দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে

পুঁজিবাজারে বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এর মূল কারণ হচ্ছে, সুশাসনের অভাব। দিন দিন সুশাসনের অভাব বেড়েই চলেছে। শুধু পুঁজিবাজারে নয়, বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতেও সুশাসনের অভাব রয়েছে। যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করা যায় তাহলে সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলবে। বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়া ছাড়া কিছুই করার থাকবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়।
হাসিব হাসানের গ্রন্থনা ও সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পুঁজিবাজারের টেকনিক্যাল এনালিস্ট অধ্যাপক মুহাম্মদ মহসীন এবং দ্য ফাইন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সিনিয়র নিউজ কনসালটেন্ট রায়হান এম চৌধুরী।
মুহাম্মদ মহসীন বলেন, বর্তমানে মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারের দাম তেমন বাড়ছে না, অন্যদিকে টার্নওভারও বাড়ছে না। যেহেতু দাম এবং টার্নওভার বাড়ছে না। তাহলে বিনিয়োগকারীরা কোথায় বিনিয়োগ করবে? আসলে পুঁজিবাজার একটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগের কথা ভাবলে সেটিকে বিনিয়োগ বলা যাবে না। তাই বিনিয়োগকারীদের ভেবে-চিন্তে বিনিয়োগ করতে হবে। কারণ বিনিয়োগের লাভ-ক্ষতি তাকেই বহন করতে হয়।
দেশের পুঁজিবাজারের বড় সমস্যা হচ্ছে কারসাজি। কারসাজির কারণে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারী। আবার অনেক কোম্পানির স্পন্সরদের শেয়ার এক থেকে পাঁচ শতাংশ নেমে আসে, যা কোনোমতেই কাম্য নয়। এতে বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। তাই বিএসইসিকে এসব বিষয় নজরদারি করে শাস্তির আওতায় আনতে এবং এদের কঠোরভাবে শাস্তি দিলে পুঁজিবাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে বলে মনে করি।
রায়হান এম চৌধুরী বলেন, দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে একজন বিনিয়োগকারীকে অনেক বিষয় বিবেচনায় আনতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যে কোম্পানির শেয়ার কিনছে ওই কোম্পানির পণ্যের মান কেমন, বাজারে পণ্যের চাহিদা কেমন, কোম্পানি পরিচালনা পর্ষদে কারা রয়েছে প্রভৃতি বিবেচনায় আনতে হবে। অর্থাৎ না বুঝে-শুনে কোনো কোম্পানির শেয়ার কিনে এক বছর বা দুই বছরের মধ্যে ভালো মুনাফা আশা করা বোকামি।
পুঁজিবাজারে আরেকটি বড় সমস্যা হচ্ছে, অনেক কোম্পানির ওয়েবসাইট আপডেট নেই। অর্থাৎ ওয়েবসাইটে কোম্পানিগুলোর যে তথ্যগুলো দেওয়া থাকে তা অনেক পুরোনো। আবার ওই সব কোম্পানিগুলো নামমাত্র সিএ অডিট ফার্ম থেকে আর্থিক বিবরণী প্রস্তুত করে এবং আর্থিক বিবরণীতে বেশিরভাগ তথ্য সঠিক থাকে না। যারা ওই কোম্পানির শেয়ার কিনেন তারাই বেশি প্রতারণার শিকার হন। এখানে বিএসইসি, কেন্দ্রীয় ব্যাংককে ওইসব কোম্পানির প্রতি নজরদারি করতে হবে।
কিছুদিন আগে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বিগত ১০ বছরে কি কি উন্নয়নমূলক কাজ করেছে তার একটি নমুনা প্রকাশ করেছিল। এখানে হাস্যকর বিষয় হচ্ছে, যে গত দুই দিন আগে আন্তর্জাতিক ক্রেডিট রেটিং সংস্থার তথ্যমতে, দেশের অর্থনীতি ভালো হলেও নাজুক অবস্থায় রয়েছে ব্যাংক খাত। কিন্তু তারা মূল বিষয়গুলো এড়িয়ে গেছে। এখানে একটি প্রশ্নই থেকেই যায় সবার কাছে। কারণ ওই সব জায়গায় যারা দায়িত্বে রয়েছে তারা কতটুকু দায়িত্ব নিয়ে কাজ করছে সেটাই ভাবার বিষয়। বর্তমানে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগকারীরা বেশি খারাপ অবস্থায় রয়েছে। এখানে মূল কারণ হচ্ছে সুশাসনের অভাব। দিন দিন সুশাসনের অভাব বেড়েই চলেছে। শুধু পুঁজিবাজারে নয়, বিভিন্ন ধরনের নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোতেও রয়েছে। যদি সুশাসন প্রতিষ্ঠা না করা যায় সেক্ষেত্রে সমস্যা প্রতিনিয়ত বেড়েই চলবে। আসলে এখানে বিনিয়োগকারীদের হতাশ হওয়া ছাড়া কিছুই করার নেই।

শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০