গত কয়েক মাসে স্বল্প মূলধনি অনেক কোম্পানির শেয়ারের দর রাতারাতি বাড়ছে। স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় এসব শেয়ারে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীও বিনিয়োগ করছেন। ফলে তারা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে তার দায়ভার নিজেকেই নিতে হবে। পুঁজিবাজার আসলে বিনিয়োগের জায়গা। এখানে দীর্ঘ মেয়াদে বিনিয়োগ করা উচিত। আর এই নিয়ম অনুসারে, যদি অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন তাহলে কেউ কারসাজি করে সুবিধা নিতে পারবে না। গতকাল এনটিভির মার্কেট ওয়াচ অনুষ্ঠানে বিষয়টি আলোচিত হয়। হাসিব হাসানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচক ছিলেন পুঁজিবাজারবিশ্লেষক মুহাম্মদ মহসীন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন চৌধুরী, এফসিএ।
মুহাম্মদ মহসীন বলেন, বিএসইসি’র ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে আজকে (গতকাল) একটি সংবাদ সম্মেলন হয়েছে। সেখানে দেশের প্রধানমন্ত্রীও এসেছিলেন। একে কেন্দ্র করে অনেকের মধ্যে একটি বড় ধরনের প্রত্যাশা তৈরি হয়েছিল বাজার নিয়ে, কিন্তু সেই প্রত্যাশার কোনো প্রতিফলন বাজারে দেখছি না। আসলে পুঁজিবাজার এতই সংবেদনশীল যে, কখন বাজার কী আচরণ করবে বোঝা মুশকিল। তবে দীর্ঘ মেয়াদে পুঁজিবাজারের অবস্থা অবশ্যই ভালো হবে, কিন্তু স্বল্প মেয়াদে যে হারে ওঠানামা হচ্ছে তাতে বিনিয়োগকারীরা অনেক সময়ই আশাহত হচ্ছেন। তার একটি বড় কারণ হচ্ছে ২০১০ সালের বাজারধসে অনেক ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এখনও এমনভাবে আটকে আছেন যে, ওই শেয়ারের আগের দরে যেতে হলে পুঁজিবাজারকে বর্তমান অবস্থা থেকে অনেক ওপরে উঠতে হবে, যেমন ধসের সময় প্রাইম ফাইন্যান্সের শেয়ারের দর। যেসব ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারী এ রকম শেয়ারে আটকে পড়ে আছেন তাদের ক্ষেত্রে বলব যে, ওই শেয়ারটির দর আগের পর্যায়ে পৌঁছাবে এমন চিন্তা করা দুরাশার মতো। কাজেই এভাবে চিন্তা না করে অন্যভাবে চিন্তা করা উচিত। আমরা যতই বলি শক্তিশালী মৌলভিত্তির শেয়ারের দরবৃদ্ধি সহজে হয় না। কিন্তু আসলে এই শেয়ারগুলোতেই ভালো প্রফিট পাওয়া যায়, কারণ এ ধরনের শেয়ারে ওই সময়ে যারা ছিল তারা যেমন তখনও প্রফিট পেয়েছে, তেমনি এখনও পাচ্ছে। তবে আমাদের পুঁজিবাজারের একটি বড় সমস্যা হচ্ছে এটি শুধু ইকুইটিভিত্তিক বাজার। আর এই একটি উপাদানের ওপর ভিত্তি করেই বাজার চলছে, যার ফলে বাজার ভালো হতে পারে না। দেশের পুঁজিবাজারে যখন চীনা কনসোর্টিয়াম এলো এবং তারা যখন গণমাধ্যমের মুখোমুখি হলো, তখন দুটি বিষয় গুরুত্বসহ তুলে ধরেছে। একটি হচ্ছে, মার্কেটের মাইক্রো স্ট্রাকচারের উন্নয়ন এবং আরেকটি প্রোডাক্ট বা পণ্যের উন্নয়ন।
মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে এগিয়ে নিতে হলে পুঁজিবাজারের দায়িত্বশীল ভূমিকা আবশ্যই লাগবে এবং এ কথা প্রধানমন্ত্রী সব সময়ই বলেন। গতকালের সম্মেলনেও তিনি এ কথা বলেছেন। একইসঙ্গে তিনি এটিও বলেছেন যে, পুঁজিবাজারে বিভিন্ন প্রডাক্ট বা পণ্য এনে বাজারকে আরও আকর্ষণীয় করা দরকার, যাতে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বাড়ে। লক্ষ করলে দেখবেন, গত কয়েক মাসে স্বল্প মূলধনি কোম্পানির শেয়ারের দর রাতারাতি বাড়ছে। আর স্বল্প সময়ে অধিক লাভের আশায় এসব শেয়ারে অনেক সাধারণ বিনিয়োগকারীও বিনিয়োগ করছেন। ফলে তারা যদি ক্ষতিগ্রস্ত হন তাহলে তার দায়ভার নিজেকেই নিতে হবে। পুঁজিবাজার আসলে বিনিয়োগের একটি জায়গা। এখানে মূলত দীর্ঘমেয়াদি হিসাব করে বিনিয়োগ করা উচিত। আর এই নিয়ম অনুসারে, যদি অধিকাংশ বিনিয়োগকারী বিনিয়োগ করেন, তাহলে কেউ কারসাজি করে সুবিধা নিতে পারবে না। তখন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীরাই লাভবান হবেন। তাই এ বিষয়ে সবার সচেতন হওয়া উচিত বলে মনে করি।
শ্রুতিলিখন: রাহাতুল ইসলাম