসন নিশ্চিতকরণে কার্যকর রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে দারিদ্র্য বিমোচন অবশ্যই সম্ভব।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০