নিজস্ব প্রতিবেদক: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খাদ্য খাতের কোম্পানি এমারাল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড উৎপাদনে এসেছে। গত জানুয়ারি মাসে শেরপুরের ফ্যাক্টরিতে উৎপাদন শুরু করেছে কোম্পানিটি। জাপানি বিনিয়োগে পরিচালিত মিনোরি বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালনায় আনুষ্ঠানিকভাবে স্পন্দন রাইস ব্রান অয়েল বাজারজাত হতে যাচ্ছে। গত মঙ্গলবার রাজধানীর একটি হোটেলে স্পন্দন রাইস ব্রান অয়েলের মোড়ক উšে§াচন করা হয়।
২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে মিনোরি বাংলাদেশ নামে জাপানি একটি কোম্পানি এমারেল্ড অয়েলের ৭ দশমিক ৮০ শতাংশ শেয়ার কিনে মালিকানায় আসে।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও মিনোরি বাংলাদেশের পরিচালক আফজাল হোসেন বলেন, ‘এমারেল্ড অয়েলের দুটি প্রোডাকশন ইউনিট আছে। এর একটির ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করার ক্ষমতা ১৮০ টন, অপরটির ক্ষমতা ১৫০ টন। ইউনিট দুটির দৈনিক মোট উৎপাদন ক্ষমতা ৩৩০ টন। গ্যাসের অপর্যাপ্ত সরবরাহের কারণে শুধু ১৮০ টনের ইউনিটটি সচল আছে। এই ইউনিটে ধানের কুঁড়া ক্র্যাশ করে ৩৫ মেট্রিক টনের মতো অপরিশোধিত তেল পাওয়া যায়। এখান থেকে দৈনিক পরিশোধিত তেল পাওয়া যায় প্রায় ২৬ মেট্রিক টন। এ সক্ষমতা নিয়ে আমরা প্রতিদিন প্রায় ২৬ মেট্রিক টন তেল বাজারজাত করতে পারব।’
আফজাল হোসেন বলেন, ‘দিনের পুরো সময় গ্যাস সরবরাহ পেলে আমরা পুরোদমে উৎপাদনে ফিরতে পারব। এমন সহায়তা পেলে আশা করছি শিগগিরই শেয়ারহোল্ডারদের ভালো ডিভিডেন্ড দিতে পারব।’
এমারেল্ড এমডি বলেন, ‘উৎপাদন শুরুর পর আমাদের দুটি বাধার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। প্রথমটি হলো গ্যাসের সংকট। দ্বিতীয়টি ব্যাংক লোন পুনঃতফসিল। কোম্পানিটি যখন বন্ধ হয়ে যায়, তখন তিতাস গ্যাসের বকেয়া ছিল ৩২ লাখ টাকা। পরবর্তীতে ২০২১ সালে তিতাস গ্যাস লাইনচার্জসহ এক কোটি ৬৩ লাখ টাকা বকেয়া বিলের একটি স্টেটমেন্ট দেয়। এ টাকার পুরোটাই শোধ করা হয়েছে।’
অনুষ্ঠানে বিএসইসি কমিশনার রুমানা ইসলাম বলেন, ‘বর্তমান কমিশনের প্রচেষ্টায় একটি বন্ধ কোম্পানি পুনরায় চালু হয়েছে। ইতোমধ্যে এটি ভালো করছে। কোম্পানির যে লক্ষ্য সেটি অর্জনের মধ্য দিয়ে বিনিয়োগকারীদের ভালো লভ্যাংশ দিতে পারবে বলে বিশ্বাস করি।’
বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক সাইফুর রহমান বলেন, ‘কোম্পানিটি বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কমিশন থেকে আমাদের বলা হলো, কিছু করার জন্য। মিনোরির মামুন মিয়া এলেন। তখন আমরা বললাম, লেটস স্টার্ট। এমডি বলে গেছেন, লভ্যাংশ দেবেন। আমরা আশা করি হবে। এই কোম্পানির কিছুই ছিল না। ২০২২ জানুয়ারি প্রডাকশন শুরু করে ৪৫ কোটি টাকার মতো তেল বাজারজাত করেছে। আমি মনে করি, বিনিয়োগকারীদের জন্য সুখবর নিয়ে আসবে। স্পন্দন পুঁজিবাজারের স্পন্দন ফিরিয়ে আনবে বলে বিশ্বাস করি।’
এছাড়া বক্তব্য রাখেন এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মো. শফিকুল ইসলাম, মিনোরি বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মিয়া মামুন, ল্যাবএইড হাসপাতালের ক্লিনিক্যাল খাদ্য তত্ত্ববিদ ডা. নুসরাত জাহান দীপা ও ল্যাবএইড হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট কার্ডিয়াক বিভাগের ডা. মো. লোকমান হোসেন।
বিএসইসির বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর কোম্পানিটিকে আবারও উৎপাদনে ফিরে আনার উদ্যোগ নেয়। এ লক্ষ্যে গত বছর এমারেল্ড অয়েলের পরিচালনা পর্ষদ পুনর্গঠন করে বিএসইসি।
পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সাবেক সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ শহিদুল হককে চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে বিএসইসি। পরিচালনা পর্ষদের অন্যান্য স্বাধীন পরিচালকরা হিসেবে নিয়োগ পান বিআইবিএমের প্রশান্ত কুমার ব্যানার্জি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মোহাম্মদ গোলাম সারওয়ার, সজিব হোসেইন ও সন্তোষ কুমার দেব।
এমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড ২০০৮ সালে পুঁজিবাজারে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ২০১১ সালে স্পন্দন-ব্র্যান্ডেড রাইস ব্র্যান অয়েল উৎপাদন শুরু করে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটি পুঁজিবাজার থেকে আইপিওর মাধ্যমে ২০ কোটি টাকা উত্তোলন করে। লোকসান এবং কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা না করার কারণে কোম্পানিটির শেয়ার ২০১৮ সাল থেকে ‘জেড’ ক্যাটাগরির অধীনে লেনদেন করা হচ্ছিল। ২০১৬ সালে এমারেল্ড অয়েল ১৮ দশমিক দুই কোটি টাকা লাভ করে এবং শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ বোনাস লভ্যাংশ দেয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) তথ্য অনুযায়ী, গত সোমবার কোম্পানিটির প্রতিটি শেয়ারের দর ছিল ৪৪ টাকা ৬০ পয়সা।