টেনিস বল-পার্টি স্প্রে ঘোষণায় আফিম আমদানি

দুই আমদানিকারকের ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিআইএন লকড

নিজস্ব প্রতিবেদক: ঘোষণা ছিল টেনিস বল ও পার্টি স্প্রে। কিন্তু আমদানি হয়েছে নিষিদ্ধ আফিম। মোংলা বন্দরে আটক চার কনটেইনার নিষিদ্ধ এ পণ্যের আমদানিকারক আয়েশা ট্রেডার্স ও তাজ ট্রেডার্স। দুটি প্রতিষ্ঠানের একই কায়দায় জালিয়াতি করে ১৫টি চালান খালাসের তথ্য উদ্ঘাটন করেছে মূসক নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। এজন্য প্রতিষ্ঠান দুটির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিআইএন (বিজনেস আইডেন্টিফিকেশন নম্বর) লক করা হয়েছে।

তদন্ত কাজের অংশ হিসেবে ব্যাংক হিসাব জব্দ ও বিআইএন লক করা হয়েছে বলে গতকাল ভ্যাট গোয়েন্দার মহাপরিচালক ড. মইনুল খান নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে ১৩ আগস্ট মোংলা বন্দর জেটিতে মিথ্যা ঘোষণার চার কনটেইনারে ৮০ মেট্রিক টন আফিম জব্দ করে মোংলা কাস্টম হাউস, যার মূল্য প্রায় ২০ কোটি টাকা। আমদানিকারক ঢাকার আয়েশা ট্রেডার্স ও তাজ ট্রেডার্স স্থানীয় শিপিং এজেন্ট খুলনার মেসার্স ওশান ট্রেড লিমিটেডের মাধ্যমে এসব পণ্য খালাসের চেষ্টা করে।

ড. মইনুল খান জানান, মোংলা বন্দরে আটক চার কনটেইনার নিষিদ্ধ আফিমের আমদানিকারক আয়েশা ট্রেডার্স ও তাজ ট্রেডার্সের অতীতে টেনিস বল ও পার্টি স্প্রে ঘোষণায় ১৫টি চালান খালাসের ব্যাপক জালিয়াতির তথ্য উদঘাটন করা হয়েছে। এসব ছাড়কৃত চালানে প্রকৃত ঘোষণা অনুযায়ী পণ্য ছিল কি না এবং তারা এসব পণ্যে স্থানীয় পর্যায়ে প্রযোজ্য ভ্যাট পরিশোধ করেছে কি না, তার তদন্ত শুরু করেছে ভ্যাট গোয়েন্দা।

তিনি বলেন, ভ্যাট গোয়েন্দার অনুসন্ধানে তাদের মনোনীত পূবালী ব্যাংক, বেগমবাজার শাখা থেকে তলবকৃত কাগজপত্রে ও আমদানি তথ্যে ব্যাপক গরমিল পাওয়া গেছে। ভ্যাট নিবন্ধন অনুসারে তাদের স্থাপনা ঢাকার চকবাজারে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ভ্যাট নিবন্ধন ও ট্রেড লাইসেন্সে তাজ ট্রেডার্সের (বিন ০০২১৮৯২৩৩-০২০৬) ঠিকানা দেওয়া আছে ১০/বি সোয়ারিঘাট, ঢাকা। আর আয়েশা ট্রেডার্সের (বিন ০০১৭৩১৮৬৪-০২০৬) ৬/১০-ডি, চম্পাতলী, চকবাজার, ঢাকা।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, প্রতিষ্ঠান দুটো যথাযথভাবে ভ্যাট রিটার্ন দেয়নি। স্থানীয় ভ্যাট অফিসে নানা ধরনের মিথ্যা তথ্য দিয়ে তাদের করদায়িতা প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। এতে ধারণা করা যায়, অতীতে তারা অনুরূপভাবে ঘোষণাবহির্ভূত পণ্য আমদানি করে অপরাধের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন।

ভ্যাট নিবন্ধন অনুযায়ী ঢাকায় প্রতিষ্ঠান দুটোর অস্তিত্ব খুঁজে না পাওয়ায় এবং আমদানিকৃত পণ্যের যথাযথ ব্যবসায়িক হিসাব না পাওয়ায় ভ্যাট গোয়েন্দার পক্ষ থেকে তদন্তের অংশ হিসেবে আজ আমদানিকারক দ্বয়ের ব্যাংক হিসাব ও বিআইএন ফ্রিজ করা হয়েছে। ভ্যাট গোয়েন্দাদের ধারণা, তদন্ত শেষ হওয়ার আগে তারা তাদের হিসাব থেকে টাকা সরিয়ে ফেলতে পারেন। অন্যদিকে তারা আমদানির অপেক্ষমাণ আরও অন্য কোনো চালান দ্রুত খালাস করিয়ে নিতে পারেন।

মইনুল খান জানান, আজ বেগমবাজার পূবালী ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের মাধ্যমে নোটিস দিয়ে অন্যান্য ব্যাংকে তাদের নাম খোলা সব হিসাব অপরিচালনযোগ্য করা হয়েছে। একইসঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) অ্যাসাইকুডা সফটওয়্যারে তাদের বিন লক করা হয়েছে। ভ্যাট আইনের ধারা ৮২, ৮৩ ও ৯১ অনুসারে এই কার্যক্রম নেওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, মেসার্স তাজ ট্রেডার্স কর্তৃক চালান হচ্ছে বিল অব এন্ট্রি ৯৬২৮, তারিখ ৯/৬/২০২০। অন্যদিকে আয়েশা ট্রেডার্সের বিল অব এন্ট্রি হচ্ছে ১০১০৭, ১৮/৬/২০২০; ৮৯১, ১৯/১/২০২০; ৪০৪৭, ২৬/২/২০২০; ৪৩০০, ২/৩/২০২০; ৪৬৫০, ৮/৩/২০২০; ৯৪৯৬, ৭/৬/২০২০; ৯৯০৫, ১৪/৬/২০২০; ৯৯০৬, ১৪/৬/২০২০; ১০২১৭, ২৪/৬/২০২০; ১০৩৬৭, ২৯/৬/২০২০; ২১৯৫৯, ২৭/১১/২০১৯; ২৩২০৬, ১৫/১২/২০১৯; ২৩৪৩৪, ১৮/১২/২০১৯; ২৩৮২২, ২৪/১২/২০১৯।

ব্যাংকের তথ্যমতে, তাজ ট্রেডার্সের মালিক মো. সাবির হোসেন, এনআইডি ৭৭৫৭৫৬৫৯৮৬। আয়েশা ট্রেডার্সের মালিক আকবর হোসেন, এনআইডি ৯১৫৭৯৯২৮৬৯। প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা যায়, উভয় প্রতিষ্ঠানের বিআইএন ভিন্ন হলেও অনিয়মের প্রকৃতি একই।

আমদানিকারকদ্বয় টেনিস বলের আড়ালে অন্য কোনো পণ্য আমদানি করে বড় ধরনের শুল্ক ও ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে কি না এবং একইসঙ্গে রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ঝুঁকিপূর্ণ করে মানি লন্ডারিং অপরাধ করেছে কি না, তা ভ্যাট গোয়েন্দারা খতিয়ে দেখছে। আরও তদন্তসম্পন্ন করে ভ্যাট গোয়েন্দা প্রতিষ্ঠান দুটোর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেবে বলে জানান ড. মইনুল খান।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০