নিজস্ব প্রতিবেদক: কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংসতা ও কারফিউয়ের প্রভাব থেকে বের হতে পারেনি পুঁজিবাজার। চলতি সপ্তাহের দুই কার্যদিবসেই কমেছে সূচক। গতকাল সোমবার প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) লেনদেন শেষে সূচক কমেছে ৫৩ পয়েন্ট, আগের দিন কমেছে ৩০ পয়েন্ট। দর হারিয়েছে বেশিরভাগ কোম্পানির শেয়ার।
টানা তিন কার্যদিবস লেনদেন বন্ধ থাকার পর গত সপ্তাহের বুধবার নির্দিষ্ট সময়ের জন্য পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়। তবে আতঙ্কে মাত্রাতিরিক্ত বিক্রির চাপে সেদিন পুঁজিবাজারে বড় দরপতন হয়। সেই সঙ্গে লেনদেন কমে ২০০ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়। অবশ্য পরের কার্যদিবস বৃহস্পতিবার ঘুরে দাঁড়ায় পুঁজিবাজার। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার পাশাপাশি মূল্য সূচকের বড় উত্থান হয়। সেই সঙ্গে বাড়ে লেনদেনের গতি। আর চলতি সপ্তাহের প্রথম কার্যদিবস রোববার বেশিরভাগ ব্যাংকের শেয়ার দাম বাড়লেও অন্যান্য খাতের সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম কমে। ফলে মূল্য সূচকেরও পতন হয়।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, গতকাল পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ার মাধ্যমে। এতে লেনদেন শুরু হতেই ডিএসইর প্রধান সূচক ঊর্ধ্বমুখী হয়ে ওঠে। বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বাড়ায় এক পর্যায়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ১৪ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে প্রথম আধাঘণ্টার লেনদেন পার হতেই বদলে যেতে থাকে বাজারের চিত্র। দাম বাড়ার তালিকা থেকে একের পর এক প্রতিষ্ঠান দাম কমার তালিকায় চলে আসে। ফলে দেখতে দেখতে সূচকও ঋণাত্মক হয়ে পড়ে। লেনদেনের শেষ পর্যন্ত এই অবস্থা অব্যাহত থাকে। এমনকি লেনদেনের সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পতনের মাত্রা।
ফলে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসইতে সব খাত মিলে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লিখিয়েছে মাত্র ২৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিট। বিপরীতে দাম কমেছে ৩৩২টি প্রতিষ্ঠানের। আর ৩৩টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এতে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ডিএসইএক্স ৫৩ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৩৩০ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অপর দুই সূচকের মধ্যে ডিএসই শরিয়াহ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১১ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ১৬৬ পয়েন্টে অবস্থান করছে। আর বাছাই করা ভালো ৩০টি কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচক আগের দিনের তুলনায় ১৮ পয়েন্ট কমে ১ হাজার ৯০১ পয়েন্টে নেমে গেছে। সূচকের পতনের পাশাপাশি ডিএসইতে কমেছে লেনদেনের গতি। দিনভর বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৪৫০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ৪৮৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সে হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৮ কোটি ২০ লাখ টাকা।
এই লেনদেনে সব থেকে বেশি অবদান রেখেছে অগ্নি সিস্টেমের শেয়ার। কোম্পানিটির ২৭ কোটি ৫৫ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছ। দ্বিতীয় স্থানে থাকা ওরিয়ন ইনফিউশনের ১৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে এনআরবি ব্যাংক।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে শীর্ষ দশ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছেÑ স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, জেমিনি সি ফুড, ইউনিলিভার কনজুমার কেয়ার, ব্র্যাক ব্যাংক, রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স, স্যালভো কেমিক্যাল এবং লাভেলো আইসক্রিম। অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) সার্বিক মূল্য সূচক সিএএসপিআই কমেছে ১১৩ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হওয়া ২১৯টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৬৭টির এবং ২৫টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। লেনদেন হয়েছে ২০ কোটি ৮১ লাখ টাকা। আগের কার্যদিবসে লেনদেন হয় ১৪ কোটি ৮৭ লাখ টাকা।