‘দালাল’ চক্রের কাছে জিম্মি মধুপুরের আনারস চাষিরা

প্রতিনিধি, টাঙ্গাইল: টাঙ্গাইলের মধুপুরে আনারস চাষি ও পাইকারি ক্রেতারা জিম্মি হয়ে আছেন ‘দালাল’ চক্রের কাছে। কৃষকরা তাদের উৎপাদিত আনারস দালাল চক্রের মাধ্যম ছাড়া বিক্রি করতে পারেন না। আবার দূর থেকে আসা পাইকারি ক্রেতারাও বাধ্য হন দালালদের মাধ্যমে আনারস কিনতে।
দালাল চক্র কৃষক ও পাইকারি ক্রেতা উভয় পক্ষের কাছ থেকে প্রতি মৌসুমে হাতিয়ে নিচ্ছে কোটি কোটি টাকা। দিনের পর দিন দালাল চক্রের কর্মকাণ্ড চললেও কৃষক বা ক্রেতা কেউ এ নিয়ে কথা বলতে সাহস পান না।স্থানীয়রা জানান, দেশের সবচেয়ে বেশি আনারস উৎপাদন হয় মধুপুর উপজেলায়। এ উপজেলার পাহাড়ি এলাকা লাল মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী। এ উপজেলায় জায়ান্টকিউ, হানিকুইন, এমডি-টুসহ বিভিন্ন জাতের আনারস চাষ হয়।

উপজেলা জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে মধুপুরে সাত হাজার ৬৬১ হেক্টর জমিতে আনারস চাষ হয়েছে। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে দুই লাখ ৮২ হাজার ৮৪৩ মেট্রিক টন।
কৃষি বিভাগ সূত্র জানায়, সারাবছর কমবেশি আনারস পাওয়া গেলেও জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাস পর্যন্ত আনারসের ভরা মৌসুম। মধুপুর গড় এলাকায় উৎপাদিত আনারস পাইকারি বিক্রির সবচেয়ে বড় কেন্দ্র হচ্ছে জলছত্র বাজার এবং গারো বাজার। এই দুই বাজারে প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ফল ব্যবসায়ীরা আসেন পাইকারি আনারস কিনতে। তাই মধুপুরের বিভিন্ন গ্রামের ছোট-বড় চাষিরা উৎপাদিত আনারস নিয়ে এ বাজার দুটিতে তোলেন।

কিন্তু কৃষক পাইকারদের কাছে সরাসরি আনারস বিক্রি করতে পারে না। তাদের বিক্রি করতে হয় দালালদের মাধ্যমে। জলছত্র বাজারে ‘কাঁচামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহকারী সমিতি’ নামে দালালদের একটি সংগঠন রয়েছে। এ সংগঠনের সদস্যরাই কৃষকের কাছ থেকে আনারস পাইকারদের কাছে বিক্রির মাধ্যম হিসেবে কাজ করেন। বাজারে তাদের নিজস্ব কার্যালয় রয়েছে। সমিতি সূত্র জানায়, তাদের সদস্য সংখ্যা চার শতাধিক। তবে শতাধিক সদস্য নিয়মিত আনারসসহ বিভিন্ন ফল ক্রয় বিক্রয়ের মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন। গত শুক্রবার দুপুরে সরেজমিন জলছত্র আনারসের পাইকারি বাজারে গিয়ে দেখা যায়, বিভিন্ন গ্রাম থেকে কৃষকরা এসেছেন

আনারস বিক্রি করতে। তেমনি পাইকারি ক্রেতারাও এসেছেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে। দালাল চক্র সক্রিয় রয়েছে বাজারে। তারা কৃষকদের কাছ থেকে পাইকারদের আনারস কিনে দিচ্ছেন।

একাধিক কৃষক জানান, তাদের কাছ থেকে কম দামে কিনে নিয়ে পাইকারদের কাছে দালালরা বেশি দামে বিক্রি করেন। দালাল ছাড়া কোনো কৃষক আনারস বিক্রি করতে পারেন না। নেত্রকোনার বারহাট্টা থেকে আসা ফল ব্যবসায়ী আওয়াল মিয়া জানান, প্রতিটি আনারস ২৫ টাকা দরে তিনি ৫০০ আনারস কিনেছেন। কিন্তু দালাল কৃষককে দিয়েছে ২২ টাকা করে। প্রতি আনারসে তিন টাকা নিয়ে গেছে। এভাবে মানভেদে সব আনারস থেকে কৃষক এবং পাইকার উভয়ের কাছ থেকে কমিশন নেন দালাল চক্র।


জলছত্র কাঁচামাল সংরক্ষণ ও সরবরাহকারী সমিতির অ্যাডহক কমিটির সদস্য মো. নাসির উদ্দিন বলেন, অনেক আগে থেকে জলছত্র বাজারে এ নিয়ম চলে আসছে। এতে কৃষক এবং ক্রেতা উভয়ের উপকার হয়।
গারো বাজার পাইকারি বিক্রয় কেন্দ্রে গিয়েও একই চিত্র দেখা যায়। স্থানীয় কৃষকরা জানান, এবার মানভেদে প্রতিনিট আনারস ১৫ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দালালদের মাধ্যমে বিক্রি করায় তারা সে দাম পাচ্ছে না। সেখানে কাঁচামাল ব্যবসায়ী সমিতি রয়েছে। তাদের মাধ্যমেই আনারস বিক্রি করতে হচ্ছে। ওই সমিতির সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন জানান, দূর থেকে আসা অনেক পাইকারি ব্যবসায়ীরা ঝামেলা এড়াতে তাদের সমিতির সদস্যদের মাধ্যমে আনারস কিনে থাকেন।

দুই বাজারের অন্তত ১০ জন সাধারণ কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দালাল চক্র না থাকলে কৃষক আনারসের দাম আরও বেশি পেত। আবার পাইকারি ব্যবসায়ীরাও কম দামে আনারস কিনতে পারত। এতে সাধারণ ক্রেতাদের হাতে অনেক কম দামে আনারস পৌঁছত।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০