দিনে ছয় ঘণ্টা বিনামূল্যে শ্রম দেন নারীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক:বাংলাদেশের একজন নারী প্রতিদিন গড়ে প্রায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা সেবামূলক কাজ করেন বিনা মূল্যে। এ কাজের কোনো পারিবারিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক মূল্যায়ন পান না তারা। দেশের নীতি ও আইনে নারীর এসব ঘরোয়া কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টনের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট ব্যবস্থা নেই।

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চারটি দেশের নীতি পর্যালোচনা করে এমন তথ্য উপস্থাপন করেছে অ্যাকশনএইড বাংলাদেশ। সংস্থাটি বলছে, বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের মূল প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে তাদের ওপর গৃহস্থালির সেবামূলক কাজের অসম চাপ। ঘরের কাজকে শুধু নারীর কাজ হিসেবে দেখা হয়। এমনকি ঘরের কাজকে কাজ হিসেবেই ধরা হয় না। গতকাল শনিবার রাজধানীর গুলশানের লেকশোর হোটেলে ‘দক্ষিণ এশিয়ায় নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন এবং গৃহস্থালির সেবামূলক কাজ: নীতি পর্যালোচনা’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। প্রতিবেদনে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তানে নীতি ও আইনে নারীর সেবামূলক কাজের তুলনামূলক বিশ্লেষণ দেওয়া হয়।

প্রতিবেদনে দেখা গেছে, প্রতিবেশী ভারতের তুলনায় নারীর ঘরোয়া কাজের মূল্যায়নের ক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ। তবে নেপালের চেয়ে কিছুটা এগিয়ে থাকার চিত্র দেখা গেছে।

অ্যাকশনএইডের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির, ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের প্রধান গবেষক ড. সিমিন মাহমুদ, বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনিন আহমেদ, সার্ক ও বিমসটেকের মহাপরিচালক মো. শামসুল হক,  সার্ক কৃষিকেন্দ্রের পরিচালক ড. শেখ মোহাম্মদ বখতিয়ার প্রমুখ এ সময় উপস্থিত ছিলেন। গবেষণার ফলাফল তুলে ধরেন অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের ম্যানেজার মো. হেলাল উদ্দিন।

গবেষণায় বলা হয়, নেপালের নারীরা গৃহস্থালির সেবামূলক কাজে দৈনিক ছয় দশমিক ছয় ঘণ্টা সময় ব্যয় করেন। বাংলাদেশের নারীদের প্রতিদিন ছয় দশমিক তিন ঘণ্টা সময় দিতে হয়। আর ভারতের নারীরা ব্যয় করেন দৈনিক পাঁচ দশমিক এক ঘণ্টা। অন্যদিকে পরিবারে সেবামূলক বিনা মূল্য শ্রমে নেপালি পুরুষরা ব্যয় করেন দুই দশমিক দুই ঘন্টা। বাংলাদেশি পুরুষরা এক দশমিক এক ঘণ্টা এবং ভারতে মাত্র শূন্য দশমিক চার ঘণ্টা। অর্থাৎ ভারতে পারিবারিক বিনা মূল্যের কাজে পুরুষের অংশগ্রহণ এক ঘণ্টারও নিচে। এ বিষয়ে পাকিস্তানের তথ্য দেওয়া হয়নি গবেষণায়।

এ সভায় বক্তারা বলেন, আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী একজন ব্যক্তির সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৪৮ ঘণ্টা কাজ করার কথা। কিন্তু এই তিন দেশের জরিপ বলছে নারীরা পুরুষের তুলনায় বেশি সময় কাজ করছে, এজন্য তারা সময় সংকুলানের চাপে পড়ছে। এ কারণে নারীরা ঘুম, বিশ্রাম বা ব্যক্তিগত সেবার জন্য কম সময় পাচ্ছে।

প্রতিবেদনে নারীর ক্ষমতায়ন ও উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশের বিদ্যমান নীতি ও আইনের মধ্যে সুনির্দিষ্টভাবে পরিবারের সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন, স্বীকৃতি ও পুনর্বণ্টনের কোনো বিষয় নেই বলে উল্লেখ করা হয়। এছাড়া রাষ্ট্রের বাজেট কিংবা জিডিপিতেও সেবামূলক কাজের বিষয়ে স্বীকৃতি বা মূল্যায়ন নেই। ফলে ঘরে যখন একজন নারী অমূল্যায়নের শিকার হন।

বক্তারা বলেন, তৃণমূল নারীরা যখন মজুরিভিত্তিক শ্রমে প্রবেশ করে তখন তাদের দ্বিগুণ কাজের চাপ মোকাবিলা করতে হয়। এক্ষেত্রে নারী ও কিশোরীরা তাদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা, সুষম কাজ ও বিশ্রামের সময় ইত্যাদি মৌলিক অধিকারগুলো থেকে বঞ্চিত হন।

আলোচনায় অংশ নিয়ে বিআইডিএসের জ্যেষ্ঠ গবেষক ড. নাজনিন আহমেদ বলেন, ‘নারীর ঘরের সেবামূলক কাজের মূল্যায়ন ও স্বীকৃতি না থাকায় তার ক্ষমতায়নের পথে বাধা তৈরি হচ্ছে। তাই এ কাজের একটা আলাদা হিসাব করতে হবে এবং সেটা হতে হবে সুনির্দিষ্ট। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থাতেও নারীদের দেখানো হয়েছে গৃহস্থালি কাজ করার মূল ব্যক্তি হিসেবে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে উঠলে মেয়েদের পড়ানো হয় গার্হস্থ্য অর্থনীতি এবং ছেলেদের পড়ানো হয় কৃষিব্যবস্থা। শিক্ষাব্যবস্থায় এমন লিঙ্গ-বৈষম্য করা ঠিক না।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০