যখন স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেশি বাড়ে তখন মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর দর কমে যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগে ভালো কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। যারা ভালো মানের কোম্পানিতে ১০ থেকে ১৫ বছর বিনিয়োগ করে রেখেছেন তাদের শেয়ারের দাম ১০ গুণের বেশি বেড়েছে। কিন্তু এক থেকে ছয় মাসের বিনিয়োগে সেটা বোঝা যায় না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ড্যাফোডিল ইউনিভার্সিটির চেয়ারম্যান এম সবুর খান এবং ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট শাকিল রিজভী।
এম সবুর খান বলেন, পুঁজিবাজার স্পর্শকাতর জায়গা। বাজারে শেয়ারদর উঠা-নামা করবে এটাই স্বাভাবিক। এখন যদি ঢালাওভাবে অভিযোগ করি শেয়ারবাজারে কারসাজি হচ্ছে, অনেক কোম্পানি লভ্যাংশ দিচ্ছে না, জেড ক্যাটেগরির কোম্পানির শেয়ারদর বেশি বাড়ছে এবং নিয়ন্ত্রক সংস্থা এক্ষেত্রে কিছু করছে না প্রভৃতি বলতে বলতে দিন শেষ হয়ে যাবে। এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। প্রতিনিয়ত যেসব সাধারণ বিনিয়োগকারী শেয়ার কেনাবেচার সঙ্গে জড়িত থাকেন এবং তারা আশা করেন এখান থেকে ভালো লভ্যাংশ পাবেন বা শেয়ারদর বেড়ে গেলে শেয়ারটি বিক্রি করে দেবেন। কিন্তু অনেক সময় এসব শেয়ার নিয়ে কারা কারসাজি করে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তা জানেন না। বাজারে কারা শেয়ার কারসাজিতে জড়িত, কারা লভ্যাংশ না দিয়ে টাকা তুলে নিচ্ছে, অনেক কোম্পানির স্পন্সররা ৯৫ শতাংশ শেয়ার ছেড়ে দিচ্ছে সবকিছুই নিয়ন্ত্রক সংস্থা জানে। বিনিয়োগকারীদের বাজার সম্পর্কে সঠিকভাবে বুঝতে এবং জানতে হবে। শুধু ঢালাওভাবে দোষারোপ করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, বিনিয়োগকারীর একটা প্রবণতা রয়েছে স্বল্পসময়ে বেশি লাভ করার। আজকে বিনিয়োগ করলাম তিন বা সাত দিন পর বিক্রি করে দিলাম। আসলে এ ধরনের জুয়া খেলার জায়গা পুঁজিবাজার নয়। বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজারে এ ধরনের প্রবণতা নেই। কিন্তু দেশের বাজারে এটি হচ্ছে। এভাবে চললে বাজার ভালো করা যাবে না।
তিনি আরও বলেন, দেশে অনেক বড় বড় আইটি কোম্পানি রয়েছে। এসব কোম্পানি বিনিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যাংকনির্ভর হচ্ছে। কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে টাকা নিচ্ছে না। আসলে প্রযুক্তি খাতের অনেক কোম্পানিই ভালো করছে। কিন্তু আইটি কোম্পানিগুলোর গ্রোথের সম্ভাবনা আশানুরূপ না হওয়ায় বাজারে আসতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না। আরেকটি সমস্যা হচ্ছে বাজারে কোম্পানিগুলোর অন্তর্ভুক্ত হওয়া মাত্রই লভ্যাংশ দিতে হবে। যদি লভ্যাংশ না দেয় সেক্ষেত্রে সামাজিকভাবে ওই কোম্পানি হেয়প্রতিপন্ন হয়। আসলে এ বিষয়গুলো ঝুঁকি হয়ে দাঁড়ায় কোম্পানিগুলোর জন্য। কিন্তু অন্য দেশের শেয়ারবাজারে আইটি কোম্পানিগুলো তিন থেকে চার বছরে কোনো লভ্যাংশ দেয় না। ধীরে ধীরে কোম্পানির পণ্যগুলো উন্নত হয়ে বাজার সম্প্রসারিত করছে। কিন্তু দেশের শেয়ারবাজারে ওই ধরনের সহনশীলতাটা নেই।
শাকিল রিজভী বলেন, আসলে বাজারে বিভিন্ন ধরনের কারসাজি হয়। আর এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীদের সচেতন হতে হবে। কারণ টাকা বিনিয়োগকারীর। তাই বিনিয়োগকারীকেই সাবধান হতে হবে।
তিনি আরও বলেন, যখন স্বল্পমূলধনি কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর বেশি বাড়ে তখন মৌলভিত্তির কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর কমতে দেখা যায়। তবে দীর্ঘমেয়াদে ভালো কোম্পানি শেয়ারদর বৃদ্ধি পায়। যারা ভালো মানের কোম্পানিতে ১০ থেকে ১৫ বছর বিনিয়োগ করে রেখেছে ওই সব কোম্পানির শেয়ারদর ১০ গুণের বেশি আছে। কিন্তু এক থেকে ছয় মাসের বিনিয়োগে সেটা বোঝা যায় না। তবে বাজার নিয়ে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। যেখানে সম্ভাবনা রয়েছে সেখানে সমস্যাও থাকে। যদি সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে বন্ধ করা যায় তাহলে বাজার নিয়ে আশান্বিত হওয়া যায়। অন্যদিকে দেশের অর্থনীতি আকার বড় হচ্ছে। কিন্তু সেভাবে পুঁজিবাজারে এর প্রভাব দেখা যাচ্ছে না। তবে একটা সময়ে অর্থনীতির আকার বড় হওয়ার ফলে বাজারে প্রভাব পড়বে। এটা সময়ের ব্যাপার।
শ্রুতিলিখন: শিপন আহমেদ