শেয়ার বিজ ডেস্ক: দিনাজপুরের ১৩টি উপজেলায় ভুট্টা মাড়াইয়ের কাজ চলছে। কৃষকেরা বাম্পার ফলন ও ভালো দাম পাওয়ায় খুশি।
দিনাজপুর কৃষি অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. নুরুজ্জামান মিয়া জানান, ১৫ দিন ধরে জেলার কৃষকেরা কৃষি বিভাগের সরবরাহ করা ভর্তুকি মূল্যে প্রদান করা হারভেস্টসহ আধুনিক ভুট্টা মাড়াই যন্ত্র ব্যবহারে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা মাড়াই কাজ সম্পন্ন করতে পারছেন। দাবদাহ বেশি থাকায় মাড়াই করা ভুট্টা স্বল্প সময়ের মধ্যেই শুকানোর কাজ করতে পারছেন কৃষকেরা। আগামী ১৫ জুনের মধ্যে জেলার উৎপাদিত ভুট্টা মাড়াই করে কৃষকেরা ঘরে তুলতে পারবেন বলে তিনি আশা করছেন।
জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার আদর্শ কৃষক সোলাইমান আলী জানান, তিনি এ বছর দুই একর জমিতে ভুট্টা চাষ করেছেন। ফলন ভালো হয়েছে, ভুট্টা মাড়াই করে কাঁচা ভুট্টা জমি থেকেই ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে পেরে তিনিসহ তার এলাকার সব কৃষক খুব খুশি। দাবদাহের কারণে পাইকারেরা জমি থেকে কাঁচা ভুট্টা কিনে নিয়ে তাদের চাতালে স্বল্প সময়ের মধ্যে ভুট্টা শুকাতে সক্ষম হচ্ছে। বর্তমানে শুকনো ভুট্টা ৩৫ থেকে ৩৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছেন পাইকারেরা।
ভুট্টা ক্রয় করতে বড় কোম্পানি থাইল্যান্ডভিত্তিক সিপি এবং দেশীয় কোম্পানির বেশ কয়েকটি স্থানে বড় পরিসরে ভুট্টা ক্রয়ের ব্যবস্থা করেছেন। তারা শুকনো ভুট্টা পাইকারদের কাছ থেকে ক্রয় করছেন।
অনেক ব্যবসায়ী কাঁচা ভুট্টা কিনে তাদের চাতালে শুকানোর পর মজুত করে রাখছেন। ভুট্টা ব্যবসায়ী মোজাম্মেল হক জানান, প্রতিবছর শুকনা ভুট্টা মজুত করেন। মৌসুম শেষ হলে দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই ভুট্টা আট থেকে ১০ টাকা বেশি দামে কেজি ধরে বিক্রি করতে পারেন। তিনি বলেন, অনেক কৃষক তাদের উৎপাদিত ভুট্টা শুকিয়ে মজুত করে রাখেন। বাজারে চাহিদা ও দাম বাড়লে ভুট্টা বিক্রি করে তারা লাভবান হন। এভাবে ভুট্টা মজুত রেখে ব্যবসায়ী ও কৃষকেরা উভয়েই প্রতিবছর লাভবান হচ্ছেন। ফলে প্রতিবছর এ জেলায় ভুট্টার চাষ বেড়েই চলছে। ভুট্টা একটি লাভজনক ফসল হওয়ায় কৃষকদের ভুট্টা চাষে আগ্রহ বাড়ছে।
কৃষি বিভাগের সূত্রটি জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ৭৪ হাজার ৫০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। গত ৩১ মার্চ পর্যন্ত জেলায় ৭৮ হাজার ৬০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া ও কৃষি বিভাগের সহযোগিতায় লক্ষ্যমাত্রা অতিরিক্ত চার হাজার ১০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ অর্জিত হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
তিনি বলেন, গত কার্তিক মাস থেকে ফাল্গ–ন মাস পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ভুট্টা লাগানোর কাজ চলছে। আগাম জাতের ভুট্টা পেকেছে। কৃষকেরা তাদের ক্ষেতের ভুট্টা উত্তোলন ও মাড়াইয়ের কাজ পুরোদমে শুরু করেছেন।
কৃষকরা ভালো ফলনের আশায় এবার উচ্চ ফলনশীল ভুট্টা জাত চাষ করেছেন। বিরল উপজেলার ফরাক্কা বাঁধ গ্রামের ভুট্টাচাষি নাজমুল ইসলাম জানান, প্রথমে ভুট্টা চাষের জমিতে ২০ কেজি পটাস, ২৫ কেজি ফসফেট, ১০ কেজি জিপ সার, এক কেজি বরন, এক কেজি দানাদার ও এক কেজি সালফার মাটির সঙ্গে মিশিয়ে জমি তৈরি করেন চাষিরা। পরে বিঘাপ্রতি তিন কেজি ভুট্টার বীজ রোপণ করেন। এক মাসের মাথায় আইল বেঁধে বিঘাপ্রতি ২৫ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি ডেপ ও দুই কেজি থিওভিট ছিটিয়ে ক্ষেতে পানি সেচ দেন তারা। বীজ রোপণের ৯০ থেকে ১০০ দিনের মধ্যে ভুট্টা কাটা ও মাড়াই করে থাকেন কৃষকরা।
ভুট্টার বীজ রোপণ থেকে কাটা-মাড়াই পর্যন্ত বিঘাপ্রতি কৃষকের খরচ হয় ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা। ভালো ফলন হলে প্রতি বিঘায় ৪০ থেকে ৫০ মণ ভুট্টা উৎপাদিত হয়।