ডক্টর মুহম্মদ রুহুল আমিন: বুখারি শরিফের সংকলকের ওস্তাদ হজরত নুয়াইম বিন হাম্মাদ তার ‘কিতাবুল ফিতান’ নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, হজরত আলী কারামাল্লাহু ওয়াজহাহ্ (অর্থ: আল্লাহতায়ালা উনার মুখখানা উজ্জ্বল করুন) বলেন: ‘ইমাম মাহদি ততক্ষণ পর্যন্ত আসবেন না, যতক্ষণ না সাদা মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ ও লাল মৃত্যুর মাধ্যমে পৃথিবীর তিন ভাগের এক ভাগ মানুষ মারা যাবে এবং তিন ভাগের এক ভাগ অবশিষ্ট থাকবে।’ পৃথিবীতে বর্তমানে প্রায় ৮০০ কোটি লোক বাস করে। হাদিস অনুযায়ী, পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ লোক যদি মারা যায়, তাহলে সেই হিসাবে পাঁচশ কোটি লোক মারা যাবে এবং এটা হবে ইমাম মাহদি আসার আগেই। শেষ জামানার এই মৃত্যুগুলোকে হাদিসে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছে। যথা. (১) সাদা মৃত্যু: সাদা মৃত্য হচ্ছে সেই মৃত্যু যাতে রক্তপাত হয় না। যেমন: ডেঙ্গু, করোনা, দুর্ভিক্ষ ইত্যাদি। (২) লাল মৃত্যু: লাল মৃত্যু হচ্ছে যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে রক্তপাতের ফলে যে মৃত্যু হয়। তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বা নিউক্লিয়ার যুদ্ধ: একটা নিউক্লিয়ার বোমায় কোটি কোটি লোক মারা যাবে। এই ভাবে ডেঙ্গু, করোনা, দুর্ভিক্ষ, ভূমিধস, হারাজ ও নিউক্লিয়ার যুদ্ধের মাধ্যমে ২০২৬ সালের মধ্যেই পৃথিবীর পাঁচশ কোটির অধিক লোক মারা যাবে বলে হাদিসে ইঙ্গিত পাওয়া যায়। ইতোমধ্যেই সাদা মৃত্যু করোনায় সত্তর লাখ মানুষ মারা গেছে, তাতেই সারা দুনিয়াব্যাপী কি পরিমাণ ভয়ভীতির অবস্থা সৃষ্টি হয়েছিল এবং মৃত্যুর ভয়ে সবকিছু তালাবন্ধ করে মানুষ ঘরের মধ্যে অবস্থান নিয়েছিল। তাহলে যখন কোটি কোটি মানুষ মারা যেতে থাকবে, তখন কি ভয়ানক অবস্থা হবে? যেহেতু ইমাম মাহদি (আ.) আসার আগেই এই পরিমাণ মানুষ মরবে, তাই ইমাম মাহদি আসার সম্ভাবনা কবেÑএ ব্যাপারে হাদিসে কী কী ইঙ্গিত আছে, সেই সমস্ত হাদিসগুলো ও আধুনিক বিজ্ঞানের নানা তথ্য উপাত্ত নিয়ে দীর্ঘ গবেষণা করে আমি যা কিছু পেয়েছি, সেই ফলাফল বিস্তারিতভাবে এখানে ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো: নিচের ৬টি হাদিসে উল্লেখ আছে যে, যে বছর রমজানে সূর্যগ্রহণ এবং চন্দ্রগ্রহণ হবে, সেই বছরই ইমাম মাহ্দির আবির্ভাব হবে। হাদিসে এটাও উল্লেখ আছে যে, মহাবিশ্বের শুরু হতে শেষ পর্যন্ত এ রকম চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণের ঘটনা মাত্র একটি বছরেই ঘটবে। হাদিসগুলো এই : (১) ‘আল বুরহান ফি আলামাতিল মাহদি’ গ্রন্থের ৩৮ পৃষ্ঠায় আল্লামা মুত্তাকি (র.) একটি হাদিস উদ্ধৃত করেছেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে বছর রমজান মাসের প্রথম দিকে সূর্যগ্রহণ এবং রমজান মাসের শেষের দিকে চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে।’ (২) ‘আল কাওলুল মুখতাছার’ গ্রন্থের ৫৩ পৃষ্ঠায় একটি হাদিস উল্লেখ রয়েছে, রাসুলুল্লাহ্ (সা.) বলেছেন, ‘যে বছর রমজান মাসে দুটি গ্রহণের ঘটনা অনুষ্ঠিত হবে, সেই বছরই ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে।’ (৩) ইমামুল আকবার আলী বিন ওমর আল দারাকুতনির ‘সুনানে দারাকুতনি’-তে একটি হাদিস সংকলিত হয়েছে, মোহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আল হানাফিয়্যাহ (র.) বলেছেন, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আবির্ভাবের দুটি নিদর্শন রয়েছে, যা আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডল সৃষ্টির পর থেকে কখনও দৃষ্টিগোচর হয়নি, নিদর্শন দুটি হলো: যে বছর চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহ্দির আবির্ভাব হবে।’ (৪) ইমাম রব্বানি মুজাদ্দেদী আলফেসানী (রহ.)-এর ‘মাকতুবাত-এ-রব্বানী’ (রব্বানির পত্রাবলী)-র ৩৮০ নম্বর পত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘যে বছর রমজান মাসের প্রথম দিকে সূর্যগ্রহণ ঘটবে এবং রমজান মাসের ১৪ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ঘটবে, সেই বছরই ইমাম মাহদির আবির্ভাব হবে।’ (৫) ইমাম কুরতুবী (র.) রচিত কিতাব ‘মুখতাছার তাজকিয়াহ্’ গ্রন্থের ৪৪০ পৃষ্ঠায় উল্লেখ করা হয়েছে যে, সাইয়্যেদেনা ইমাম মাহদি (আ.)-এর আগমনের আগে দুটি গ্রহণ রমজান মাসেই ঘটবে। (৬) নুয়ায়েম ইবনে হাম্মাদ (র.) রচিত ‘কিতাবুল ফিতান’ গ্রন্থেও সতর্কতামূলক বাণী উল্লেখ করা হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যখন রমজান মাসে সূর্যগ্রহণ ও চন্দ্রগ্রহণের ঘটনা প্রত্যক্ষ করবে, তখন এক বছরের খাদ্যসামগ্রী সংগ্রহ করে রাখবে।’ উপরোক্ত হাদিসগুলোতে বলা হয়েছে, যে বছর রমজান মাসে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হবে সেই বছরই ইমাম মাহাদির আগমন ঘটবে। সেই বছরটা যে কবে হবে তা আল্লাহপাকের অশেষ রহমতে পৃথিবীর মধ্যে আমি (ডক্টর মুহম্মদ রুহুল আমিন, বর্তমানে বুয়েটের শিক্ষক)-ই সর্বপ্রথম দীর্ঘ গবেষণার মাধ্যমে খুঁজে বের করতে পেরেছি। এজন্য আল্লাহতায়ালার অশেষ শুকরিয়া আদায় করছি। এই সালটা আমি কীভাবে বের করেছি সেটা এখানে বর্ণনা করা হলো: (১) প্রথমে প্রতি বছর রমজান কোন তারিখে শুরু হবে সেটা বের করেছি। যেমন ২০১৯ সালের রমজান কত তারিখে শুরু হবে, ২০২০ সালে কত তারিখে, ২০২১ সালে কত তারিখে ইত্যাদি। এভাবে ২০৫০ সাল পর্যন্ত একটি লিস্ট তৈরি করেছি। (২) প্রতি বছর চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ কত তারিখে হবে সেটা বের করার জন্য ঘঅঝঅ-এর ডাটা ব্যবহার করেছি যেখানে আগামী ১০০ বছরে কোন বছর কত তারিখে চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণ হবেÑতার ডাটা উল্লেখ আছে। ঘঅঝঅ-এর ওয়েবসাইটে গিয়ে যে কেউ ইচ্ছা করলে সহজেই আমার দেয়া ডাটাগুলো চেক করে নিশ্চিত হতে পারবেন। ঘঅঝঅ (ঘধঃরড়হধষ অবৎড়হধঁঃরপং ধহফ ঝঢ়ধপব অঁঃযড়ৎরঃু) ‘নাসা’ হচ্ছে পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বড় মহাকাশ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। এই নাসা বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ব্যয় করে বড় বড় সরকারী প্রজেক্টের মাধ্যমে নির্ভুলভাবে গবেষণা করে বলতে পারে যে, প্রতি বছর কোন তারিখে, কত মিনিটে ও কত সেকেন্ডে চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হবে। নাসা যেটা বলে প্রতি বছর সেই তারিখ মোতাবেক চন্দ্র ও সূর্য গ্রহণ হয়ে থাকে, একদিন আগেও হয় না বা এক দিন পরেও হয় না। এত নির্ভুলভাবে নাসার বিজ্ঞানীরা হিসাব করতে পারে। (৩) এরপর রমজান মাসের তালিকা এবং চন্দ্রগ্রহণ ও সূর্যগ্রহণের তালিকা পাশাপাশি রেখে দেখা গেল যে, ২০২৬ সালে যে তারিখে রমজান শুরু হবে সেই তারিখে সূর্যগ্রহণ হবে এবং ওই বছর রজমানের ১৫ তারিখে চন্দ্রগ্রহণ হবে। ২০২৬ সালে রমজান শুরু হবে ১৭ ফেব্রুয়ারি এবং নাসার হিসাব অনুযায়ী ২০২৬ সালে ১৭ই ফেব্রুয়ারি সূর্যগ্রহণ হবে। ওই বছর রমজানের ১৫ তারিখ পরে ৩ মার্চ। আর নাসার হিসাব অনুযায়ী চন্দ্রগ্রহণ হবে ৩ মার্চ। অর্থাৎ হাদিস ও নাসার তথ্য অনুযায়ী ২০২৬ সালে ইমাম মাহ্দি (আ.)-এর আবির্ভাবের সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি। ইমাম মাহ্িদ সঠিকভাবে কবে আসবেনÑএটা আল্লাহ্পাক ছাড়া কেউ বলতে পারবে না। তবে হাদিসে যে ইঙ্গিতটা উল্লেখ করা আছে, সেই হিসাবে ২০২৬ সালে ইমাম মাহ্দি (আ.)-এর আবির্ভাবের সম্ভাবনা কতটুকু সেটাই উল্লেখ করেছি মাত্র। সমস্ত জ্ঞানের অধিকারী একমাত্র আল্লাহ্তায়ালা। মুসান্নাফ আব্দুর রাজ্জাক, ইবনে মায ও মিশকাত শরিফের হাদিসে নবী করীম (সা.) বলেছেন, ‘দাজ্জালের আবির্ভাবের আগে তিনটি দুর্ভিক্ষের বছর আসবে। উহাতে মানুষকে দুঃসহ অনাহার ও অনশন ভোগ করতে হবে। প্রথম বছর আল্লাহর আদেশে এক-তৃতীয়াংশ বৃষ্টির বর্ষণ এবং পৃথিবী এক-তৃতীয়াংশ শস্যাদির উৎপাদন বন্ধ করে দেবে। তৃতীয় বছর আল্লাহর আদেশে আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিবে। এটা হতে এক বিন্দু বৃষ্টিও বর্ষিত হবে না। সেই বছর আল্লাহর আদেশে পৃথিবী শস্যাদির উৎপাদন সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দিবে। এটা হতে কোনো সবুজ উদ্ভিদই উৎপন্ন হবে না। ফলে আল্লাহ যে (স্বল্প সংখ্যক) পশুকে (জীবিত রাখতে) চাইবেন, তা ব্যতীত সব তৃণভোজী পশুই ধ্বংস হয়ে যাবে।’ পৃথিবীর বিভিন্ন সাগর নদী জলাশয় থেকে প্রতিনিয়ত জলীয়বাষ্প উৎপন্ন হচ্ছে। এই জলীয় বাষ্প বাতাসে ভেসে বেড়ায় ও পৃথিবী থেকে উপরে উঠে মেঘে পরিণত হয়। যখন বৃষ্টির সময় হয় তখন সেখানে হঠাৎ বায়ুমণ্ডলের চাপ কমে যায়, ফলে তাপমাত্রা কমে যায়। বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে মেঘের তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি হতে হয়। ষেড়নধষ ডধৎসরহম ও অন্যান্য প্রাকৃতিক কারণে ভূ-পৃষ্ঠের তাপমাত্রা এত বেশি হয়ে যাচ্ছে যে, মেঘের তাপমাত্রা কমে শূন্য ডিগ্রির কাছাকাছি আসতে পারছে না। ফলে বাতাসে জলীয়বাষ্প থাকা সত্ত্বেও সেগুলো জমাট বদ্ধ হয়ে মেঘও হচ্ছে না, বৃষ্টিও হচ্ছে না। এখন থেকে প্রত্যেক বছর বৃষ্টি কমতে থাকবে। প্রতি বছর বৃষ্টি কমতে কমতে ঠিক দাজ্জাল আসার তিন বছর আগে থেকে সারা পৃথিবীর মোট বৃষ্টিপাত তিন ভাগের এক ভাগ কমে যাবে। দ্বিতীয় বছর তিন ভাগের দুই ভাগ কমে যাবে। যে বছর দাজ্জাল আসবে সে বছর কোনো বৃষ্টি হবে না। হাদিস অনুযায়ী দাজ্জাল ইমাম মাহদির কয়েক বছর পরে আসবে, অর্থাৎ ২০২৬ সালে যদি ইমাম মাহদির আবির্ভাব ঘটে, তবে দাজ্জাল আসবে আরো পরে। দাজ্জাল আসার আগে পৃথিবীতে বৃষ্টি কেন বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, তার কারণ হলো এই যে, বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে পৃথিবীতে ফসল উৎপাদন কম হবে। মানুষ এবং অন্যান্য জীবজন্তু ব্যাপকহারে মারা যেতে থাকবে। বৃষ্টিপাত বন্ধের ফলে পৃথিবীতে যে মহাবিপর্যয়ের সৃষ্টি হবে, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না। কারণ পৃথিবী এত উত্তপ্ত হবে যে, মানুষ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে। এক দিকে তীব্র খাদ্যাভাব ও অন্য দিকে প্রচণ্ড গরমে পৃথিবীতে বসবাস করা দুর্বিষহ হয়ে উঠবে। মানুষ এবং জীবজন্তু কঠিন অবস্থায় পড়ে যাবে। দাজ্জালের লোহার শিকল খুলে দেয়া হবে এবং সে সারা পৃথিবীতে বিচরণ করবে এবং মানুষের সামনে এসে ঈমান হরণ করে নেবে। যেহেতু পর পর তিন বছর অনাবৃষ্টির ফলে পৃথিবীর মানুষ ও জীবজন্তু চরম খাদ্যভাবে পড়ে যাবে। তাই ওপরে বর্ণিত ৬নং হাদিসে খাদ্য সঞ্চয় করে রাখার কথা বলা হয়েছে। মানুষ খাদ্য ও পানির অভাবে যখন কঠিন অবস্থা হবে, তখন দাজ্জাল তার বিশাল সেনাবাহিনী নিয়ে এবং খাদ্যের ভাণ্ডার নিয়ে সুমধুর সুরে গান করতে করতে বিভিন্ন শহরে বন্দরে যাবে। গান পাগলা মানুষ মধুর বাদ্যযন্ত্র শুনে বলতে থাকবে, এই সুমধুর আওয়াজ কোথা থেকে আসছে। বিভ্রান্ত মানুষগুলো দলে দলে দাজ্জালের সামনে এসে হাজির হবে। দাজ্জাল ক্ষুুধার্ত মানুষগুলোকে খাদ্য ও পানি সরবরাহ করবে, মানুষ খাদ্য ও পানি পান করে তৃপ্ত হবে। দাজ্জাল তখন বলবে, আমি তোমাদেরকে খাদ্য ও পানি দান করেছি ও শান্তি দিয়েছি, আমি কি তোমাদের প্রভু নয়? বিভ্রান্ত মানুষ তখন সমস্বরে বলবে, হ্যাঁ, তুমিই তো আমাদের প্রভু, তুমি না এলে আমরা এ অবস্থা হতে বাচতে পারতাম না। এভাবে তারা দাজ্জালের ফিতনায় পড়ে ঈমান হারাবে। বর্তমানে যে যুদ্ধ চলছে, এই যুদ্ধ বন্ধ করার মতো কোনো শক্তি পৃথিবীতে নেই। হাদিসে আছে, যুদ্ধের আগুন একদিক থেকে নিভে যাওয়ার উপক্রম হলে অন্যদিক দিয়ে আরও তীব্রতরভাবে প্রজ্জ্বলিত হয়ে উঠবে। এই যুদ্ধে পৃথিবীর ৮০টি রাষ্ট্র যুক্ত হবে, সর্বশেষ এটা তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে পরিণত হবে। এই যুদ্ধে ও এই যুদ্ধের আগের মহামারীতে পৃথিবীর তিন ভাগের দুই ভাগ অর্থাৎ প্রায় পাঁচশ কোটি লোক মারা যাবে! তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ তথা নিউক্লিয়ার যুদ্ধকে হাদিসে মালহামা বলা হয়েছে কেন? লাহাম আরবি শব্দ, এর অর্থ গোশ্ত, শেষ জামানায় নিউক্লিয়ার যুদ্ধকে হাদিসে মালহামা বলা হয়েছে এই কারণে যে, এই যুদ্ধে নিউক্লিয়ার বোমা ফাটবে। যেখানে বোমাটা পড়বে সেই কেন্দ্রবিন্দুতে তাপমাত্রা হবে ১০ লাখ ডিগ্রি সেলসিয়াস! এই অকল্পনীয় ও অত্যধিক তাপমাত্রার ফলে সব কিছু জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাবে। মানুষের চামড়াগুলো হাড্ডি থেকে খসে খসে পড়বে। মাংস শরীর থেকে গলে গলে পড়বে। এই জন্য এই যুদ্ধের নাম মালহামা। একেকটি বোমাতে পৃথিবীর একেকটি বড় শহর ধ্বংস হবে। রাশিয়ার হাতে ৭০০০ বোমা আছে, এই জন্য রাশিয়া কাউকে তোয়াক্কা করছে না, আমেরিকার হাতে ৬০০০ বোমা আছে, এই জন্য আমেরিকা কাউকে তোয়াক্কা করছে না। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের হাতে আছে আরও ১০০০ নিউক্লিয়ার বোমা। ফলে বর্তমানে যেখানে রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ চলছে, এটাই হলো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের শুরু এবং নিউক্লিয়ার বোমার শক্তিতে বলীয়ান হয়ে এক দেশ আরেক দেশের কোনো পরোয়া করছে না বিধায় এই যুদ্ধ বন্ধ করার মতো কোনো শক্তি পৃথিবীর মানুষের হাতে নেই। যার ফলে রাশিয়া বনাম ইউরোপ-আমেরিকার মদদপুষ্ঠ ইউক্রেনের যুদ্ধ ও গাজার যুদ্ধ দিন দিন ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। হাদিস অনুযায়ী এই যুদ্ধের শেষে ইমাম মাহদি (আ.)-ই একমাত্র পৃথিবীকে দুর্নীতিমুক্ত করে মহাশান্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন। ইমাম মাহদি এমন সময়ে আগমন করবেন, যখন সম্পূর্ণ পৃথিবী দুর্নীতিতে ভরে থাকবেÑআর আমার গবেষণায় সেটা হলো ২০২৬ সালের ১০ জিলহজ শুক্রবার আকবরি হজের দিন। সে সময় সারা পৃথিবীর রাস্তা-ঘাট, দোকান-পাট, সব ধরনের যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকবে, যা ইমাম সুয়তী বর্ণিত হাদিস থেকে জানা যায়। শেষ জামানার ঘটনাগুলো হাদিসে সন্তান প্রসব যন্ত্রণার সাথে তুলনা করা হয়েছে যা থেমে থেমে হয়। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সময় পর থামবে, পরে আবার আগের চেয়ে তীব্রতর হবে। থেমে থেমে হওয়ার অর্থ হলো, মানুষ যাতে সমূহ বিপদের আশঙ্কা দেখে ভুল পথ থেকে বেরিয়ে আসতে পারে, তওবা করে নিজেকে সংশোধন করে নেয়ার সময় পায় এবং আল্লাহর দিকে একনিষ্ঠভাবে রুজু হয়ে শরিয়তের হুকুম আহকাম পালন করে বাকি জীবন কাটাতে পারে।
বুয়েটের কেমিকৌশল বিভাগের সিনিয়র শিক্ষক