Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:25 pm

দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা চান বিনিয়োগকারীরা

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতি ঘোষণার পর পুঁজিবাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন সাধারণ বিনিয়োগকরীরা। আপাতত বিনিয়োগ নিয়ে দুশ্চিন্তা নেই তাদের। বরং অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের দ্বিতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদনে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ও শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভি) সন্তোষজনক হওয়ায় বাজার নিয়ে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন বিনিয়োগকারীরা। তাদের মতে, বাজার এখন ইতিবাচক ধারায় ফিরেছে। এটা দীর্ঘমেয়াদি হোক এটাই তাদের প্রত্যাশা।

বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতি নিয়ে উদ্বেগ কেটে যাওয়ার পর এখন তাদের নজর রয়েছে প্রতিষ্ঠানগুলোর আর্থিক প্রতিবেদনের দিকে। বর্তমানে যে প্রতিষ্ঠানগুলো আর্থিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তার অধিকাংশ আগের চেয়ে লাভে রয়েছে। সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পেয়েছে প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ। বছরের শেষ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর এমন অবস্থা বিরাজমান থাকলে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভালো রিটার্ন পাবেন বলে তারা প্রত্যাশা করছেন।

এ প্রসঙ্গে বিনিয়োগকারী লুৎফর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘অনিরীক্ষিত প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত এ ধারা অব্যাহত থাকলে নিশ্চয় প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ আমাদের ভালো লভ্যাংশ প্রদান করতে পারবে। সেই কারণে দুর্ভাবনা অনেক কমে গেছে। তবে বাজারে দীর্ঘমেয়াদি স্থিতিশীলতা দরকার।’

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, ‘প্রতি বছর বাজেট ও মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে বিনিয়োগ নিয়ে বিনিয়োগকারীরা এক ধরনের দ্বিধাদ্বন্দ্বে থাকেন। যে কারণে এই সময়ে বাজার কিছুটা ছন্দ হারায়। তবে এটা নিয়ে চিন্তা করার কিছু নেই। ভালো প্রতিষ্ঠানে বিনিয়োগ করলে এসব নিয়ে ভাবার দরকার পড়ে না।’

প্রাপ্ত তথ্যে দেখা যায়,  চলতি বছরের শুরু থেকে ইতিবাচক ধারায় ছিল পুঁজিবাজার। পরবর্তী সময়ে বাজেট কেমন হবে, তা নিয়ে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে দ্বিধা-দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এর জের ধরে বাজেটের আগে পুঁজিবাজারের গতি অনেকটা থমকে যায়। মূলত লেনদেন না করে বিনিয়োগকারীদের বাজার পর্যবেক্ষণের কারণে কমে যায় অধিকাংশ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদর। সেই সঙ্গে সূচক ও লেনদেনের অবনতি হয়। বাজেট বিনিয়োগবান্ধব হওয়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে। পরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুদ্রানীতি ঘোষণার আগে আবারও চাঙ্গা বাজারে ছন্দপতন দেখা যায়। যদিও মুদ্রানীতির আগেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে বলা হয় যে, এখানে এমন কিছু থাকবে না, যা বাজারকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। কিন্তু তারপর বাজারে বিনিয়োগ নিয়ে দোলাচলে পড়েন। ফলে ক্রেতা সংকট তৈরি হয়। এর ফলে বাজারে আবারও নি¤œমুখী প্রবণতা দেখা যায়।

ডিএসই’র পরিচালক রকিবুর রহমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বাজেট ও মুদ্রানীতি ঘোষণার আগেও বলেছিলাম, এখানে বিনিয়োগকারীদের জন্য বা পুঁজিবাজারের জন্য নেতিচাবক কিছু থাকবে না। যাই হোক এখন বিনিয়োগকারীদের সেই ভীতি কেটেছে। তবে এ কথা সত্যি যে, দুর্বল কোম্পানির শেয়ারের দর বৃদ্ধি তাদের জন্য দুর্ভাবনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সতর্ক থাকার পরও অনেক বিনিয়োগকারী এসব শেয়ার ক্রয় করে ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাই এসব শেয়ার নিয়ে কোনো কারসাজি হচ্ছে কি নাÑসেটা নজরদারিতে রাখা দরকার।’

তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিএসইসি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে যথেষ্ট সচেতন এবং সঠিক দায়িত্ব পালন করছেন।’

তবে বিষয়টি ভিন্নমত পোষণ করেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। বিএসইসি এবং উভয় স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ দায়সারা দায়িত্ব পালন করেন বলে মন্তব্য করেন তারা। তারা বলেন, কোনো প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দর অস্বাভাবিক হারে বাড়লে স্টক এক্সচেঞ্জ প্রতিষ্ঠানের কাছে এর কারণ জানতে চাই। আর প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ উত্তরে জানায়, তাদের কাছে মূল্য সংবেদনশীল কোনো তথ্য নেই। বিষয়টি স্টক এক্সচেঞ্জ এবং প্রতিষ্ঠান উভয়ের জন্য রুটিং ওয়ার্ক হয়ে গেছে। প্রকৃতপক্ষে এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো উপকার হয় না। অন্যদিকে অভিভাবক প্রতিষ্ঠান বিএসইসি অস্বাভাবিক দর বাড়ার জন্য একটি কমিটি গঠন করে দেন। তারপর বিষয়টি অন্তরালে চলে যায়। দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে আমরা এমনটি আশা করি না।