Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:11 am

দীর্ঘমেয়াদি ঋণগ্রহীতার বেশিরভাগই খেলাপি

২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার পুঁজিবাজারকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। এই প্রথম বাজেটে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলনের কথা বলা হয়েছে। কারণ ইতিপূর্বে যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ঋণখেলাপি হয়েছেন। আহমেদ রশীদ লালীর সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের অর্থনীতিবিদ ড. আশিকুর রহমান এবং ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের পরিচালক মো. রকিবুর রহমান।
ড. আশিকুর রহমান বলেন, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে পাঁচ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকার বাজেট পেশ করা হয়েছে। এর মধ্যে ঘাটতি রয়েছে এক লাখ ৪৫ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা এবং মোট রাজস্ব আয় ধরা হয়েছে তিন কোটি ৭৭ লাখ ৮১০ কোটি টাকা। এটি বিশাল অঙ্কের বাজেট সত্য কিন্ত আমরা যদি স্বপ্ন না দেখি তাহলে দেশের উন্নয়নের যে লক্ষ্যমাত্রা সেখানে পৌঁছাতে পারব না। আশা করি বাজেটের আকার আরও বড় হোক। এ বিশাল অঙ্কের বাজেট বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জ সব সময়ই থাকবে অর্থাৎ সরকার পরিচালনায় চ্যালেঞ্জ এবং এর সঙ্গে কর আহরণের চ্যালেঞ্জ। গত ১০ বছরের বাজেট যদি বিবেচনা করি তাহলে গত ১১ বছর আগের ৮০ হাজার কোটি টাকার বাজেট বর্তমানে দাঁড়িয়েছে প্রায় চার লাখ কোটির টাকায় এবং বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি ২০ হাজার কোটি টাকা থেকে ১৫০ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থাৎ অ্যাকচুয়াল বাজেট প্রায় চারগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। এটি দেশের জন্য ভালো একটি অর্জন। কিন্তু গত ১১ বছরে বিভিন্ন সংবাদপত্রে বিভিন্ন ধরনের আলোচনা-সমালোচনা দেখা যাবে। বিশেষ করে এটি বাস্তবায়ন সম্ভব নয় এবং বাস্তবায়নে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা সৃষ্টি হবে প্রভৃতি। আরও বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের উন্নয়নের স্বপ্ন দেখতে হবে, স্বপ্ন দেখা ছাড়া উপায় নেই। স্বপ্ন দেখা হয়েছে বলেই আজ বাজেটের আকার এত বড় হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার গত ১০ বছরে ম্যাক্রো ইকোনমি ভালোভাবে পরিচালনা করে আসছে। তবে পুঁজিবাজার, ব্যাংক এবং আর্থিক খাতে দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে। এর বড় কারণ পলিসিগত কিছু সমস্যা। বর্তমানে ব্যাংকে প্রায় ১৫০ লাখ কোটি খেলাপি ঋণ এবং তারল্য সংকট রয়েছে। এটি বিগত ও বর্তমান অর্থমন্ত্রী স্বীকার করেছেন এবং গত ১৭ জুন সংসদে প্রধানমন্ত্রীও এটি নিয়ে আলোচনা করেছেন। তিনি আরও বলেন, যারা ঋণখেলাপি তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। এ খাতকে শক্তিশালী করার জন্য প্রধানমন্ত্রীর আন্তরিকতা দেখা যাচ্ছে। তবে ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ আদায়ে যে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, সেখানে যদি কোনো সমস্যা থেকে যায়, সেক্ষেত্রে পুঁজিবাজার নয়, ব্যাংক খাতেও বড় ধরনের ক্যানসার দেখা দেবে। ব্যাংক আজ প্রায় ১৫০ লাখ কোটি টাকার মতো খেলাপি ঋণ। সামনের পাঁচ বছরে ১৫০ লাখ কোটি টাকা থেকে দুই লাখ কোটি টাকায় যাবে। তাই বর্তমান সরকারকে এদিকে কঠোর হতে হবে।
রকিবুর রহমান বলেন, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সরকার পুঁজিবাজারকে বেশ গুরুত্ব দিয়েছেন। এ প্রথমবার বাজেটে বলেছেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার থেকে টাকা উত্তোলন করতে হবে। আর স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে উৎসাহী করেছেন। কারণ যারা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়েছেন তাদের বেশিরভাগই ঋণখেলাপি হয়েছে। পুঁজিবাজারকে শক্তিশালী করার জন্য সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রণোদনা দিয়েছেন এবং এ প্রণোদনা চলমান থাকবে। কারণ যে দেশের পুঁজিবাজার যত শক্তিশালী সে দেশের অর্থনীতি তত উন্নয়নশীল। আর যদি পুঁজিবাজার শক্তিশালী না হয় সেক্ষেত্রে দেশের অর্থনীতির উন্নয়ন হবে না। লভ্যাংশের আয়ের করমুক্ত সীমা ২৫ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। আবার কোনো দুর্বল কোম্পানিকে যদি সবল কোম্পানি অধিগ্রহণ করতে চায় সেক্ষেত্রে নৈতিক এবং আর্থিক সহায়তা করা হবে।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ