নিজস্ব প্রতিবেদক: শীতে ফুটপাতে বসবাস করা ছিন্নমূল মানুষের চিত্র বুঝিয়ে দিচ্ছে দেশে দারিদ্র্যের সংখ্যা বেড়েছে। কভিডের কারণে মানুষ যে দুর্দশায় পড়েছিল, এখনও সে অবস্থা থেকে উঠে আসতে পারেনি। ছিন্নমূল মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। এমন মন্তব্য করেছেন বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন সেন্টারের (পিপিআরসি) নির্বাহী পরিচালক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হোসেন জিল্লুর রহমান।
রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি মিলনায়তনে গতকাল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্য-বিষয়ক বই ‘ব্যাংকিং অ্যালমানাক’-এর চতুর্থ সংস্করণের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ও ব্যাংকিং অ্যালমানাক গ্রন্থের এডিটোরিয়াল বোর্ডের চেয়ারম্যান ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, বর্তমানে অর্থনীতি নিয়ে দেয়া বক্তব্যে সঠিক চিত্র উঠে আসছে না। এজন্য সব আলোচনার আগে প্রকৃত শব্দটি যোগ করার প্রয়োজন। ব্যাংকিংয়ের কথা বলি, প্রবৃদ্ধির কথা বলি, দারিদ্র্যের কথা বলিÑ প্রতিটি ক্ষেত্রে এখন ‘রিয়েল’ শব্দটি যোগ করা জরুরি হয়ে পড়েছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নিয়ম-নীতি তৈরির কাজটি জবাবদিহির আওতায় আনা দরকার। দেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন তথ্য নিয়ে যে দ্বিধা ও বিঘœতা সৃষ্টি হয়েছে, তা নিরসনে ব্যাংকিং অ্যালমানাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সঠিক তথ্য অর্থনৈতিক সুশাসনে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। এর পাশাপাশি যে কোনো নীতি তৈরি করার পর সেগুলোকে জবাবদিহির মধ্যে আনতে হবে। ব্যাংকের আমানত ও ঋণ বিতরণে ৬ ও ৯ নিয়ে যা হচ্ছে, তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয় বলে তিনি মন্তব্য করেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান বলেন, বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ধাক্কা বাংলাদেশেও লেগেছে। বড় বড় অর্থনীতি সংকটের মধ্যে আছে। তুলনামূলকভাবে ছোট্ট অর্থনীতির দেশ হিসেবে আমরা বৈশ্বিক বিরূপ পরিস্থিতি মোকাবিলা করে টিকে থাকার চেষ্টা করে যাচ্ছি। আশা করি, আমরা বড় ধরনের ক্ষতি ছাড়াই পরিস্থিতি সামাল দেব। তিনি আরও বলেন, আমাদের খুব বড় ধরনের ব্যর্থতা ছিল না। কভিড আর যুদ্ধের পরিস্থিতিতে অন্যান্য দেশের তুলনায় ভালো অবস্থানে আছি।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ আর্থিক খাত নিয়ে গৃহীত সব কর্মকাণ্ড প্রকাশ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সবকিছু প্রকাশ্যে আনলে কিছুটা আলোচনা হলেও তার বিপদ কেটে যাবে। আর গোপন রাখলে তো আরও সমস্যা বাড়বে। আমাদের এখানে অর্থনীতি নিয়ে যত কাজ হচ্ছে, তার চেয়ে বেশি কথা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক খাতে সুশাসনের যা কিছু করণীয় তা দ্রুত দৃশ্যমান করা ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া প্রয়োজন। রাজনৈতিক নেতাদের মতো দেখছি, দেখবÑএ রকম চলবে না। বরং বিশেষ ক্ষমতা ব্যবহার করে বলতে হবে, এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি, নেব।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশ (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান নুরুল আমিন, অধুনালুপ্ত বাংলাদেশ শিল্পব্যাংকের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমানুল্লাহ প্রমুখ।