Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 7:15 pm

দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে? অত সহজ না: প্রধানমন্ত্রী

শেয়ার বিজ ডেস্ক: আওয়ামী লীগের প্রথম নির্বাচনী জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, গাড়িতে আগুন দিয়ে সরকার ফেলা যায় না। বিএনপির আন্দোলনে প্রতিরোধ গড়ার পাশাপাশি নৌকা মার্কায় ভোট দেয়ার আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।

গতকাল বুধবার বিকালে সিলেট আলিয়া মাদ্রাসা মাঠে আওয়ামী লীগের জনসভায় তিনি এ কথা বলেন। খবর: বাসস।

বিএনপি ও সমমনাদের আন্দোলনের বিষয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘মানুষের জীবন কেড়ে নেবে, মানুষকে ভোট দিতে দেবে না, নির্বাচন বন্ধ করবে, এত সাহস কোথা থেকে পায়?’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের প্রতি ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘লন্ডনে বসে একটা কুলাঙ্গার হুকুম দেয় আর কতগুলো লোক নিয়ে এখানে আগুন নিয়ে খেলে। আগুন নিয়ে খেলতে গেলে আগুনেই হাত পোড়ে এটা তাদের মনে রাখা উচিত। তারা মনে করেছে দুইটা আগুন দিলেই সরকার পড়ে যাবে। অত সহজ না। অত ভাত দুধ দিয়ে খায় না।’

প্রতিবার জাতীয় নির্বাচনে শেখ হাসিনা সাধারণত সিলেট থেকে প্রচার শুরু করেন। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।

বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে সাড়ে ১১টায় ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেন তিনি। ছোট বোন শেখ রেহানাও এ সফরে তার সঙ্গে ছিলেন। বিমানবন্দর থেকে দুই বোন প্রথমে যান হযরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে। পরে তারা যান হযরত শাহপরাণ (র.)-এর মাজারে।

সেখান থেকে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাংবাদিকদের বলেন, ‘কোনো দল চাইলে নির্বাচনে না আসতে পারে; কিন্তু আগুন দিয়ে মানুষ মারার অধিকার কাউকে দেয়া হয়নি।’

বিকাল ৩টায় তিনি যোগ দেন আলিয়া মাদ্রাসা মাঠের জনসভায়। সকাল থেকেই এ মাঠে জড়ো হন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুরো মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। হাতে লাল-সবুজ পতাকার সঙ্গে রঙিন পোশাক উৎসবের আমেজ তৈরি করে গোটা এলাকায়।

এই জনসভায় সিলেট বিভাগের চারটি জেলার ১৯টি সংসদীয় আসন থেকে আসেন নেতাকর্মীরা। সব আসনে দলের প্রার্থীরাও ছিলেন সভামঞ্চে। বিশাল এ জনসভায় নেতাকর্মীরা আসেন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রতীক ‘নৌকা’র প্রতিকৃতি নিয়ে। পুরো জমায়েতে ক্ষণে ক্ষণে ‘নৌকা, নৌকা’ সেøাগানে মাতিয়ে রাখেন তারা।

নৌকায় ভোট চেয়ে আওয়ামী লীগ প্রধান বলেন, ‘এই নৌকা নুহ নবীর নৌকা, এই নৌকায় ভোট দিয়ে এদেশের মানুষ স্বাধীনতা পেয়েছে, আবার এই নৌকা যখন সরকারে এসেছে, বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নতি হয়েছে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে জনগণের উন্নতি হচ্ছে। আজকে দারিদ্র্যমুক্ত উন্নত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা গড়ে তোলা এটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্য নিয়েই আমি কাজ করে যাচ্ছি।’

২০০১ সালে যে নির্বাচনে জিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসে, সেই নির্বাচনে কারচুপির অভিযোগ এনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘গ্যাস বিক্রির মুচলেকা দিয়েছিল খালেদা জিয়া; ক্ষমতায় গেলে গ্যাস বেচবে। সেই কারণে বাহবা দিয়ে তাকে ক্ষমতায় বসাল। রেজাল্ট কী? জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, দুঃশাসন।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘আল্লাহ যখন কাউকে কিছু দেয়, জন বুঝেই ধন দেয়। আল্লাহ জানে ওদের কাছে দিলে সব নয়ছয় করবে। আর আওয়ামী লীগের হাতে পড়লে জনগণের কল্যাণে কাজে লাগবে।’

এরপর জনতার উদ্দেশে তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘বলেন, আমি ঠিক বলছি?’ সবাই তখন সমস্বরে চিৎকার করে সমর্থন জানান।

জনসভায় আওয়ামী লীগ আমলে গত ১৫ বছরে সিলেটে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের চিত্র তুলে ধরে ভবিষ্যতের চিন্তাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের কাজেই জনগণের সেবা করা। আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশে করব কথা দিয়েছিলাম; বাস্তবায়ন করেছি, করে দিয়েছি। এখন আমরা স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলব।

স্মার্ট বাংলাদেশের রূপরেখা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘স্মার্ট বাংলাদেশ হচ্ছে পরিবেশবান্ধব টেকসই উন্নয়ন; মেধাভিত্তিক শিক্ষাব্যবস্থা, মেধা দক্ষতা ও প্রযুক্তি জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ জনশক্তি, উন্নত, উদার, অগ্রসরমান সমাজ।’

সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক ও নুরুল ইসলাম নাহিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অভিনেত্রী তারিন জাহান, সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীও বক্তব্য দেন।