Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 8:37 pm

দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে দেশের পুঁজিবাজার আকর্ষণীয় নয়

বর্তমানে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর প্রবণতাই হচ্ছে, কিছু মুনাফা এলেই শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, নয়তো কারসাজিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করা। কারণ বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার উৎকৃষ্ট, এমন মনোভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দেখা যায় না। ক্রমান্বয়ে এটি ট্রেডিংয়ের জায়গায় পরিণত হয়েছে। তবে প্রশ্ন হচ্ছে নতুন পুঁজি আসার জন্য বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আমাদের বাজার কি আকর্ষণীয়, যেখানে সরকারের সঞ্চয়পত্রে জনগণ ১০-১২ শতাংশ নিশ্চিত লভ্যাংশ পায়? পুঁজিবাজারে কোম্পানিগুলো বছর শেষে লভ্যাংশ দেয় খুবই কম। ভালো কোম্পানিগুলো, বিশেষ করে ব্যাংকগুলোও ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে আগ্রহী নয়। একজন বিনিয়োগকারী ১০ শতাংশ লভ্যাংশ পেতে পারে যদি সে ব্ল–-চিপ শেয়ার সংগ্রহ করে, কিন্তু সেখানেও পুঁজি হারানোর আশঙ্কা রয়েছে। এসব বিবেচনায় আমাদের পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় নয়। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। খুজিস্তা নূর-ই-নাহারীনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে অলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ এবং এনবিইআরের চেয়ারম্যান ড. আহসানুল আলম পারভেজ। অনুষ্ঠানটি গ্রন্থনা ও সম্পাদনা করেন হসিব হাসান।
মো. সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন লেনদেনের শুরুতে সূচক ঊর্ধ্বমুখী অবস্থায় থাকে, কিন্তু দিন শেষে তা নিম্নমুখী প্রবণতায় চলে যায়। মানে শুরুতে কিছুটা ক্রয়চাপ থাকে, কিন্তু পরে বিক্রয় চাপ বেড়ে যাওয়ায় সূচকের পতন ঘটে। আমাদের বাজারে আসলে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ হচ্ছে। তাছাড়া পুঁজিবাজার তো আসলে নিয়মিত কেনাবেচার জায়গা নয়, এটি দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জায়গা। তবে কিছু স্বল্পমেয়াদি বিনিয়োগ অবশ্যই বাজারে থাকবে। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ থাকতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ থাকলে বাজারে স্থিতিশীলতা থাকে। আর এই জায়গাতে দুর্বলতা থেকেই যাচ্ছে। একজন বিনিয়োগকারীর যদি অলস টাকা বা উদ্বৃত্ত অর্থ থাকে, তাহলে তিনি চিন্তা করেন টাকাগুলো কোথায় বিনিয়োগ করবেন। সে ক্ষেত্রে অধিকাংশ বিনিয়োগকারী চান ঝুঁকি সামাল দিয়ে সর্বোচ্চ মুনাফা যেখান থেকে পাওয়া যায় সেখানে বিনিয়োগ করতে। ঝুঁকি ছাড়াই যদি কোনো জায়গা থেকে ১১-১২ শতাংশ লভ্যাংশ পাওয়া যায়, তাহলে ঝুঁকি নিয়ে অবশ্যই তার চেয়ে বেশি মুনাফা লাভের আশা করা হবে এবং তা করাটাই স্বাভাবিক। কিন্তু পুঁজিবাজার বিনিয়োগের জন্য একটি উৎকৃষ্ট জায়গা হলেও আমাদের দেশের বাজার আকর্ষণীয় নয়। আমাদের পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীরা ঝুঁকি নিয়ে বেশি মুনাফার আশায় এলেও বারবার নিরাশ হয়ে ফিরে যান। বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন অনেকেই পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। তাছাড়া ভালো কোম্পানিগুলোও বিনিয়োগকারীদের প্রত্যাশা অনুযায়ী লভ্যাংশ দিচ্ছে না। সব মিলিয়ে বিনিয়োগকারীরা বাজারের প্রতি আস্থা ও আগ্রহ দুটাই হারাচ্ছেন। এসব বিষয় নিয়ন্ত্রক সংস্থার গুরুত্বসহ বিবেচনায় আনা জরুরি।
আহসানুল আলম পারভেজ বলেন, বর্তমানে অধিকাংশ বিনিয়োগকারীর প্রবণতাই হচ্ছে, কিছু মুনাফা এলেই শেয়ার বিক্রি করে দেওয়া, নয়তো কারসাজিপূর্ণ শেয়ারে বিনিয়োগ করা, যার দর তুলনামূলকভাবে কম। তাছাড়া বিনিয়োগের জন্য পুঁজিবাজার ভালো, এমন মনোভাব বিনিয়োগকারীদের মধ্য থেকে উঠে গেছে। ক্রমান্বয়ে এটি ট্রেডিংয়ের জায়গায় পরিণত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে নতুন পুঁজি আসার জন্য বা দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আমাদের বাজার কি আকর্ষণীয়, যেখানে সরকারের সঞ্চয়পত্রে জনগণ ১০-১২ শতাংশ নিশ্চিত লভ্যাংশ পায়? লক্ষ করলে দেখবেন, আমাদের বাজারে কোম্পানিগুলো বছর শেষে লভ্যাংশ দেয় খুবই কম। কোনো কোনো কোম্পানি নামমাত্র লভ্যাংশ দিয়ে থাকে। এমনকি ভালো কোম্পানিগুলোও বিশেষ করে ব্যাংকগুলো তো ১০ শতাংশের বেশি লভ্যাংশ দিতে আগ্রহী নয়। ফলে একজন বিনিয়োগকারী ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড পেতে পারে, যদি সে ব্ল–-চিপ শেয়ার সংগ্রহ করে। কিন্তু সেখানেও পুঁজি হারানোর আশঙ্কা অনেক বেশি। ফলে এদিক বিবেচনায় আমাদের পুঁজিবাজার দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগের জন্য আকর্ষণীয় নয়। পুঁজিবাজার মূলত ক্যাপিটাল গেইনের কারণে এখনও কিছুটা আকর্ষণীয় আছে। কাজেই নির্বাচনের আগে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) যত চেষ্টাই করুক না কেন তাতে বাজার ভালো হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই আমি দেখি না। তিনি বলেন, বিএসইসি তাদের ইচ্ছামতো কাউকে সাজা দেয় এবং পছন্দমতো কাউকে সমর্থন করেÑএমন একটি গুজব ইতোমধ্যেই বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে। আর এসব গুজব এসইসির ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা আরও কমিয়ে দিয়েছে।

শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম