শেয়ার বিজ প্রতিনিধি, ফেনী : অবকাঠামোগত সমস্যা ও নানা জটিলতায় জর্জরিত ফেনী বিসিক শিল্প এলাকায় স্থবির হয়ে আছে অনেক উৎপাদনশীল প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) অধীনে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক সংলগ্ন ফেনী পৌরসভা চাড়িপুর এলাকায় ১৯৬২ সালে ২৫.০৪ একর জায়গার ওপর বিসিক শিল্পনগরী গড়ে ওঠে।
জানা যায়, ৫৫ বছরের পুরোনো এ শিল্পনগরী ১৪২টি প্লটে একাধিক ইউনিট নিয়ে গড়ে ওঠে অর্ধশতাধিক শিল্প-কারখানা। বিসিকের মহাব্যবস্থাপকের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এখানে তিন হাজার ৪০০ নারী-পুরুষ কর্মরত রয়েছে। তার মধ্যে পুরুষ রয়েছে দুই হাজার ৪০০ আর মহিলার সংখ্যা এক হাজার।
প্রতিবেদন করতে গিয়ে দেখা যায়, ফেনীর একমাত্র শিল্প এলাকাটির সরেজমিন বিভিন্ন সমস্যাগুলো সহজেই চোখে পড়বে যে কারোরই। এর মধ্যে রাস্তাঘাটের অবস্থা এমন যে, বিসিক শিল্পনগরী থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক পর্যন্ত সড়কটি সংস্কারের যে ছয়টি সড়ক রয়েছে তার চিত্র খুবই করুণ। শিল্প এলাকাটিতে রাস্তা ভাঙা থাকায় দিন দিন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে উঠছে। এছাড়া ড্রেনগুলো পরিষ্কার করার কোনো ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হচ্ছে না। ফলে সামান্য বৃষ্টি হলেই তৈরি হয় ভারী জলাবদ্ধতা।
প্রাপ্ত তথ্য মতে, দু-একটি প্রতিষ্ঠান নিজ উদ্যোগে গভীর নলকূপ বসিয়ে কোনো রকমে উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রাখছে। গ্যাসের লাইন থাকলেও গ্যাসের চাপ কম থাকায় ব্যাহত হচ্ছে উৎপাদন। অন্যদিকে এসবের মধ্যে রয়েছে অবিরাম লোডশেডিং। এছাড়া যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলে রাখায় দুর্বল পয়োনিষ্কাশন ব্যবস্থার কারণে নগরীর পরিবেশ হুমকির মুখে রয়েছে। ফলে অবকাঠামোগত উন্নয়ন না হওয়ায় কারখানা মালিকরা মাঝে মধ্যে ব্যক্তিগত উদ্যোগে সড়ক সংস্কার, ড্রেন পরিষ্কারসহ বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।
বিসিকের মহাব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিল্প প্লটের বর্তমান অবস্থা হলো শিল্প ইউনিট সংখ্যা ৪৫টি। এর মধ্যে উৎপাদনরত রয়েছে ৩৭টি আর উৎপাদনযোগ্য শিল্প ইউনিট রয়েছে তিনটি আর রুগ্ণ ও বন্ধ শিল্প রয়েছে পাঁচটি। এর মধ্যে ৩৭টি চালু ইউনিট ছাড়া বাকিগুলো বর্তমানে ভ‚মি উন্নয়ন কর ও সার্ভিস চার্জ বৃদ্ধি, ব্যাংকঋণের অভাব এবং হস্তান্তর জটিলতা, মালিকানার জটিলতাসহ নানা কারণে বছরের পর বছর ধরে বন্ধ রয়েছে। চালু কারখানাগুলো চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে, যা এখানকার সবচেয়ে বড় সমস্যা বলে চিহ্নিত।
এ বিষয়ে কয়েকজন শিল্প-কারখানার নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বন্ধ কারখানাগুলো চালু করতে নতুন উদ্যোক্তাদের আগ্রহ থাকলেও হস্তান্তর ও আইনি জটিলতায় তা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এ অবস্থায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
তারা আরও জানান, হস্তান্তর জটিলতার কারণে সেই প্লট আমরা হস্তান্তর করতে পারছি না। যার কারণে আমরা শিল্প করার উদ্যোগ হারাচ্ছি। শিল্পায়নের স্বার্থে সরকারের এখনই ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। এ অবস্থায় বন্ধ কারখানাগুলো চালু এবং নতুন উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে উৎসাহিত করতে সরকারকে ইতিবাচক পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বিসিক শিল্পমালিক সমিতি এবং চেম্বার্স অব কমার্সের নেতারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফেনী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সাবেক সভাপতি আইনুল কবির শামীম বলেন, যাদের নামে প্লট বরাদ্দ ছিল তা বাতিল করে আবার বরাদ্দ দেওয়া উচিত। জটিলতা থাকায় ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া সমস্যা সমাধান সম্ভব নয়।
বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মাহমুদুল হক বলেন, যে স্বপ্ন নিয়ে ফেনী বিসিকের যাত্রা শুরু হয়েছিল নানা জটিলতায় এটি ব্যাহত হয়। এর প্রভাব পড়ে উদ্যোক্তাদের ওপর। পলিসি মেকাররা করে আমরা বাস্তবায়ন করি। তবে আমাদের যা দায়িত্ব, তা পালনের চেষ্টা করছি এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে উন্নয়নকাজের যে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, তা বাস্তবায়ন হলে বিসিকের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে ব্যাপক ভ‚মিকা পালন করবে।
ফেনীর বিসিক শিল্পমালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল হোসেন জানান, বিসিক এলাকায় যে সমস্যাগুলো রয়েছে তা চিহ্নিত করে অনেকবার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে আমরা জানিয়েছি। মিটিংয়ে উপস্থাপন করেছি। তারা আশ্বাস দিলেও কাজের কাজ কিছুই হয়নি। প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ হলেও এর সমাধানে কেউই এগিয়ে আসছে না। যদি কর্তৃপক্ষ এ নিয়ে আন্তরিক দেখায় তবেই এসব সমস্যাগুলো সমাধান হবে ও কাজের গতিশীলতা বাড়বে এবং দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিরাট ভূমিকা রাখবে।